logo
আপডেট : ২২ জুন, ২০২২ ১২:৫৩
ডুবেছে ২৮ হাজার হেক্টর আউশ জমি, ৭২ হাজার টন ধান কম হওয়ার শঙ্কা
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

ডুবেছে ২৮ হাজার হেক্টর আউশ জমি, ৭২ হাজার টন ধান কম হওয়ার শঙ্কা

সিলেট-সুনামগঞ্জসহ অনেক এলাকাতেই ঘরবাড়িসহ বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে

বন্যায় তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, ফসলের মাঠ, মাছের ঘেরসহ কৃষি খামারগুলো। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব আসতে শুরু করেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বন্যায় সারাদেশে ২৮ হাজার হেক্টর জমির আউশ ধান তলিয়ে গেছে।

আক্রান্ত হয়েছে সবজিসহ নানা ধরনের ফসল। ২৮ হাজার হেক্টর জমির আউশ ধান তলিয়ে যাওয়ায় প্রায় ৭২ হাজার টন (হেক্টর প্রতি গড় ফলন ২ দশমিক ৬ টন) ধান উৎপাদন কম হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলম বলেন, বন্যা পরিস্থিতি আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আমন ও আউশ যেন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে আমাদের নজর রয়েছে।

যেখানে আউশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানে আমনের আগাম জাতের বীজ দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। আমন ও বোরোর বীজে যেন সংকট না হয়, সেজন্য আমরা কাজ করছি। অর্থাৎ বন্যা পরিস্থিতিতে আমন ও বোরোর উৎপাদন বাড়ানোর সর্বাত্মক লক্ষ্য নেওয়া হচ্ছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে বেনজীর আলম বলেন, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনাসহ সারাদেশে আউশের ২৮ হাজার হেক্টর জমি বন্যায় তলিয়ে গেছে। এর পরিমাণ ৫০০ থেকে ৬০০ হেক্টর বেশিও হতে পারে।

মূলত সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনায়। সারাদেশে ১৩ লাখ ৯ হাজার হেক্টর আউশ আবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা আবাদ করতে পারব ১২ লাখ হেক্টর পর্যন্ত। আরো কয়েকদিন আউশ আবাদ করা যাবে।

ডিজি জানান, সিলেট ও সুনামগঞ্জে আউশের ২০ হাজার হেক্টর জমি তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জে তলিয়ে যাওয়া জমির পরিমাণ ৯ হাজার হেক্টরের বেশি, সিলেটে ১০ হাজার হেক্টরেরও বেশি।

এসব জমি পুরোটাই পানিতে নিমজ্জিত। এখনো ক্ষয়ক্ষতির হিসাব জানা যাচ্ছে না। পানি নেমে গেলে দুই থেকে তিন দিন পর জানা যাবে আউশের প্রকৃত ক্ষতি কতটা হয়েছে।

আরেক প্রশ্নের উত্তরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, আমনের মৌসুম এখনো শুরু হয়নি। সারাদেশে বীজতলা তৈরির কাজ চলছে। এরই মধ্যে সারাদেশে ৩৩৭ হেক্টর বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। এ বছর আমন আবাদের লক্ষ্য ৫৯ হাজার হেক্টর।

এদিকে, চলমান পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ বলেন, দেশে সবচেয়ে বেশি আউশ হয় বরিশাল বিভাগে।

আর সবচেয় কম হয় ময়মনসিংহ বিভাগে। কুমিল্লা অঞ্চলেও আউশ বেশি হয়। আউশ বেশি হয় সিলেট জেলা, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে। তবে সুনামগঞ্জে আউশ তেমনভাবে হয় না। বরিশাল ও ভোলাতেও আউশ হয়ে থাকে। সরকার প্রণোদনা দিয়ে আউশ উৎপাদন টিকিয়ে রাখছে।

তিনি বলেন, উৎপাদনের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় বোরো ধান। মোট ধানের অর্ধেকই আসে বোরো থেকে। এরপর আমন ও আউশের অবস্থান। ৪৮ থেকে ৪৯ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়ে থাকে। আর আমন আবাদ হয় ৫৭ থেকে ৫৮ হাজার হেক্টর। আউশ আবাদ হয়ে থাকে ১২ থেকে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে।

হেক্টরপ্রতি আউশের উৎপাদন ২ দশমিক ৬ থেকে ২ দশমিক ৭ টন হয়ে থাকে। সবকিছুই এখন পানির নিচে। সুনামগঞ্জসহ সিলেট বিভাগে আউশ প্রায় পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নেত্রকোনায় আউশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

এদিকে, রোববার কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বন্যার তীব্রতা বাড়লে এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হলে সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আমন মৌসুমের ধান লাগানোও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

মন্ত্রী বলেন, (রোববার সকাল পর্যন্ত তথ্য) বন্যার কারণে ২২ হাজার হেক্টর আউশ ধানের ক্ষতি হয়েছে। আমনের বীজতলা কিছু নষ্ট হবে। তবে এখনো যেহেতু সেভাবে বীজতলা তৈরি করা হয়নি, তাই ভয় কম। কিন্তু বন্যা ছড়িয়ে পড়লে এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হলে আমন চাষই ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা আউশ আবাদের জন্য ১৩ লাখ হেক্টর জমি টার্গেট করেছিলাম। সেখানে ১১ লাখ হেক্টর লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে ২২ হাজার হেক্টর এখন পর্যন্ত ক্ষতি হয়েছে। ৩ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টরের বিভিন্ন শাকসবজি আছে সারাদেশে। এখানেও ৫-৭ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। যেভাবে বৃষ্টি ও বন্যা তেড়ে আসছে, কী হবে জানি না।

করণীয় বিষয়ে জানতে চাইলে রোববার কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা বীজ সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছি, পানি নেমে গেলে যেন বীজ বপন করা যায়। প্রয়োজনে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আউশ ও সবজি চাষিদের প্রণোদনা দেওয়া হবে।

সারের মজুত বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ডিসেম্বর পর্যন্ত চালানোর জন্য সারের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। তবে বোরোর জন্য কিছুটা শঙ্কা রয়েছে। এ সময় এমওপি সার আমদানিতে কানাডার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।