স্বাস্থ্য খাত ঘিরে আবারও চক্রান্ত

সাজেদা হক
স্বাস্থ্য খাত ঘিরে আবারও চক্রান্ত

স্বাস্থ্য খাত ঘিরে আবারও চক্রান্ত শুরু হয়েছে। একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট ভুল তথ্য সরবরাহ করে সরকারকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা চালাচ্ছে। যাতে করে উন্নতমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহ না হয়; সেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে ওই চক্রটি। সুযোগ সন্ধানী চক্রটি এ কাজে কিছু সাংবাদিককে ব্যবহার করছে। আর ওইসব সাংবাদিকরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উদ্ভট তথ্য প্রকাশ করছেন। এমনই অপতথ্য সরবরাহের শিকার হয়েছে জেনেসিস ট্রেডিং কোম্পানি নামে একটি খ্যাতিমান যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। গতকাল শনিবার দৈনিক সমকাল ‘ ঘুরেফিরে সেই আটজনই স্বাস্থ্যের কেনাকাটায়’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জেনেসিস ট্রেডিং কোম্পানির বিরুদ্ধে উদ্ভট সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।কার্যত স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটকে আড়াল করতেই সুনামধন্য জেনেসিস ট্রেডিং কোম্পানির বিরুদ্ধে মনগড়া, বানোয়াট তথ্য দিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। যা ‘উদর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপানোর সামিল। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘জেনেসিস একটি প্যাকেজে দুই কোটি ২১ লাখ টাকার যন্ত্র সরবরাহ করে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি বাজারদরের চেয়ে কয়েক গুণ দাম বেশি নিলেও সরবরাহ করেছে নিম্নমানের সরঞ্জাম।’

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমূহের জন্য ২০২৩ সালের ৭ জুন একটি দরপত্র আহ্বান করা হয়। ইজিপি পদ্ধতিতে এই দরপত্র আহ্বান করা হয়। এর ইজিপি আইডি নং নম্বর ৮৩৪১৫৭। ১১টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়। দরপত্র ওপেনিং কমিটির প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী ১১টির দরদাতার মধ্যে ১০টি দরদাতা প্রতিষ্ঠান রেসপনসিভ হয়। প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতা হয় জেনেসিস ট্রেডিং কোং। এই প্রতিষ্ঠানের দর দুই কোটি ৭ লাখ ৪৩১২ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মেসার্স আরপি এন্টারপ্রাইজের দর দুই কোটি ৭ লাখ ৫ হাজার ২০০ টাকা। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে মেসার্স ওশ্যান এন্টারপ্রাইজের দর দুই কোটি ৩৪ লাখ ৫৮ হাজার। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ডিজিটাল মেডিকেল সার্ভিসেসের দর দুই কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা। পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে মেসার্স এশিয়া ট্রেডিং-এর দর দুই কোটি ৫৮ লাখ ২৬ হাজার টাকা। ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে ওএমসি হেলথকেয়ার (প্রা.) লিমিটেডের দর দুই কোটি ৬৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। সপ্তম অবস্থানে রয়েছে এমপেক্স ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের দর দুই কোটি ৬৫ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। অষ্টম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ সায়েন্স হাউজের দর দুই কোটি ৭৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। নবম অবস্থানে রয়েছে জেনেটিক ট্রেডিং-এর দর দুই কোটি ৯২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। দশম অবস্থানে রয়েছে মেডিট্রেড করপোরেশনের দর তিন কোটি ৪৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। প্রথম সর্বনিম্ন রেসপনসিভ দরদাতা হয়ে কাজ পেয়েছে জেনেসিস ট্রেডিং কোং। এখানে উল্লেখ্য যে, জেনেসিস ট্রেডিং কোং এর দর দুই কোটি ৭ লাখ ৪৩১২ টাকা অপরদিকে সর্বোচ্চ দরদাতা মেডিট্রেড করপোরেশনের দর তিন কোটি ৪৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। ইহাতে প্রতীয়মান হয় যে, দরপত্র ক্রয়প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ ও অধিকতর প্রতিযোগীতামূলক এবং বাজারমূল্যের কম মূল্যে ক্রয় করা হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, দরপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় দেখা যায়- সর্বনিম্ন দরদাতা এক্সিবায়ো হেল্থ কোম্পানির দাখিল করা কাগজপত্র ত্রুটিপূর্ণ। এ কারণে দরপত্রে সর্বনিম্ন দরদাতা হলেও দরপত্রের প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে না পারায় এটিকে নন-রেসপনসিভ ঘোষণা করে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি। ফলে দরপত্র তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জেনেসিস ট্রেডিং কোং প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে পরিগণিত হয়। আর এ কারণেই কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়ন শেষে জেনেসিস ট্রেডিং কোং-কে কাজ দেয় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি। ওই দরপত্রে দুটি আইটেমে মেডিকেল যন্ত্রপাতি চাওয়া হয়। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে যন্ত্রপাতি সরবরাহের কার্যাদেশ পাওয়ার পর এই কোম্পানিটি ৭৪টি অটোমেটেড সেল কাউন্টার সরবরাহ করে; যা ইউরোপ অরিজিনের। এছাড়া ২০টি ইসিজি মেশিন সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি; যা ইউএসএফডিএ সনদ প্রাপ্ত পণ্য, মেডিকেল যন্ত্রপাতিগুলো সবদিক থেকেই গুণগত মানসম্পন্ন। ফলে দরপত্র অনুযায়ী সকল যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। ১০টি রেসপনসিভ দরদাতা অংশগ্রহণ করেছে এক্ষেত্রে কোনোও অনিয়ম, দুর্নীতি বা স্বজনপ্রীতি হয়নি। এখানে জেনেসিস ট্রেডিং কোম্পানি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে গুণগত মানসম্পন্ন মেডিকেল যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে; যা বাজারমূল্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। সরবরাহকৃত মেডিকেল যন্ত্রপাতি হাসপাতালসমূহে রোগীদেও চিকিৎসাসেবায় যথাযথভাবে সচল রয়েছে এবং ব্যবহৃত হচ্ছে।

সরবরাহকৃত যন্ত্রপাতি দিয়ে চিকিৎসকরা রোগ নির্ণয়ের কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন করছেন। অথচ জেনেসিস ট্রেডিং কোম্পানির সরবরাহ করা পণ্যগুলোকে নিম্নমানের হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা ডাহা মিথ্যা, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও বিভ্রান্তিকর। এ ধরনের প্রতিবেদন স্বাস্থ্য খাতের সংশ্লিষ্টদেরও বিভ্রান্ত করতে পারে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাস্থ্য খাতকে অস্থিতিশীল করতে একটি সিন্ডিকেট মাঠে নেমেছে। বিশেষ করে গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ওই চক্রটি বেশ সক্রিয়। তারা ঘোলা জলে মাছ শিকার করতে মরিয়া। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারকে আড়াল করতে তারা স্বচ্ছভাবে যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে আসছে-এমন ঠিকাদারদের টার্গেট করে মাঠে নেমেছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমেও বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালে যন্ত্রপাতি সরবরাহের বিষয়ে এই চক্র প্রকৃত তথ্য আড়াল করে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। এই চক্রের অন্যতম কাজ হলো দুষ্টচক্রদের নিকট হতে সুবিধা নিয়ে তাদের প্ররোচনায় স্বচ্ছ ও স্বনামধন্য ঠিকাদারদের কাজে বাঁধা সৃষ্টির লক্ষ্যে তাদের নাম সংযুক্ত করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রপাগান্ডামূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে খোঁজ নিলেই বিষয়টির সঠিকতা জানতে পারবেন।

 

ভোরের আকাম/মি/ সু

মন্তব্য