আশ্বিনের বৃষ্টিসহ আবহাওয়াজনিত প্রভাবে বাড়ছে এডিস মশার ঘনত্ব আর মশক নিধনে ঢিলেঢালা কার্যক্রম বাড়াচ্ছে উদ্বেগ। এ অবস্থায় দ্রুত সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না নিলে আরও অবনতি হতে পারে পরিস্থিতি। এমনটা জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার। দেশজুড়ে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। সেপ্টেম্বরের মতো চলতি মাসজুড়েও থাকতে পারে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা। প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গত মাসের মাঝা-মাঝিতেও সারাদেশে হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী ছিল ২ হাজারের নীচে। তবে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে মাত্র দুই সপ্তাহে এ সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
হাসপাতালগুলোতে এখন ভর্তি রোগী ছাড়িয়েছে সাড়ে তিন হাজার। চাপ সামলাতে হাসপাতালে সিঁড়ির পাশে এবং কোনোটিতে বারান্দায় বিছানা বসিয়ে দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা। আবার মৃদু উপসর্গের কারণে হাসপাতালে না আসায় রোগীদের বড় একটি অংশই থেকে যাচ্ছে হিসাবের বাইরে বলে জানিয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে এ বছরে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর ৫৩ শতাংশই আক্রান্ত হয়েছে সেপ্টেম্বরে, আর এ এক মাসেই প্রাণ হারান ৮০ জন। তবে চলতি মাসে পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার শঙ্কা জাগাচ্ছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে এক হাজারের বেশি রোগী। এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতেও অক্টোবরের চিত্র খুবই একটা সুখকর নয়। ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় এ মাসটিতেই। এসব নজিরের পাশাপাশি আশ্বিনের অঝোরধারায় বৃষ্টিসহ আবহাওয়ার ছন্দপতন হাওয়া দিচ্ছে, এডিসের বংশ বিস্তারে। বিপরীতে মশক নিধন কার্যক্রম ততটা জোরালো না হওয়ায় বাড়ছে উদ্বেগ।
ড. কবিরুল বাশার বলেন, এ মাসেই ডেঙ্গু বোগীর সংখ্যা বাড়বে। কারণ হিসেবে এডিস মশার ঘনত্ব বাড়ছে। চলতি মাসেই পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি খারাপ হবে এবং সেটি কতটা খারাপ হবে, তা নির্ভর করবে স্থানীয় সরকারের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলো কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে বা পারছে না তার ওপর।
বিশেষজ্ঞ ও আইআইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, সমাধান আছে হাতের নাগালে, প্রয়োজন কেবল সদিচ্ছা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিটি করপোরেশনকে নিতে হবে সমন্বিত উদ্যোগ। তিনি বলেন, প্রচণ্ড গরম যেমন এডিস মশা তৈরি হওয়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং ভেজা আবহাওয়াও তাই করে। বৃষ্টির কারণে পানি জমে থাকছে চারদিকে। বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পরেও এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগের বিস্তারের চক্রটা চলতে থাকে।
ড. কবিরুল বাশার বলেন, হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীদের কেন্দ্র করে হটস্পট চিহ্নিত করে তা ধ্বংস করা এ মুহূর্তে বেশি জরুরি। যে এলাকার বাড়ি থেকে ডেঙ্গু রোগী আসছে, সেই বাড়িটিকে কেন্দ্র করে তার চারপাশে ২০০ মিটারের মধ্যে ফগিং করে উড়ন্ত মশার মৃত্যুকে নিশ্চিত করতে হবে। চলতে মাসের প্রথম তিন দিনেই ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩ হাজার ১৮৩ রোগী। প্রাণ হারান ১৪ জন।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য