-->

বুকে তীব্র ব্যথা ! মনে হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে? জেনে নিন এ সম্পর্কে বিস্তারিত!

অর্পিতা জাহান
বুকে তীব্র ব্যথা ! মনে হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে? জেনে নিন এ সম্পর্কে বিস্তারিত!

কোথাও কোন মৃত্যুর সংবাদ আসলে অধিকাংশ সময়ে শোনা যায় তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন । আজকাল এটি খুব সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে ।  বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ মানুষই এর শিকার। 

 

পরিবারে বয়স্ক কেউ হঠাৎ অসুস্থ বোধ করলে, বুকে ব্যাথা হলে, চাপ অনুভব ও শ্বাস নিতে কষ্ট হলে আমরা মনে করি হয়তো ঠান্ডা জনিত বা গ্যাস জনিত কারণে হচ্ছে । কিন্তু আসল ব্যাপার তো অন্য !

 

যথাযথ কারণ না জেনে বুঝেই আমরা ভূল চিকিৎসা দেই। যার ফলাফল হয় মৃত্যু!

 

আলোচনা করবো হার্ট অ্যাটাকের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে। তবে তার আগে জানবো; হার্ট অ্যাটাক কি?

হৃদপিন্ডের করোনারি ধমনি কোন কারণে বন্ধ হয়ে গেলে, তখন হৃদপিন্ডে রক্ত সরবরাহ মারাত্মকভাবে হ্রাস পায় ও বাধা গ্রস্ত হয়ে অক্সিজেনের অভাবে বুকে তীব্র চাপ অনুভূত হয়। শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয়- মূলত এটাই হার্ট অ্যাটাক। ব্লকেজ হয় সাধারনত হৃদপিন্ডের ধমনিতে চর্বি, কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য পদার্থ জমা হওয়ার কারণে। আর এই চর্বি ও কোলেস্টেরল জমা হওয়াকে প্লেক বলে । প্লেক তৈরির প্রক্রিয়াটিকে এথেরোসক্লেরোসিস বলা হয়। আর যদি একটি প্লেক ফেটে যায় তাহলে রক্ত প্রবাহ হয়ে জমাট বাঁধতে পারে এবং হৃদপিন্ডের ক্লট ধমনি ব্লক করে। যা হার্টের টিস্যুকে মারাত্মকভবে ক্ষতিগ্রস্ত করে । যার ফলস্বরুপ হয় হার্ট অ্যাটাক। মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশনও বলা হয় হার্ট অ্যাটাককে ।

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ বিভিন্ন রকম হয়। কিছু প্রাথমিক, আবার কিছু বড় মাপের লক্ষণও, মাঝে মাঝে তো কোন লক্ষণই প্রকাশ পায় না। যার কারণে অনেকে বুঝতেই পারেন না- ব্যক্তির হয়েছে টা কি! যদি প্রাথমিক উপসর্গ গুলো দেখে ঠিক সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া যায় তাহলে ঝুঁকি কিছুটা কমানো সম্ভব।

ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের এক গবেষনায় উঠে এসেছে, ব্যক্তির হৃদরোগের প্রাথমিক উপসর্গ গুলো অবহেলা করলে যে শুধু মৃত্যু ঘটবে তা নয়; যদি তিনি বেঁচে থাকেন তাহলে তাকে স্বাস্থ্যগত নানা জটিলতার ভিতর দিয়ে যেতে হয় ।

 

হার্ট অ্যাটাকের সাধারণ লক্ষণ গুলোর মধ্যে রয়েছে:

 বুকে তীব্র চাপ অনুভূত হওয়া, আঁটসাট বেঁধে চাপ ও ব্যাথা অনুভূত হওয়া,

 ব্যাথা কখনও কখনও এত বেশী অস্বস্থিকর লাগে যে বুক থেকে ক্রমশ ব্যাথা বাম হাত, কাঁধ, ঘাড়, পিঠ ও পেটে ছড়িয়ে যায়। এমনকি কখনও কখনও দাঁত ও চোয়ালে ব্যাথা অনুভূত হয়।

 শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া

 মাথা ঘোরা ও মাথা ব্যাথা করা

 বমি বমি ভাব হওয়া ও বমি করা

 হালকা সর্দি

 অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পরা

 অস্থির লাগা বা বুকের ধরফরানি বেড়ে যাওয়া

 ব্যথায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলা

 কখনও কখনও হার্ট অ্যাটাকের প্রথম লক্ষণ সরাসরি কার্ডিয়াক এরেস্ট।

 চিকিৎসদের মতে সাধারনত নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসা, বুকে ব্যথা ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মত ঘটনা হার্ট অ্যাটাকের এক সপ্তাহ বা এক মাস আগে থেকেই হয় ।

 মহিলাদের ক্ষেত্রে পিঠে, ঘাড়ে ও বাহুতে সংক্ষিপ্ত বা তীক্ষ্ণ ব্যাথা অনুভত হওয়া।

 

কার্ডিয়াক এরেস্টে করণীয় কি?

১. প্রথমত কখনও যদি এমন মনে হয় আপনার হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে বা উপরোক্ত কোন লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে, আর আপনি বাড়িতে একা তাহলে সময় নষ্ট না করে দ্রুত চিকিৎসা সহায়তার জন্য ১৬২৬৩ কল করুন বা স্থানীয় কোন জরুরী বিভাগে যোগাযোগ করুন।

 

২. জরুরী সাহায্য পাওয়ার অপেক্ষা করার সময় সেবা প্রদানকারীর নির্দেশে নাইট্রোগ্লিসারিন নিন । অ্যাসপিরিনও নিতে পারেন যদি তারা নির্দেশ দেন তো।

৩. অন্যের ক্ষেত্রে যদি দেখেন তার কার্ডিয়াক এরেস্ট হয়েছে বা অজ্ঞান হয়ে গেছে তাহলে আগে নিশ্চিত হন যে তার হৃদয় স্পন্দন পাওয়া যাচ্ছে কিনা ও শ্বাসপ্রশ্বাস নিচ্ছে কি না। যদি পাওয়া যায় তাহলে রোগীর গায়ের জামা খুলে একটি শক্ত জায়গায় হাত পা ছড়িয়ে শুইয়ে দেন এবং সিপিআর (CPR) দেন। এর অর্থ হলো ব্যক্তির বুকের বাম পাশে হাত রেখে খুব দ্রুত ধাক্কা দিন, মিনিটে প্রায় ১০০-১২০ কম্প্রেশন করুন।

 

৪. তার শ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে দ্রুত কৃত্তিম শ্বাস দিন ।

৫. হার্ট অ্যাটাকের পর রোগীর বমি অনুভূত হলে কাত করে দিন এতে ফুসফুসের ভেতরে বমি ঢুকতে পারবে না

৬. রোগী একটু স্বাভাবিক হলে দ্রুত জরুরী সেবার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করান।

 

কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণ

 

সব হার্ট অ্যাটাকের কারণ ধমনীর দ্বারা সৃষ্ট করা ব্লক নয়; অন্যান্য কারণও এর অর্ন্তভুক্তযেমন :

 করোনারী ধমনীতে খিচুনি হওয়া, এটি একটি জাহাজের ন্যায় মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে যা আটকানো যায় না । আমাদের ধমনীতে কোলেস্টেরল ফলক নামক এক ধরনের প্রলেপ থাকে। ধূমপান ও অন্যান্য অনেক প্রাসঙ্গিক কারণে এই দ্রুতগামী রক্তবাহী জাহাজের গতি আরও বেশী তরান্বিত করে ।

 

 কেভিড ১৯ এর এবং অন্যান্য ভাইরাল সংক্রমণ হার্টের পেশিকে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

 

 সাধারণত আমাদের হৃদপিন্ডে যে রক্ত প্রবাহিত হয় তা মূলত ধমনী দিয়েই আসে। যখন সেই রাস্তাটি অনেক বেশি সরু বা সংকীর্ণ হয়ে যায় তখন রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়ে। ওই নালীর ভেতরে রক্তের জমাট সৃষ্টি করে। এতে করে রক্ত প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটে। যার ফলে হৃদপিন্ডের পেশিগুলো অনেক দূর্বল হয়ে যায়। এতে অক্সিজেন প্রবাহিত হতে পারে না । আর হৃদপিন্ডে অক্সিজেন না পৌছালেই হয় হার্ট অ্যাটাক।

 

হার্ট অ্যাটাকের রিস্ক জোনে কারা আছে !

 মানসিক চাপ বিষন্নতা ও অত্যাধিক রাগ করে যারা নিয়ন্ত্রণ হারান তাদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেশি।

 একটা বয়সের পর মানুষের শরীরে স্বাস্থ্যগত নানান জটিলতা দেখা দেয় এবং তাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দূর্বল হয়ে পড়ে। যার কারণে বয়স্কদের ঝুঁকি বেশি থাকে।

 যারা মাদক সেবন করেন

 অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস, যেমন প্রাণী চর্বি, অস্বাস্থ্যকর তেলের তৈরি খাবার, অনেকবেশি চিনি ও লবণের ব্যবহার যারা করেন- তাদের ঝুঁকি রয়েছে।

 অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিকস রোগীর কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঝুঁকি বেশি ।

 স্থুলতা, উচ্চ রক্তচাপে ভূগছেন যারা।

 

কিভাবে হার্ট অ্যাটাক ঠেকাবেন?

 সর্বপ্রথম কাজটি হবে আমাদের জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনা। নিয়মিত হাঁটা ও ব্যায়ামের অভ্যাস করা ।

 নিজেকে দুঃচিন্তা মুক্ত ও খোশ মেজাজে রাখতে হবে।

 ধুমপান ও ড্রাগস সেবন বর্জন করতে হবে।

 

 ডায়াবেটিকস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে।

 

 মাসে একবার চেকআপ করার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

 

ভোরের আকাশ/অ

মন্তব্য

Beta version