-->
সতর্ক থাকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

তাপপ্রবাহ ও ভ্যাপসা গরমে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক
তাপপ্রবাহ ও ভ্যাপসা গরমে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

অব্যাহত তাপপ্রবাহ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাপসা গরম আর লোডশেডিং মানুষের জীবনকে করে তুলেছে বিপর্যস্ত। তৈরি হচ্ছে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি।

 

তারা বলেন, যেভাবে তাপমাত্রা বাড়ছে এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি। আর এ থেকে সহসা পরিত্রাণ নেই। ফলে এই গরমের হাত থেকে রক্ষা পেতে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

 

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বেনজীর আহমেদ বলছেন, গরমের সময় শুধু সতর্ক থেকে অনেক বিপদ এড়ানো যেতে পারে।

 

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, অব্যাহত এই তাপপ্রবাহ আরো এক সপ্তাহ চলতে পারে। দেশের বেশির ভাগ জায়গায় বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখছেন না তারা।

 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা বলেন, সারা দেশের কোথাও তীব্র এবং কোথাও মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাপপ্রবাহ আরো চার থেকে পাঁচ দিন চলতে পারে। তবে সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে। খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেটের দু-এক জায়গায় সম্ভাবনা থাকলেও আপাতত অন্যত্র বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই ।

 

৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তাপপ্রবাহ বিষয়ে বলা হয়েছে রাজশাহী, দিনাজপুর, নীলফামারী, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

 

ঢাকা ও বরিশাল বিভাগসহ রংপুর, রাজশাহী, খুলনা বিভাগের কোথাও কোথাও এবং ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

 

এদিকে বিশেষজ্ঞরা প্রচন্ড গরমের হাত থেকে রক্ষা পেতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলে সকাল থেকে প্রচন্ড রোদ প্রকৃতিকে উত্তপ্ত করে তুলছে। এই রোধে বাইরে বের হলেও ঘেমেনেয়ে একাকার। এতে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।

 

এ কারণে তারা বলছেন, প্রয়োজন না হলে প্রচন্ড রোদে বাইরে বের হওয়া যাবে না। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত রোদের তীব্রতা বেশি থাকে। এ সময় জরুরি কাজ না থাকলে বাইরে বের না হওয়াটাই ভালো।

 

তবে বাইরে বের হলে অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে সরাসরি রোদের মধ্যে থাকতে না হয়। তবে ছাতার পরিবর্তে এ সময় চওড়া কিনারাযুক্ত টুপি, ক্যাপও ব্যবহার করা যেতে পারে।

 

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বেনজীর আহমেদ বলে, যারা মাঠেঘাটে কাজ করেন, তারা মাথায় ‘মাথাল’ জাতীয় টুপি ব্যবহার করতে পারবেন, যা তাদের রোদ থেকে রক্ষা করবে। এছাড়া বেশি বেশি পানি পান করার কথা বলছেন তারা। প্রচÐ গরমে ঘাম হয়ে শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়। তখন ইলেট্রোলাইট ইমব্যালান্স তৈরি হতে পারে।

 

এ কারণে এই সময়টাতে প্রচুর পানি পান করতে হবে। লবণ মিশিয়ে পানি পান করতে পারলে আরো ভালো। ফলের জুস খাওয়া শরীরের জন্য ভালো, তবে এ জাতীয় জুস খাওয়ার সময় দেখে নিতে হবে সেটি পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত পানি দিয়ে তৈরি কিনা। খোলা, পথের পাশের দূষিত পানি বা শরবত এড়িয়ে চলতে হবে।

 

পরিধেয় হিসেবে সূতির কাপড় ব্যাবহার করতে বলা হয়েছে। গরমের এই সময়টায় জিন্স বা মোটা কাপড় না পরে সুতির নরম কাপড় ব্যবহার করতে হবে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সুতি কাপড় ব্যবহার করলে অতিরিক্ত ঘাম হবে না এবং শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করবে। তবে গরমের সময় কালো বা গাঢ় রঙের কাপড় এগিয়ে সাদা বা হালকা রঙের কাপড় পরিধান করতে হবে।

 

কারণ হালকা কাপড় তাপ শোষণ করে কম। তারা আরো বলেন, গরমের সময় খোলামেলা জুতা পরা উচিত, যাতে পায়ে বাতাস চলাচল করতে পারে। কাপড় বা সিনথেটিকে বাদ দিয়ে চামড়ার জুতা ব্যবহার করা উচিত। কারণ এতে গরম কম লাগে। সম্ভব হলে মোজা এড়িয়ে চলা যেতে পারে।

 

এই সময় খাবারে সাবধানতা অবলম্বন করার কথা বলেন তারা। বিশেষ করে ভারী ও ফাস্টফুড এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এ জাতীয় খাবার হজম করতে সময় বেশি লাগে। ফলে সেটি শরীরের ওপর বাড়তি চাপ ফেলে এবং শরীরের উষ্ণতা বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য সেটি আরো বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে।

 

খাবারের মেন্যু থেকে গরমের সময় তেলযুক্ত খাবার, মাংস, বিরিয়ানি, ফাস্টফুড ইত্যাদি বাদ দেয়া যেতে পারে। বরং শাকসবজি ও ফলমূল বেশি করে খাওয়া যেতে পারে। তবে পুরোনো বা বাসী খাবার খাওয়া যাবে না। গরমে খাবার-দাবার তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে বাসী খাবার বা আগের দিন রান্না করা খাবার খাওয়ার আগে দেখে নিতে হবে যে, সেটি নষ্ট কিনা।

 

এ জাতীয় খাবার খেলে ডায়রিয়া, পাতলা পায়খানাসহ পেটের অসুখ হতে পারে। এছাড়া ঘর ঠান্ডা রাখতে পানি ভর্তি বালতি রাখার কথাও বলেন। ঘরের ভেতর ফ্যানের নিচে একটি পানি ভর্তি বালতি রাখলে ঘর খানিকটা ঠান্ডা করে তুলবে। এছাড়া এই গরমে প্রতিদিন অবশ্যই গোসল করতে হবে। তারা বলেন, গরমের সময় প্রতিদিন অবশ্যই গোসল করতে হবে, যা শরীর ঠান্ডা রাখবে।

 

দিনে একাধিকবার হাত, মুখ, পায়ে পানি দিয়ে ধুতে পারলে ভালো। বাইরে বের হলে একটি রুমাল ভিজিয়ে সঙ্গে রাখতে হবে, যা দিয়ে কিছুক্ষণ পর পর মুখ মুছে নেয়া যাবে।

 

হিট স্ট্রোকের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তারা বলেন, প্রচন্ড গরমে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারে।

 

ফলে মাংসপেশি ব্যথা, দুর্বল লাগা ও প্রচন্ড পিপাসা হওয়া, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, মাথাব্যথা, ঝিমঝিম করা, বমিভাব ইত্যাদি লক্ষণ দেখা গেলে প্রেসার পরীক্ষা করে দেখতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version