-->
বিএসএমএমইউর ভিসির পিএস ডা. রাসেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ

২৫-৩০ লাখের নিচে ভিসি স্যারের কাছে যাওয়া যায় না

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৫-৩০ লাখের নিচে ভিসি স্যারের কাছে যাওয়া যায় না

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের পিএস-১ ডা. রাসেলের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে।

 

চাকুরির লোভ দেখিয়ে ডা. রাসেল প্রতারণা করেছেন এমন অভিযোগ তুলেছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সহসভাপতি এম আর মামুন। তিনি বিচার চেয়ে গত ২৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

 

অভিযোগে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে লিখেছেন ‘আপনার পিতার নামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের পিএস-১ হিসেবে যোগদানের প্রথম থেকে ডা. মো. রাসেল চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি পর্যন্ত বাসার বাজার, নিজের পোশাক, তার স্ত্রীর পোশাক, বিভিন্ন প্রকার দামি ফলভর্তি বক্স, মাছ, মুরগি, হাঁসসহ নিত্যদিনের সরঞ্জামাদি আমার কাছ থেকে নেয়, যার বাজারমূল্য ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা, যা আমার কাছে একাধিক প্রমাণ রয়েছে।’

 

এম আর মামুন লিখেছেন ‘প্রথম থেকে আমার চাকরি (সেকশন অফিসার) পদে কোনো টাকা লাগবে না বলার পরিপ্রেক্ষিতে আমি তার এবং তার পরিবারের জন্য এত টাকা খরচ করি।’

 

‘সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু মেডিকেল এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আনোয়ার খান মর্ডান হসপিটালে গত ২ বছর তাকে সময় দিই।’

 

‘এর মধ্যে তার আপন ভাইয়ের ছেলে (নাসির উল আলম) সবুজসহ অসংখ্য লোককে সেকশন অফিসার ও অন্যান্য পদে চাকরি দিলে আমি তাকে আমার চাকরি না হওয়ার কারণ জানতে চাই। তিনি আমাকে বড় অঙ্কের টাকা ম্যানেজ করার কথা বলেন।’‘তার পরিবারের পেছনে এত টাকা খরচ করার পরও আমার বাবা অসহায় হয়ে গ্রামের বাড়ির অংশ বিক্রি করে চাকরির আশায় আমাকে নগদ ৬ লাখ টাকা দেন ডা. রাসেলকে দেয়ার জন্য।’

 

অভিযোগে এই ছাত্রলীগ নেতা লিখেছেন ‘চলতি বছরের গত ২ জানুয়ারি আমি আনোয়ার খান মর্ডানে তার চেম্বারে নগদ ৬ লাখ টাকা নিয়ে যাই, সে আমার দিকে তেড়ে আসে এবং এত কম টাকায় ভিসি স্যার আমাকে চাকরি দেবে না বলে ঝাড়ি দেন এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন।’

 

তিনি বলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং সেকশন অফিসার এগুলো ২৫-৩০ লাখ টাকার নিচে ভিসি স্যারের কাছে যাওয়া যায় না (যাহা মোবাইলে রেকর্ড ছিল)। সর্বোপরি ১২ লাখ টাকা ম্যানেজ করতে পারলে চাকরির আশায় থাকা না হয় ভুলে যাওয়ার কথা বলেন ডা. রাসেল ।’

 

এদিন ডা. রাসেল তার মোবাইল নিয়ে যান বলে অভিযোগ করে লিখেছেন ‘এর মধ্যে তার ফোনে কল এলে আমার বেশি টাকা লাগবে বাবাকে বিশ্বাস করানোর জন্য আমি আমার ব্যবহারের মোবাইলে কথাগুলো রেকর্ড অন করে টাকার ব্যাগে রেখে দিই। ৩৭ মিনিট পর তিনি বলেন, মামুন তোমার মোবাইল কোথায়...? ফোন ব্যাগে রয়েছে বলে আমি জানাই। তিনি জোর করে আমার ব্যাগ থেকে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখেন আমার ফোনে ভিসি স্যার কত টাকা চেয়েছেসহ বিস্তারিত কথা রেকর্ডে।

 

তিনি কথাগুলো শুনে রেকর্ড কেটে দেন এবং আমার ব্যবসায়িক এবং একান্ত নিজস্ব সব তথ্য ডিলিট করে দেয়। আমি যত বলি বেশি টাকা লাগবে বাবাকে বিশ্বাস করানোর জন্য রেকর্ডটি করা; সে কোনোভাবেই শোনেনি। এক পর্যায় ডা. রাসেল আমার ফোন নিয়ে বেরিয়ে যায় আনোয়ার খান মর্ডান থেকে।’

 

‘তারপর দিন আমি আমার বন্ধুর ফোন দিয়ে তাকে রিকোয়েস্ট করি আমাকে ফোনটি দেয়ার জন্য। তিনি আমাকে দেখে নেয়ার হুমকি প্রদান করে, যা সঠিক তদন্ত করলে দেখতে পারবেন। এর মধ্যে আমার বাবা ডা. রাসেলকে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করেন আমাকে চাকরিটি দেয়ার জন্য, তিনি কোনোভাবেই স্বাভাবিক হচ্ছেন না এবং চাকরি না হওয়ার কথা বলেন ।’

 

অভিযোগের শেষে মামুন প্রধানমন্ত্রীকে লিখেছেন ‘আপনার সমীপে আকুল আবেদন যে, ডা. রাসেলের উপযুক্ত বিচার এবং আমি একজন হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান ও ছাত্রলীগের একজন নিবেদিত আদর্শিক, ত্যাগী ও নিবেদিত কর্মী হিসাবে আমাকে চাকরিটি পাওয়ার সুযোগ করে দিতে আপনার সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছি।’

 

এ প্রসঙ্গে ডা. রাসেল বলেন, তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সঠিক নয়। যার সত্যতা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। মামুন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তার বিরুদ্ধে এসব করছে।

 

এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ থাকলে তা তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসএমএমইউর অনেকেই বলছেন, ডা. রাসেলের বিরুদ্ধে কখনোই নিরপেক্ষ তদন্ত হবে না, যা হবে আইওয়াশ।

 

ভোরের আকাশ/নি

মন্তব্য

Beta version