-->
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকট

ব্যাহত হচ্ছে জটিল রোগের চিকিৎসাসেবা

নিখিল মানখিন
ব্যাহত হচ্ছে জটিল রোগের চিকিৎসাসেবা

নিখিল মানখিন: দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে অনেক সময় বিভিন্ন জটিল রোগের সঠিক সেবা প্রদান ব্যাহত হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে উপজেলা পর্যায়ে বিশেয়ায়িত চিকিৎসাসেবা চালু হচ্ছে না। জেলা পর্যায়ে থাকলেও রয়েছে সীমিত পরিসরে।

 

সব রোগীকে সেবা প্রদানের শিক্ষা, কৌশল ও প্রশিক্ষণ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। রোগের প্রকারভেদে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকলে রোগীর শতভাগ সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা সম্ভব না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রতি লাখে একজন করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

 

তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, তুলনামূলক আমাদের দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। আমাদের পর্যাপ্তসংখ্যক বিশেষজ্ঞ তৈরি করতে হবে। আর সেই উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট বিভাগকেই নিতে হবে। তিনি আরো বলেন, একসময় নিউরোসার্জন হিসেবে আমরা মাত্র একজন অধ্যাপক ডা. রশিদ উদ্দিন স্যারের নাম শুনতে পেতাম। এখন দেশে ২০০ নিউরোসার্জন রয়েছেন।

 

দেশে কীভাবে ৪০০ নিউরোসার্জন তৈরি করা যায়, সেভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বিষয়ে অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়লেও অর্থ সংকটের কারণে অনেক রোগী আধুনিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দেশে জনসংখ্যার তুলনায় ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা অপ্রতুল।

 

বর্তমানে দেশে ক্যান্সার চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ২২৮ জন; অথচ আরো ৫ হাজার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দরকার। কাজেই দেশে যাতে দ্রুত এ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি করা যায়, সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশে ক্যান্সার চিকিৎসার দৈন্যদশা নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসা মিলছে না।

 

মানসিক চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস (বিএপি) জানায়, দেশে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের অভাব আছে হাসপাতালগুলোয়। বর্তমানে ১৮ কোটির মানুষের দেশে মানসিক রোগের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ২৭০ জন। আর কাউন্সেলিংয়ের জন্য সাইকোলজিস্ট রয়েছেন ২৫০ জন। পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল নেই।

 

সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, দেশে ১২ থেকে ১৫ লাখ মানুষের জন্য আছেন মাত্র একজন কিডনি বিশেষজ্ঞ। সারা দেশে অনুমোদনপ্রাপ্ত কিডনি সংযোজন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা করোনা শুরুর আগে ছিল ১০টি, বর্তমানে তা চারটিতে নেমে এসেছে।

 

নিউরোস্পাইন সোসাইটি অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেন ভোরের আকাশকে বলেন, দেশে বর্তমানে প্রায় ১৫০ নিউরোসার্জন মস্তিষ্কের পাশাপাশি মেরুদন্ডের রোগীদের সার্জিক্যাল চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। উপজেলা পর্যায়ে এ চিকিৎসা সুবিধা নেই বলে জানান তিনি।

 

চিকিৎসক সংগঠনের নেতারা জানান, দেশে লিভার ও গ্যাস্ট্রো-অ্যান্টারোলজি বিশেষজ্ঞের সংখ্যা ২০০-এর বেশি হবে না। অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে প্রায় ১৮ কোটি মানুষ। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে অনেক নতুন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ তৈরি হচ্ছে। তবে জনসংখ্যার তুলনায় তা এখনো কম। আমাদের আরো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন বলে জানান ভিসি।

 

সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, উপজেলা পর্যায়ে বিশেষায়িত চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চায় সরকার। সেজন্য চিকিৎসকরাই একমাত্র ভরসা। তাই প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসকদের সঠিক ও মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে হবে। দায়িত্বে কোনো অবহেলা করা যাবে না। রোগীর চাপ থাকলেও সঠিক ও মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে হবে বলে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

 

সম্প্রতি রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্সের ঘাটতি আছে। যন্ত্রপাতি মেরামতের বিষয়টিও দুর্বল অবস্থায় আছে। এজন্য জনবল বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিউরোস্পাইন সোসাইটি অব বাংলাদেশ সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন বলেন, বর্তমানে দেশের ৫০ লাখের বেশি মানুষ মেরুদন্ডের সমস্যায় ভুগছেন। আমাদের দেশের জনগোষ্ঠীর প্রায় ৫০ শতাংশ চিকিৎসার আওতায় আনা যাচ্ছে না।

 

দেশের সবাইকে চিকিৎসার আওতায় আনতে হলে নিউরোসার্জনের সংখ্যা ও চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান বাড়তে হবে। আমাদের দেশের মেরুদন্ডের রোগীদের চিকিৎসা প্রদানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকে আছেন ২০৫ জন। আমরা দেশের জেলা পর্যায়ে মেরুদন্ডের চিকিৎসা পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আমাদের সঙ্গে কাজ করছে। আশা করি, আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে সারা দেশে মেরুদন্ডের চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version