-->
পদ্ধতির প্রভাব : স্বাস্থ্য সেক্টরের মজবুত অবকাঠামোর ফলপ্রসূ ব্যবহার ব্যাহত

জনসংখ্যার বড় অংশ জটিল রোগের চিকিৎসাবঞ্চিত

নিখিল মানখিন
জনসংখ্যার বড় অংশ জটিল রোগের চিকিৎসাবঞ্চিত

নিখিল মানখিন: স্বাস্থ্যসেবার কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে স্বাস্থ্য সেক্টরের মজবুত অবকাঠামোর ফলপ্রসূ ব্যবহার ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ বিশেষজ্ঞদের।

 

তারা বলছেন, চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা, সংগ্রহ, রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত এবং সংস্কার করার জন্য প্রচলিত সরকারি নীতিমালা সময়সাপেক্ষ ও জটিল। বিদ্যমান ভারসাম্যহীনতা স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোর বিভিন্ন স্তরে মানসম্মত প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানে অন্তরায় হয়ে উঠছে। এতে দেশের মোট জনসংখ্যার বড় অংশ এখনো বিভিন্ন জটিল রোগের উন্নত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমন অবস্থায় স্বাস্থ্যসেবার কেন্দ্রীভ‚ত ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ভাঙতে হবে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা এখনো অনেকটাই জেলা ও বিভাগকেন্দ্রিক। উপজেলা পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। জটিল জটিল অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের মাত্রাও অনেকগুণ বেড়েছে। চিকিৎসা ব্যয় ও ওষুধের দামও অনেক বেড়েছে।

 

স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তি ও ভোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শ্রেণির জনগোষ্ঠীর মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। কিছু কিছু অসমতা এতটাই তীব্র ও প্রতিক‚ল, সমষ্টিগতভাবে তা দেশের অগ্রগতির অন্তরায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাতে অর্জিত সাফল্য টিকিয়ে রাখাই কষ্টকর।

 

আবার কিছু ক্ষেত্রে স্থবিরতার লক্ষণ দৃশ্যমান। সুস্বাস্থ্য এখনো দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিশেষ করে বস্তিবাসীদের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। বেসরকারি হাসপাতালের ব্যয়বহুল চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে পারে না অধিকাংশ সাধারণ মানুষ। সরকারি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবার সঙ্গে সম্পৃক্তদের দায়িত্ব পালনে অবহেলার বিষয়টি দীর্ঘ বছর ধরে বেশ আলোচিত হয়ে আসছে।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, থানা ও জেলা পর্যায়ে কম খরচে জটিল রোগের চিকিৎসার সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলে দরিদ্র মানুষ উপকৃত হতো। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে যাতায়াত ও থাকা-খাওয়ার জন্য ব্যয় করতে হতো না। মানসম্মত স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সেবাদানকারীদের মন-মানসিকতার ওপর নির্ভর করে। মানসম্মত সেবাদানের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা না থাকলে ভালো স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব না।

 

স্বাস্থ্য সেক্টরের উন্নয়নে বর্তমান সরকার বহুমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছে। জনবল বৃদ্ধির পাশাপাশি রোগীদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

 

বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, স্বাস্থ্য খাতের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কয়েকটি বিষয় চিহ্নিত করেছে। সেগুলো হচ্ছে, সেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে দুর্বল ব্যবস্থাপনা, সম্পদের সীমাবদ্ধতা ও সেবার দুর্বল গুণগতমান। আর সেবাগ্রহীতার তথা চাহিদার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের অসামর্থ্যতা, জ্ঞান ও স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণ না করা। সুস্বাস্থ্য এখনো দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিশেষ করে বস্তিবাসীদের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে।

 

এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার বিভাগের সক্ষমতা এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের ভ‚মিকা এখনো পর্যাপ্ত নয়। স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট জনশক্তির দক্ষতা সংমিশ্রণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভারসাম্যহীনতা স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোর বিভিন্ন স্তরে মানসম্মত প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানে অন্তরায় হয়ে উঠছে।

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ ভোরের আকাশকে বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বিকেন্দ্রীকরণ করা যেতে পারে। কারণ স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নয়, আরো বেশকিছু মন্ত্রণালয়ের সম্পৃক্ততা রয়েছে।

 

তিনি বলেন, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে জনবল বাড়াতে হবে। আর বর্তমান সরকারের ইতোমধ্যে গৃহীত ও চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। স্বাস্থ্য সেক্টরের বাজেট বৃদ্ধি করা দরকার। আর তৃণমূল পর্যায়ে যারা কাজ করবেন, তাদের জন্য উৎসাহ ভাতার ব্যবস্থা করা উচিত মনে করেন ভিসি।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের কিডনি, লিভার, ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার মাত্রা কয়েকগুণ বেড়েছে। অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় কোনো জাতীয় দিকনির্দেশনা নেই। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো নিজেদের মতো করে ব্যবসায়িক মনোভাব নিয়ে এ জাতীয় রোগের চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে।

 

অসংক্রামক রোগের চিকিৎসাব্যয় দেশের অধিকাংশ মানুষের সামর্থ্যরে বাইরে চলে যাচ্ছে। আর অনেক অসংক্রামক রোগের শতভাগ চিকিৎসা ব্যবস্থা দেশে নেই। জেলা পর্যায়ে সীমিত পরিসরে থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে ব্যয়বহুল ও জটিল সংক্রামক রোগগুলোর চিকিৎসা সুবিধা নেই।

 

তাই অনেক অসংক্রামক রোগীকে চিকিৎসার অভাবে অকালে মৃত্যুবরণ করতে হচ্ছে। বর্তমানে দেশের ৬১ শতাংশ রোগই হচ্ছে অসংক্রামক রোগ।

 

ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রশিদী-ই মাহবুব ভোরের আকাশকে জানান, কেন্দ্রীভ‚ত ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির কারণে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোর দক্ষ ও ফলপ্রসূ ব্যবহার ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

তারা বলছেন, চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয়, সংগ্রহ, রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত এবং সংস্কার করার জন্য প্রচলিত সরকারি নীতিমালা সময়সাপেক্ষ ও জটিল হওয়ায় সেটি প্রায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে অন্তরায় হয়ে ওঠে। পর্যাপ্ত জনবল, আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাসহ প্রয়োগধর্মী জাতীয় স্বাস্থ্য গবেষণা ব্যবস্থার অভাব রয়েছে।

মন্তব্য

Beta version