-->

বেড়েছে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের হার, উপজেলা এনসিডি কর্নারের চেয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকে বেশি

আরিফ সাওন, সিলেট থেকে ফিরে
বেড়েছে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের হার, উপজেলা এনসিডি কর্নারের চেয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকে বেশি

আরিফ সাওন, সিলেট থেকে ফিরে: বাবুল চন্দ্র দাস। একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। বর্তমানে অবসরে। এক দিন স্কুল থেকে ফেরার সময় অসুস্থ বোধ করেন। মাথা ঘুরাচ্ছিল। তখন তিনি একটি ফার্মেসিতে যান। সেখানে গিয়ে অসুস্থতার কথা জানান। তারা তার প্রেসার মাপেন। মেপে জানান, তার প্রেসার বেশি আছে। আগেও এমন হতো, কিন্তু খুব একটা আমলে নেননি।

ফার্মেসি থেকে তাকে এনসিডি কর্নারে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। এনসিডি কর্নার কী বা কোথায় আছে, তা তিনি জানতেন না। ফার্মেসি থেকে তিনি জানতে পারেন। এক দিন পরে যান সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এনসিডি কর্নারে। তারা তার প্রেসার মেপে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে এক মাসের ওষুধ দেয় এবং পরবর্তী মাসে আবার আসতে বলে। সেই ২০১৯ সাল থেকেই তিনি নিয়মিত এনসিডি কর্নারে ফলোআপে আসেন।

বাবুল বলেন, এটা বাড়ি থেকে একটু দূরে। বাড়ির কাছে যে কমিউনিটি ক্লিনিক আছে সেখানে হলে একটু ভালো হতো। কারণ এখানে উপজেলার সব রোগী আসে। সকাল থেকে এসে সিরিয়ালে অপেক্ষা করতে হয়। পুরো একটা দিন চলে যায়। তাছাড়া মাঝে মাঝে এসে ওষুধ পাওয়া যায় না। ওষুধ না পেয়ে ফিরে যেতে হয়। বাইরে থেকে কিনে খেতে হয়। এখন ওষুধেরও দাম বেড়েছে।

গত ৩ অক্টোবর সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এনসিডি কর্নারে ফলোআপে আসেন বাবুল দাস। এ সময় এ প্রতিবেদকের কথা হয় তার সঙ্গে। এ সময় আরো কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তাদের মধ্যে আরেকজন স্কুলশিক্ষক বলেন, স্কুলের সময়ে আসা মুশকিল হয়ে যায়। সপ্তাহে এক দিন বিকেলে খোলা থাকলে ভালো হতো। এ ছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে এই সেবা পাওয়া গেলে খুব উপকার হতো। টাকা এবং সময় বাঁচত।

শুধু এরা নন; বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক মানুষ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টিকারী অসংক্রামক রোগ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। ২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৮ সপ্তাহের এপিডেমিওলজিক্যাল রিপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এই সময়ে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ৬১ দশমিক ৬১ শতাংশের উচ্চরক্তচাপ ছিল। এরপর বেশি ছিল ডায়বেটিসের রোগী। ৬১ দশমিক ৩৭ শতাংশের ছিল ডায়বেটিস।

 

দেশে প্রতি ৫ জনে ১ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ (২১%) উচ্চরক্তচাপে ভুগছে, যাদের অধিকাংশ, অর্ধেক নারী (৫১%) এবং দুই-তৃতীয়াংশ পুরুষ (৬৭%), জানেই না যে, তাদের উচ্চরক্তচাপ রয়েছে। নীরবে উচ্চরক্তচাপ শরীরের বিভিন্ন অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

 

বাংলাদেশ এনসিডি স্টেপস সার্ভে, ২০১৮ অনুযায়ী উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের মধ্যে ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে প্রতি ৭ জনে একজনেরও কম। গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ স্টাডি, ২০১৯-এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মৃত্যু এবং পঙ্গুত্বের প্রধান তিনটি কারণের একটি উচ্চরক্তচাপ। দেশে উচ্চরক্তচাপ বিষয়ে প্রশিক্ষিত কর্মী রয়েছে মাত্র ২৯ শতাংশ স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রে।

 

বর্তমানে ডায়বেটিস এবং উচ্চরক্তচাপ মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রতোভাবে জড়িয়ে গেছে। এই রোগ নিয়ন্ত্রণে জোর দিয়েছে সরকার। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন থেকে জানা গেছে, ২০১৮ সাল থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনসিডিসি) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ (এনএইচএফবি) যৌথভাবে সিলেট বিভাগসহ দেশের ৫৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যার উদ্দেশ্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত করা, বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ প্রদান এবং ফলোআপ কার্যক্রম শক্তিশালী করা।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন বলেন, সরকার আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে আনতে চায়। হৃদরোগজনিত মৃত্যুহার শতকরা ৭ দশমিক ৫ ভাগ এবং উচ্চরক্তচাপের ব্যাপকতা ২১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে কমিয়ে আনতে চায়। এ প্রকল্পের আওতায় সিলেটসহ ৫৪ উপজেলা ও কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে রোগীরা উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল সমস্যার চিকিৎসায় ওষুধ পাচ্ছেন। আগামী এক বছরের মধ্যে ২০০টি উপজেলায় এনসিডি কর্নার খোলা হবে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ৫৪ উপজেলার হাতেগোনা কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিকেও রয়েছে এই সেবা। ওই কয়টি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে মাসে মাসে শুধু ওষুধ দেয়া হয়। সেখানে রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা নেই। রোগীরা এলে তাদের প্রেসার বেশি পেলে কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডররা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এনসিডি কর্নারে রেফার করেন। পরে সেখানকার চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী কমিউনিটি ক্লিনিকে গেলে তারা প্রতিমাসে প্রেসার মেপে ওষুধ দেন। দুই-তিনি মাস ওষুধ খাওয়ার পর নিয়ন্ত্রণে না এলে সেই রোগীকে তারা আবার উপজেলায় পাঠান।

 

জানা গেছে, এনসিডি কর্নারে একটি অ্যাপের মাধ্যমে উচ্চরক্তচাপের রোগীদের তথ্য রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। নতুন কোনো রোগী এলে প্রথমে তার প্রেসার মাপা হয়। প্রেসার বেশি থাকলে তাকে একটি স্লিপ দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয় চিকিৎসকের রুমে। চিকিৎসক তাকে দেখে ব্যবস্থাপত্র দেন। এরপর রেজিস্ট্রারে নাম এন্ট্রি করা হয়। রোগীকে একটি বই দেয়া হয়। একই সঙ্গে অ্যাপে রেজিস্ট্রার করা হয়। রোগীকে যে বই দেয়া হয় তার প্রথম পৃষ্ঠায় একটি বারকোড আছে, যা স্ক্যান করলে অ্যাপে যুক্ত করা রোগীর সব তথ্য দেখা যায়।

 

একজন রোগীকে প্রথম দেখার ২৮ দিন পর আবার আসতে বলা হয় এবং তা বইয়ে উল্লেখ করে দেয়া হয়। একই সঙ্গে তা অ্যাপেও যুক্ত করা হয়। যতবার রোগী আসবেন, ততবারই তার এই চিকিৎসা সম্পর্কিত সব তথ্য অ্যাপে যুক্ত করা হয়।

 

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এনসিডি কর্নারে দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স মনিকা আক্তার বলেন, আমরা ম্যানুয়ালি রেজিস্টার করার পর ‘সিম্পল অ্যাপে’ যুক্ত করি। এরপর রোগীকে আমরা মেডিকেশন দিই। দিনে ৩০ মিনিট করে জোরে হাঁটা, তামাক জাতীয় কিছু না খাওয়া, পাতে প্রতিদিন গড়ে এক চামচ করে লবণ খাওয়া, চিনি না খাওয়ার পরামর্শ দিই। রোগীকে প্রথম রেজিস্ট্রেশের ২৮ দিন পর আবার আসতে বলি। যখন রোগীর কাছে একটা-দুইটা মেডিকেশন থাকে, এভাবে আমরা রোগীকে প্রতি মাসে রিফিল করে দিই। এটা হচ্ছে রোগী যদি সরাসরি হেলথ কমপ্লেক্সে আসেন। এটা সেকেন্ডারি।

 

প্রাথমিক লেভেলে অর্থাৎ কমিউনিটি ক্লিনিকে আসা রোগীর প্রেসার মেপে বেশি পেলে তারা উপজেলায় রেফার করেন। এখানে আসলে প্রসেসটা সেরকমই থাকে।

 

তিনি বলেন, মেডিকেশন দেয়ার দুই-তিন মাসে যদি প্রেসার কন্ট্রোলে না আসে, তাহলে আবার আমরা এনসিডি কর্নারের ডাক্তারের কাছে পাঠাই। চিকিৎসক যদি মনে করেন সেকেন্ডারি লেভেলে ওনার চিকিৎসা হবে না, তখন তিনি টার্সিয়ারি লেভেলে রেফার করেন। এভাবে আমরা তিনটা লেভেলে চিকিৎসা দিয়ে থাকি।

 

বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যবিষয়ক অলাভজনক সংস্থা রিজলভ টু সেভ লাইভসের সহযোগিতায় এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। রিজলভ টু সেভ লাইভসের সহযোগিতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডিসি এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন দ্বারা পরিচালিত উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিটি ইতোমধ্যে টাস্ক-শেয়ারিং এবং টিমভিত্তিক সেবা প্রদানের নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত করে সফলতার মুখ দেখছে।

 

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, প্রকল্পটিকে অনুকরণযোগ্য মডেল হিসেবে দেশব্যাপী সম্প্রসারণ করা গেলে উচ্চরক্তচাপের প্রকোপ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

 

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের এনএইচএফ-রিজলভ হাইপারটেনশন কন্ট্রোল প্রোগ্রামের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. শামীম জুবায়ের জানান, এই কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮ সালের অক্টোবরে। তখন রেজিস্টার্ড রোগী ছিল ১১ জন। ২০২০ সাল পর্যন্ত চলে চারটি উপজেলায়। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে আরো ৫০টি উপজেলায় এই কার্যক্রম বিস্তৃত করা হয়। এখন পর্যন্ত ৫৪টি উপজেলায় কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে সিলেট বিভাগে পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচআই) সহায়তায় গবেষণা এবং অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞার (প্রগতির জন্য জ্ঞান) মাধ্যমে মিডিয়া অ্যাডভোকেসির কাজ চলছে। বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেটের সদর উপজেলা ছাড়া অন্য সব উপজেলায় কার্যক্রম চালু রয়েছে।

 

১১ জন থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৫৮ জন রেজিস্ট্রেশন করেছেন। শুধু ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রেজিস্ট্রেশন করেছেন ৮ হাজার ৩০০ জন।

 

২০২১ সালের অক্টোবর রেজিস্টার ৪৪ হাজার ৬৫৬ জন রোগীর মধ্যে ৪৮ শতাংশের নিয়ন্ত্রণে ছিলো। ওষুধ খাওয়ার পরও ১৯ শতাংশের ছিলো অনিয়ন্ত্রিত। মিস ভিজিট অর্থাৎ অনিয়মিত ছিলো ৩৩ শতাংশ। ২০২২ সালের ৩ অক্টোবর পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন করেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৪১০ জন রোগী। যাদের মধ্যে ৫৯ শতাংশের উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, ১০ শতাংশের অনিয়ন্ত্রিত ও ৩১ শতাংশ অনিয়মিত। তারা নিয়মিত ওষুধ নেন না। কখনো আসেন আবার কখনো আসেন না। অনিয়মিত রোগীর সংখ্যা ২৬ হাজার ১৬ জন। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এক বছরে রেজিস্ট্রেশন রোগী বেড়েছে ৭৭ হাজার ৭৫৪ জন। নিয়ন্ত্রণ বেড়েছে ৯ শতাংশ, অনিয়মিত রোগীও কমেছে ২ শতাংশ।

 

তারা কেন আসেন না এ নিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে কয়েকটি কারণ জানা গেছে। তাদের বাড়ি থেকে এনসিডি কর্নার দূরে, যেতে সময় এবং টাকা বেশি লাগে, কর্নারে গিয়ে অপেক্ষা করা লাগে, একটা দিন চলে যায়, আবার মাঝে মাঝে ওষুধ না পেয়ে ফিরতে হয়। এই অনিয়মিত রোগীরা শারীরিক সমস্যা বেশি বোধ না করা পর্যন্ত এনসিডি কনারে আসেন না।

 

২০২২ সালের ৩ অক্টোবর পর্যন্ত সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় ৬ হাজার ৫৯ জন রেজিস্ট্রার রোগীর মধ্যে ৪৫ শতাংশের উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ছিল। অনিয়ন্ত্রিত ছিল ২১ শতাংশের এবং ৩৪ শতাংশ অনিয়মিত।

 

ফেঞ্চুগঞ্জে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত রেজিস্ট্রার রোগী ছিল ৪ হাজার ৮৯১ জন। এক বছর পর ২০২২ সালের মে মাসে এই রোগী দাঁড়ায় ৫ হাজার ৮১৭ জনে। এক বছরে রোগী বেড়েছে ৯২৬ জন।

 

২০২১ সালের মে মাসে কন্ট্রোলে ছিল ৩৪ শতাংশ। ২২ সালে কন্ট্রোল রেট গিয়ে দাঁড়ায় ৫৪ শতাংশে। কন্ট্রোল রেট বেড়েছে ২০ শতাংশ। ’২১ সালের মে মাসে অনিয়ন্ত্রিত ছিল ৩২ শতাংশ। ’২২ সালে অনিয়ন্ত্রিত রোগী দাঁড়িয়েছে ১৩ শতাংশে। অনিয়মিত ’২১ সালে ৩৪ শতাংশ ছিল, ’২২ সালে ৩৩ শতাংশ।

 

সিম্পল অ্যাপের মাধ্যমে এনসিডি কর্নারের কার্যক্রম মনিটরিং করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কখন কর্নারের কার্যক্রম শুরু হয়, কোন রোগীর কী অবস্থা তা তারা অ্যাপেই দেখতে পারেন। অ্যাপ থেকে দেখে ডা. শামীম জানান, ৩ অক্টোবর ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা এনসিডি কর্নার সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে কার্যক্রম শুরু করে।

 

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. কামরুজ্জামান বলেন, আউটডোরে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ জন রোগী আসেন। এনসিডি কর্নারে আসেন ৫০ থেকে ৬০ জন। গড়ে ২০ থেকে ৩০ জন আসেন উচ্চরক্তচাপ ও ডায়বেটিসের রোগী।

 

সিলেটের বিয়ানীবাজার ঘুঙ্গাদিয়া কমিউিনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মো. ছাইফুল আলম বলেন, আমাদের এখানে রোগী এলে আমরা প্রেসার মেপে বেশি পেলে উপজেলায় পাঠাই। এ দিন তিনি দুজন রোগীকে রেফার করেন। উপজেলা থেকে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে তার কাছে পাঠালে তিনি ওষুধ দেয়াসহ যাবতীয় ব্যবস্থা নেন।

 

সিলেটের ছোট দেশ কমিউনিটি ক্লিনিকেও এনসিডি কর্নার রয়েছে। এখান থেকেও রেজিস্ট্রেশন করা হয় না। কারো প্রেসার বেশি থাকলে তাকে উপজেলায় রেফার করা হয়। উপজেলার এনসিডি কর্নারে তাদের রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। তারপর সেখান থেকে তাদের ওষুধ দেয় এবং পরে ফলোআপের জন্য ছোটদেশ কমিউনিটি সেন্টারে যেতে বলা হয়। পরের মাসে ওই কমিউনিটি সেন্টার থেকে ওষুধ দেয়। ছোটদেশ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে যে রোগীরা ওষুধ নেন, তাদের ৭৩ শতাংশের উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে।

 

ডা. শামীম জুবায়ের বলেন, কমিউিনিটি ক্লিনিকে গেলে এই কন্ট্রোল রেট বেড়ে যাচ্ছে। আমরা দেখেছি এখানে অনিয়ন্ত্রিত রোগী মাত্র ৪ শতাংশ।

 

তিনি জানান, প্রতিটি এনসিডি কর্নারে ফলোআপে এবং নতুন মিলে প্রতিদিন অন্তত ৬০ থেকে ৮০ জন রোগী আসে। এর মধ্যে ১০ জন নতুন। ফেঞ্চুগঞ্জে এ দিন নতুন রেজিস্ট্রেশন করেছে ১০ জন। তিনি বলেন, প্রতিদিন সিলেটের চার উপজেলার প্রতি উপজেলায় ১০ থেকে ১২ জন নতুন রোগী রেজিস্ট্রেশন করেন।

 

রোগীরা মাঝে মাঝে ওষুধ পান এ প্রসঙ্গে ডা. শামীম বলেন, ওষুধ না পাওয়া কিন্তু সরকারের অসহযোগিতা নয়। এই পরিমাণ ওষুধ ইডিসিএল থেকে যখন আসে তখন ইডিসিএলের ডিস্ট্রিবিউশ প্রক্রিয়ায় লম্বা একটা গ্যাপ পড়ে, অর্থাৎ দুই-তিন মাস গ্যাপ পড়ে। ইডসিএল যদি মনোযোগী হয় এবং তাদের যদি ফোকাস থাকে, এনসিসিএর এই ওষুধগুলো নিয়মিত গ্রাফ ছাড়া প্রতিটা উপজেলায় পৌঁছায়, তাহলে এই কন্ট্রোল রেট এবং মিস ভিজিট অনেকটা কমে আসবে।

 

তিনি বলেন, এই মডেলে রোগীকে বসার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। প্রতিটা রোগীর ব্লাড প্রেসার মাপা কিন্তু একজন মেডিকেল অফিসারের পক্ষে সম্ভব নয়। পিক আওয়ারে দুই থেকে আড়াইশ রোগী যখন আসে। তার জন্য একটা অটোমেটেড ব্লাড প্রেসার মেশিনের ব্যবস্থা করা। সরকার এটা ব্যবস্থা করছে। খুবই আশার কথা যে, এনসিডিসি নতুন যে ৮০টি উপজেলায় কার্যক্রম শুরু করবে, সেখানে এই অটোমেটেড ব্লাড প্রেসারের মেশিনটা দিচ্ছি। পাশাপাশি ডায়বেটিসের ওষুধ এবং ডায়বেটিস মাপার জন্য যে স্কিপ এবং ব্লাড প্রেসার এগুলো নিশ্চিত করা। এগুলো জরুরি।

 

বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী যদি উপজেলায় আসেন, তাহলে উপজেলার সক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, এই পরিমাণ রোগী যদি প্রতি মাসে উপজেলায় আসেন, তাহলে এত রোগীর চাপ উপজেলা নিতে পারবে না। সরকারিভাবে আমরা যদি এ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারি, নিবন্ধিত ও নিয়ন্ত্রিত তাদের কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে যদি রিফিলিং করানো না যায়, তাহলে যেটা হবে আমাদের মিস ভিজিট এবং রোগীর যে আগ্রহ এটা কমে যাবে। অতিদরিদ্র রোগীর পক্ষে মাসে কিংবা দুই মাসে গিয়ে অনেক সময় ওষুধ কেনা সম্ভব হয় না বা উপজেলায় গিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব হয় না। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে যদি ওষুধ দেয়ার ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে অনেকভাবে তারা উপকৃত হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি

মন্তব্য

Beta version