-->

হার কমছে, স্বেচ্ছায় রক্তদাতা ৩০ শতাংশ

নিখিল মানখিন
হার কমছে, স্বেচ্ছায় রক্তদাতা ৩০ শতাংশ

ঢাকা: স্বেচ্ছায় রক্তদাতা ও মরণোত্তর চক্ষুদাতার সংখ্যা প্রত্যাশিত হারে বাড়ছে না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশে বছরে আট থেকে নয় লাখ ব্যাগ রক্তের চাহিদা থাকলেও রক্ত সংগ্রহ হয় ছয় থেকে সাড়ে ছয় লাখ ব্যাগ। ঘাটতি থাকে তিন লাখ ব্যাগের বেশি। এ ছাড়া সংগ্রহকৃত রক্তের মাত্র ৩০ শতাংশ আসে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের থেকে। দেশে জনসংখ্যার তুলনায় রক্তদাতার সংখ্যা এখনো নগণ্য। রক্তের অভাবের কারণে প্রতিবছর বহু রোগীর প্রাণ সংকটের মুখ পড়ে। আবার পেশাদার বিক্রেতাদের রক্তের বড় অংশই নেশাগ্রস্ত বা রোগে আক্রান্ত থাকে, যা অন্য মানুষের জীবনের জন্য বড় হুমকি বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

 

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সিরাজুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনায় আহত, ক্যান্সার বা অন্য কোনো জটিল রোগে আক্রান্তদের জন্য, অস্ত্রোপচার কিংবা সন্তান প্রসব অথবা থ্যালাসেমিয়ার মতো বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন হয়। এক ব্যাগ রক্ত দিতে সময় লাগে মাত্র ১০ থেকে ১২ মিনিট। এই অল্প সময়ে চাইলেই একজনের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সের মধ্যে শারীরিকভাবে সুস্থ নারী ও পুরুষ রক্ত দিতে সক্ষম। এ ক্ষেত্রে পুরুষের ওজন থাকতে হবে অন্তত ৪৮ কেজি এবং নারীর অন্তত ৪৫ কেজি। এ ছাড়া রক্তদানের সময় রক্তদাতার তাপমাত্রা ৯৯.৫ ফারেনহাইটের নিচে এবং নাড়ির গতি ৭০ থেকে ৯০-এর মধ্যে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকতে হবে। পুরুষদের ক্ষেত্রে রক্তের হিমোগ্লোবিন প্রতি ডেসিলিটারে ১৫ গ্রাম এবং নারীদের ক্ষেত্রে ১৪ গ্রাম হওয়া দরকার। রক্তদাতাকে অবশ্যই ভাইরাসজনিত রোগ, শ্বাসযন্ত্রের রোগ এবং চর্মরোগ মুক্ত থাকতে হবে। সাধারণত ৯০ দিন পর পর, অর্থাৎ তিন মাস পর পর রক্ত দেয়া যাবে। রক্ত দেয়ার সময় শরীর থেকে ২৫০-৩০০ মিলিগ্রাম আয়রন কমে যায়। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের শরীরে ৪ থেকে ৬ লিটার পরিমাণ রক্ত থাকে। প্রতিবার ৪৫০ মিলিলিটার রক্ত দেয়া হয়। এ কারণে রক্ত দিলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারেই নেই বলে জানান অধ্যাপক ডা. সিরাজুল ইসলাম।

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ ভোরের আকাশকে বলেন, মরণোত্তর চক্ষুদান হলো মৃত্যুর পর কর্নিয়া দান করার জন্য জীবিত অবস্থায় অঙ্গীকার করা। মৃতের চোখের কর্নিয়া সংগ্রহ করে অন্যজনের চোখে লাগানোর ইচ্ছা ও সম্মতিই ‘মরণোত্তর চক্ষুদান’ নামে পরিচিত। মৃত্যুর পরও মৃত ব্যক্তির বৈধ অভিভাবকরাও কর্নিয়া দান করতে পারেন। মারা যাওয়ার পর মৃত ব্যক্তির কর্নিয়া ৬ ঘণ্টার মধ্যে সংগ্রহ করতে হবে। কোথাও কোথাও ১২-২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেটা ঠিক নয়। ৬ ঘণ্টার মধ্যে কর্নিয়া সংগ্রহ না করলে কর্নিয়া সেলের সংখ্যা কমে যায়। কর্নিয়া হলো চোখের সামনের স্বচ্ছ অংশ, যার মাধ্যমে আলো চোখের মধ্যে প্রবেশ করে। কোনো কারণে কর্নিয়ায় ঘা হলে বা কর্নিয়া অস্বচ্ছ হয়ে গেলে ওই চোখে আলো প্রবেশ করতে পারে না। নষ্ট হয়ে যায় ওই চোখের দৃষ্টিশক্তি। এ অবস্থাকে বলা হয় কর্নিয়াজনিত অন্ধত্ব। চোখ হলো একজন মানুষের সর্বোচ্চ আশীর্বাদ এবং শ্রেষ্ঠ উপহার। দৃষ্টিশক্তি হারানো ব্যক্তি কর্মক্ষমতা হারিয়ে পরিবার তথা সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। চক্ষুদান ক্ষুদ্র মানব জীবনকে করে তোলে তাৎপর্যপূর্ণ।

 

স্বেচ্ছায় রক্তদানের বিষয়ে অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, হিমোগ্লোবিনের অভাব অথবা থ্যালাসেমিয়া রোগের কারণে অনেক মানুষ রক্তশূন্যতায় ভোগে। তখন তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন হয় অন্যের রক্ত। এই রক্ত যেহেতু ক্রয় করা যায় না, সেহেতু আপনার আমার রক্তদানের ওপরই নির্ভর করে তাদের বেঁচে থাকতে হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন হাসপাতাল বা ক্লিনিকে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসায় প্রচুর রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এখনও বাংলাদেশে রক্তের অভাবে মারা যায় অনেক রোগী। তবে আশার কথা এই যে, এখন তরুণ সমাজ রক্তদানে অনেকটাই এগিয়ে আসছে। রক্তদানের কিছু উপকারিতা রয়েছে। ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী যে কোনো সুস্থ মানুষ, যাদের ওজন ৪৫ কেজির বেশি, তারা প্রতি চার মাস পরপর রক্তদান করতে পারেন। চার মাস পরপর মানবদেহে নতুন রক্ত তৈরি হয় এবং রক্তকণিকাগুলো এমনিতেই মারা যায়। রক্তদানের মাধ্যমে একজন মুমূর্ষু মানুষকে বাঁচানোর মতো কাজে শরিক হতে পেরে নিজের মানসিক তৃপ্তি মেলে বলে জানান উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ।

 

এদিকে অভিযোগ রয়েছে, দেশের শতকরা ৮১ ভাগ রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র অনুমোদনহীন। রক্ত সংগ্রহের সময় বাধ্যতামূলক পাঁচটি পরিসঞ্চালন সংক্রমণ পরীক্ষা করা হয় না শতকরা ৫০ ভাগ কেন্দ্রে। রক্ত পরিসঞ্চালন কার্যক্রম তত্ত্বাবধানের কাজে নিয়োজিত লোকদের শতকরা ৭৪ ভাগ নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন বিষয়ে সম্যক জ্ঞান রাখেন না। এসব কেন্দ্র থেকে সরবরাহকৃত রক্ত গ্রহণে সব সময় ঝুঁকি রয়ে যায়। আশঙ্কা থাকে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার। বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। আর বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা ব্লাড ব্যাংকগুলোতে রক্ত পরিসঞ্চালন হয় এমন অধিকাংশ রক্তই মাদকসেবীদের বলে জানা গেছে।

 

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version