-->

করোনা ও ডেঙ্গুর জোটবদ্ধ আক্রমণ

নিখিল মানখিন
করোনা ও ডেঙ্গুর জোটবদ্ধ আক্রমণ

ঢাকা: হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা ও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। একই সময়ে করোনা এবং ডেঙ্গু পরিস্থিতির অব্যাহত অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এ দুই রোগের কিছু উপসর্গে মিল রয়েছে। রোগ দুটির মধ্যে কোনটিতে আক্রান্ত, তা প্রাথমিক পর্যায়ে বুঝতে পারছেন না রোগীরা। অনেক সময় ডেঙ্গু রোগীর প্রথমে করোনা টেস্ট এবং করোনা রোগীর প্রথমে ডেঙ্গু টেস্ট করানোর ঘটনাও ঘটছে। এতে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিতে সমস্যা হচ্ছে। করোনা ও ডেঙ্গু উপসর্গের প্রায় ৮০ শতাংশ রোগী হাসপাতালে যাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ও দৈনিক রোগী শনাক্তের হার যথাক্রমে ২৪ সেপ্টেম্বর ১৮৩ জন ও ১৩.১২ শতাংশ, ২৩ সেপ্টেম্বর ১৮৪ জন ও ১৪.১৩ শতাংশ, ২০ সেপ্টেম্বর ১২৮ জন ও ১২.৭৩ শতাংশ এবং ৩১ আগস্ট ১৪৩ জন ও ৫.২০ শতাংশ।

 

গতকাল রোববার বিকেল ৪টার আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সক্রিয় রোগীর ভিত্তিতে ৪৫তম এবং ক্রিটিক্যাল রোগীর বিবেচনায় ৯তম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ ওই সময়ে দেশে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ২৯ হাজার ২৫৩ এবং ক্রিটিক্যাল রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৩৩১।

 

চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগী বৃদ্ধিও বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ২২ সেপ্টেম্বর ১ হাজার ৫২৯, ২১ সেপ্টেম্বর ১ হাজার ৫৫৭, ১৫ সেপ্টেম্বর ১ হাজার ৩১১, ১ সেপ্টেম্বর ৭৮১, ১৪ আগস্ট ৩৮৭ এবং ৩১ জুলাই ৩৮১। অর্থাৎ ধারাবাহিকভাবে হাসপাতালমুখী ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

 

এদিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, দ্রুত অবনতি ঘটছে দেশের করোনা এবং ডেঙ্গু পরিস্থিতির। করোনা মানুষের রক্তে যে সমস্যা তৈরি করে, তেমনি রক্তে একই রকম সমস্যা তৈরি করে ডেঙ্গু। আর একই ব্যক্তি করোনা ও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে ওই রোগীর মৃত্যুঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। রাজধানীতেই করোনা ও ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। তাই করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

 

করোনা ও ডেঙ্গু : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ ভোরের আকাশকে বলেন, ডেঙ্গু ও করোনা দুটিতেই আক্রান্ত হওয়ার রোগী পাওয়া যাচ্ছে। জ্বর হলেই প্রথমে করোনা ও পরে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে উদাসীনতা ও খামখেয়ালিপনা করলে মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে।

 

তিনি বলেন, করোনা ও ডেঙ্গু- এ দুটির উপসর্গ প্রায় একই। তবে কিছু কিছু পার্থক্য আছে। করোনার উপসর্গ হলো- জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, শরীরে ব্যথা ও ঘ্রাণ না পাওয়া। আর ডেঙ্গুর লক্ষণ হলো- ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি শরীর কাপানো জ্বর, চোখের পাতার পেছনে ব্যথা ও ব্যাপক পেইন এবং গিরায় গিরায় ব্যথা। শরীরে র‌্যাশও উঠতে পারে। কোনো কোনো ডেঙ্গু রোগী আক্রান্ত হওয়ার চার দিন পর প্লাটিলেট কমে গিয়ে নাক, দাঁত, পায়খানা ও বমির মাধ্যমে রক্তক্ষরণ হতে পারে। করোনা রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ওষুধ চিকিৎসাসেবায় প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু ডেঙ্গু রোগীর শুধু প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে হবে, এসপিরিন জাতীয় ওষুধসহ কোনো ধরনের ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করা যাবে না। তবে সেকেন্ডারি ইনফেকশন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হতে পারে। এ ছাড়া ডেঙ্গু রোগীর বেশি করে ওরস্যালাইন, ডাব ও অতিরিক্ত পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আরো বলেন, এডিস মশার কারণে ডেঙ্গুজ¦র হয়। এডিস মশা দিনে কামড়ায়। শীত না আসা পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থাকতে পারে। করোনা ও ডেঙ্গু উপসর্গের প্রায় ৮০ শতাংশ রোগী হাসপাতালে যাচ্ছেন না বলে জানান তিনি।

আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, ডেঙ্গু ও করোনার উপসর্গ প্রায় একই। তবে কিছু পার্থক্য আছে। দুটির ক্ষেত্রেই জ¦র, গলাব্যথা, সর্দি, কাশি এবং স্বাদ না থাকা হতে পারে। করোনার ক্ষেত্রে এসব লক্ষণের সঙ্গে নাকে ঘ্রাণ পায় না এবং কারো কারো পাতলা পায়খানা হয়। এছাড়া করোনার ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা হতে পারে, যেটি ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে হয় না। ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চার-পাঁচ দিন পরে শরীরে লাল অ্যালার্জির মতো র‌্যাশ হতে পারে। তখন রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা কমে যেতে পারে।

 

তিনি বলেন, একজন রোগীর ডেঙ্গু ও করোনা একসঙ্গে হচ্ছে। তাই জ্বর হলেই করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গুর পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। নিজের জীবন রক্ষার স্বার্থে দুটি পরীক্ষা করাতে হবে।

 

ভাইরোলজিস্ট ডা. নজরুল ইসলাম বলছেন, যদি একইসঙ্গে ডেঙ্গুর কারণে রক্তে প্লাটিলেট স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি কমে যায় এবং কোভিডের কারণে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রাও ৯০-এর নিচে নেমে যায়, তাহলে বিষয়টি বিপজ্জনক। তখন একইসঙ্গে প্লাটিলেট দিতে হবে, অক্সিজেন দিতে হবে। চিকিৎসকরা এর সিদ্ধান্ত নেবেন। আবার করোনার কারণে যদি ফুসফুস বেশি আক্রান্ত হয়, হৃদযন্ত্রের আর্টারি আক্রান্ত হয়, তখন খুবই দুশ্চিন্তার বিষয়। এমন রোগীদের ফেরানো মুশকিল।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version