-->

ডেঙ্গুতে দিনে ২৯৭ জন করে হাসপাতালে, সেপ্টেম্বরে ২৯ জনের মৃত্যু

আরিফ সাওন
ডেঙ্গুতে দিনে ২৯৭ জন করে হাসপাতালে, সেপ্টেম্বরে  ২৯ জনের মৃত্যু

ঢাকা: ডেঙ্গুতে একদিনে আরো দুইজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ নিয়ে চলতি মাসে ২৩ দিনে ২৯ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে অধিদপ্তর। চলতি বছরে মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের।

শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে খোজ নিয়ে এই তথ্য জানা যায়। জানা গেছে, চলতি বছরে ১৩ হাজার জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এরমধ্যে ঢাকায় ১০ হাজার ১০৯ জন এবং ঢাকার বাইরে ২ হাজার ৯১২ জন। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১১ হাজার ৪৩৬ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারী হাসপাতালে ১ হাজার ৫১৪ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এরমধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ১ হাজার ১৭৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ৩৪০ জন।

জানুয়ারিতে দেশে ১২৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২০ জন, মার্চে ২০ জন, এপ্রিলে ২৩ জন, মে মাসে ১৬৩ জন, জুনে ৭৩৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। এমাসে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। জুন মাসের চেয়ে দ্বিগুনের বেশি হাসপাতালে ভর্তি হয় জুলাই মাসে। এমাসে ভর্তি হয় ১ হাজার ৫৭১ জন। মৃত্যু হয় ৯ জনের। জুলাইয়ের তুলনায় আরো অন্তত আড়াইগুন ভর্তি হয় আগস্টে; ৩ হাজার ৫২১ জন। এ মাসে মৃত্যু হয় ১১ জনের। আগস্টে দিনে অন্তত ১১৪ জন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়।

সেপ্টেম্বরে আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ২৩ দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬ হাজার ৮১৯ জন। দিনে অন্তত ২৯৭ জন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ২৩ দিনে মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের। ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে কক্সবাজারে; ১৮ জন। কক্সবাজারসহ চট্টগ্রাম বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। ঢাকায় মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। এছাড়া বরিশালে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮ টা পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু নিয়ে ১২৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ঢাকায় ৯২ জন এবং ঢাকার বাইরে ৩৩ জন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডাক্তার এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গু হচ্ছে ভাইরাস জ্বর। জ্বর থাকবে। ডেঙ্গুর সঙ্গে অন্য লক্ষণ যেগুলো থাকে, তাহলো প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা, শরীরে ব্যথা, গিরায় গিরায় ব্যথা, এতো ব্যথা করে এটার নাম কিন্তু ব্যাকবোন ফিভার যাকে বলে হাড়ভাঙ্গা জ্বর। বর্তমানে যেহেতু ডেঙ্গু মৌসুম এগুলো হলেই আমরা ধরে নেই যে ডেঙ্গু। জ্বর ১০৪-৫ উঠে যায়। তিন থেকে পাঁচ দিন জ্বর থাকে, সাথে বমি পাতলা পায়খানা হতে পারে। জ্বর কমার পরে দেখা যায় রক্তের প্লাটিলেট কমে যায়। এক লাখের নিচে আসলেই ভয়। তখন রক্তক্ষরণের ঝুঁকি থাকে। অধিকাংশ রোগীরই প্লাটিলেট দেওয়ার দরকার হয়না। ৬-৭ দিনের মাথায় দেখা যায় প্লাটিলেট বাড়তে থাকে। ডেঙ্গু হলে ভয় পাওয়ার দরকার নেই। রক্ত দিতেই হবে এমন নয়। চিকিৎসক যদি মনে করেন দেবেন। হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বাসায় থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে ৯০% ডেঙ্গু রোগীই ভাল হয়ে যান।

ডেঙ্গুর লক্ষণে কিছু পরিবর্তন এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু কিছু রোগী পাচ্ছি যাদের খুব বেশি জ্বর হচ্ছে না। তাপমাত্রা খুব একটা বেশি না। অল্প জ্বর। প্রচণ্ড ব্যথাও হচ্ছে না। যেহেতু ডেঙ্গুর লক্ষণ চলছে, তাই জ্বর-মাথা ব্যথা থাকলে ডেঙ্গুর টেস্ট করানোর পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালেও ভয়াবহ অবস্থা ছিলো। এবারো এপ্রিল মে থেকে শুরু হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত চলছে। সেপ্টেম্বরে কিছু বেড়ে গেছে। এই মশায় দিনে কামড়ায়। তাই দিনের বেলায় মশার কামড় থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারলে, ডেঙ্গু থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব বলে জানান তিনি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, মশার প্রজনন স্থল ধ্বংশ করতে হবে। ঘরে ফুলের টবে পানি যাতে জমে না থাকে, বাসা বাড়ির আশপাশে পানি যাতে জমে না থাকে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version