-->

ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে সারাদেশে

নিখিল মানখিন
ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে সারাদেশে

সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ২৩টি জেলায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং চলতি বছরে ২১ সেপ্টেম্বর মোট ৫০টি জেলায় বিস্তার করেছে ডেঙ্গু। চলতি মাসের ২১ দিনে গড়ে ঘণ্টায় প্রায় ১৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত এবং গড়ে দৈনিক একজনের বেশি ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১২৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২০ জন, মার্চে ২০ জন, এপ্রিলে ২৩ জন ও মে মাসে ১৬৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। জুন মাসে বছরের প্রথম একজন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু ঘটে। পরে ধারাবাহিকভাবে অবনতি ঘটতে থাকে দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির। ডেঙ্গুজ¦রে আক্রান্ত হয়ে শনাক্তকৃত ডেঙ্গু রোগী ও মৃতের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে জুলাইয়ে ১৫৭১ জন ও ৯ জন, আগস্টে ৩৫২১ জন ও ১১ জন এবং সেপ্টেম্বরে (২১ তারিখ পর্যন্ত) ৬২৫৭ জন ও ২৪ জন।

বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরো জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন নতুন ৪৩১ জন ডেঙ্গু রোগী এবং মারা গেছেন একজন। আগের দিন ভর্তি হয়েছিলেন ৪৩৮ জন। চলতি বছরে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট মারা গেছেন ৪৬ জন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৪৩১ জনের মধ্যে ৩২৮ জন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১০৩ জন। এ নিয়ে বর্তমানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ১ হাজার ৫৫৭ জন ভর্তি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৫০টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১ হাজার ১৯০ জন। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৩৬৭ জন।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরে ১ জানুয়ারি থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট ১২ হাজার ৪৩৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ১০ হাজার ৮৩৫ জন। এ সময়ে ঢাকায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯ হাজার ৭১১ জন ও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮ হাজার ৫০০ জন। ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৭২৭ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ৩৩৬ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সারা দেশে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই সরকারের। এ বছর ৫০টি জেলায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ ডেঙ্গু রোগীর যে হিসাব দিচ্ছে, বাস্তবে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি। দুই দশকের বেশি সময় ধরে ডেঙ্গু বাংলাদেশে বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে আছে। ২০০০ সালের পর থেকে প্রতিবছর বহু মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে, মারাও যাচ্ছে। করোনা মহামারি শুরুর বছর ২০২০ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কম ছিল। কিন্তু গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৮ হাজার ৪২৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর মধ্যে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়। করোনা মহামারি শুরুর আগে ২০১৯ সালে এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিল। চলতি বছরও বহু মানুষ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। বর্তমানে একযোগে ডেঙ্গু ও করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এই দুটি রোগের বেশ কয়েকটি উপসর্গের মিল থাকায় বিপাকে পড়ছেন অনেক রোগী। অনেক সময় রোগীকে করোনা ও ডেঙ্গুর টেস্ট করাতে হচ্ছে। তাই সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

ডেঙ্গুর প্রকোপ রোধে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ ভোরের আকাশকে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে দেশে সারা বছরই ডেঙ্গুর প্রকোপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বর্তমানে ডেঙ্গুর মৌসুম চলছে। মে-জুন থেকে শুরু করে শীতের আগ পর্যন্ত দেশে এর প্রাদুর্ভাব বাড়ে। এবার বাড়ার কারণ বৃষ্টিটা ঠিক মতো হচ্ছে না। মাঝে মাঝে হচ্ছে, যা মশার প্রজননে সহায়তা করছে। মশা সৃষ্টির শুরু থেকেই ছিল এবং থাকবে। এটিকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব না। আর মশা থাকলে ডেঙ্গুও থাকবে। তবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্যোগ নিয়েছে। তবে আরো উদ্যোগ নেয়া দরকার। সতর্ক হলে রোগীর সংখ্যা কমানো সম্ভব।

প্রখ্যাত ভাইরোলজিস্ট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, সারাদেশে বিস্তারলাভ করছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত রোগ। এটি বাড়ার কারণ হলো মশা বেড়ে গেছে। অর্থাৎ মশা বাড়ার কারণগুলোই ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ার কারণ। সাম্প্রতিক সময়ে থেমে থেমে বৃষ্টি বেশি হচ্ছে। এটি যদি থেকে যায়, তাহলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ার সম্ভাবনা আছে। একটানা যদি অনেক বৃষ্টি হয়, তাহলে বাড়বে না। কিন্তু থেমে থেমে বৃষ্টি হলে তা বাড়বে। কারণ এতে অল্প পানি জমে। আর এতে মশার প্রজনন বৃদ্ধি পায়।

মন্তব্য

Beta version