-->
করোনা পরিস্থিতি

ধারাবাহিক অবনতিতে টনক নড়েছে সরকারের

নিখিল মানখিন
ধারাবাহিক অবনতিতে টনক নড়েছে সরকারের

অবশেষে দেশের করোনা পরিস্থিতির ধারাবাহিক অবনতিতে টনক নড়েছে সরকারের। উদ্যোগ নিয়েছে নজরদারি বাড়ানোর। ইতোমধ্যে টিকা গ্রহণ এবং স্বাস্থ্যবিধি পালনের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। আর গত শনিবার রাতে সর্বক্ষেত্রে মাস্ক পরাসহ পাঁচটি সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। কিন্তু বিগত সময়ে কয়েক দফা জারি হওয়া সরকারি পরামর্শ এবং নির্দেশনাগুলো কার্যকর না হওয়ায় দেশে বিরাজ করছে করোনাময় অবস্থা।

গতকাল রোববার বিকেল ৪টায় আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘ওয়ার্ল্ডোমিটারের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বের দুই শতাধিক দেশের মধ্যে বিদ্যমান ক্রিটিক্যাল করোনা রোগী সংখ্যার বিবেচনায় অবনতি হয়ে বাংলাদেশ ১৩তম থেকে নবম স্থানে এবং সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যার ভিত্তিতে ৫১তম থেকে ৪৭তম স্থানে এসেছে। করোনায় মোট আক্রান্ত বিবেচনায়ও বাংলাদেশের অবনতি অব্যাহত রয়েছে। ৪৯তম স্থান থেকে সামনে এগিয়ে বর্তমানে ৪৫তম স্থানে পৌঁছেছে। অর্থাৎ স্থান যতই সামনের দিকে এগিয়ে যাবে, ততই অবনতি ঘটবে। তবে করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার বিবেচনায় এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে দেশ অনেক ধাপ এগিয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। করোনা টেস্ট করানোর নমুনা সংখ্যার বিবেচনায় পিছিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৪২তম থেকে ৫১তম স্থানে চলে গেছে বলে জানিয়েছে ওয়ার্ল্ডোমিটার।

 

* সর্বক্ষেত্রে মাস্ক পরাসহ ৫ সুপারিশ
* অবস্থার অবনতিতে ১৩তম থেকে নবম স্থানে
* ১৩ শতাংশে পৌঁছেছে শনাক্ত
* শেষ হয়ে যাচ্ছে করোনা টিকা
* সরকারি নির্দেশনাগুলোর কার্যকারিতা নেই

১৩ শতাংশে পৌঁছেছে শনাক্ত : গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় দৈনিক নতুন রোগী শনাক্তের হার ১৮ সেপ্টেম্বর ১২.৭১। এভাবে ১৭ সেপ্টেম্বর ৯.৬৬, ১৬ সেপ্টেম্বর ১০.৮৭, ১৫ সেপ্টেম্বর ৮.৯০ ও ১৪ সেপ্টেম্বর ৮.৪১ শতাংশ ছিল।

শেষ হয়ে যাচ্ছে করোনা টিকা : গত শনিবার রাজধানীর একটি একটি অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশে এখনো করোনা টিকার প্রথম ডোজ নেয়নি প্রায় ৩৩ লাখ মানুষ। এছাড়া দ্বিতীয় ডোজ নেয়নি প্রায় ৯৪ লাখ মানুষ। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে দেশব্যাপী করোনা টিকার বিশেষ ক্যাম্প শুরু হবে। প্রথম, দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ টিকার এ বিশেষ ক্যাম্পেইন কার্যক্রম চলবে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত। এরপর থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অনেক ভ্যাকসিন শেষ হয়ে গেছে, অনেক ভ্যাকসিনের মেয়াদ শেষ। ফলে অক্টোবরের পর আমাদের কাছে হয়তো প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের জন্য ভ্যাকসিন থাকবে না। তাই অক্টোবরের পর টিকা নাও পেতে পারেন।

টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশ : গত শনিবার রাতে সর্বক্ষেত্রে মাস্ক পরাসহ পাঁচটি সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। শনিবার রাতে কমিটির ভার্চুয়াল সভা থেকে এসব সুপারিশ করা হয় বলে কমিটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

আবদ্ধ স্থানে সভা না করা, দাপ্তরিক সভাগুলো যথাসম্ভব অনলাইনে করার পাশাপাশি অপরিহার্য সামাজিক অনুষ্ঠান বা সভায় মাস্ক পরতে বলা হয়েছে কমিটির সুপারিশে। এছাড়া সর্বক্ষেত্রে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতেও জনগণকে উৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছে। করোনার টিকার প্রথম, দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ যারা নেননি, তাদের টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে করোনা পরীক্ষার ব্যয় কমানোর পদক্ষেপ নিতে বলেছে কমিটি।

সরকারি নির্দেশনাগুলোর কার্যকারিতা নেই : দেশে গত তিন সপ্তাহ ধরে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। অনেক আগেই উঠে গেছে সরকারি বিধিনিষেধ ও নির্দেশনাগুলোর কার্যকারিতা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মানা, না মানার বিষয়টি এখন নির্ভর করছে মানুষের সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার ওপর। স্বাস্থ্যবিধি পালনে কাউকে কিছু বলার কেউ নেই। দেশে করোনাময় স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। করোনা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে সরকারি মনিটরিং সচল রাখা উচিত বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক, ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ ভোরের আকাশকে বলেন, বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বিশ্বের অনেকে দেশে পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বিশ্বে এখনো করোনায় দৈনিক ১ হাজার থেকে ২ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটছে। তাই করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে অবহেলা করা ঠিক হবে না। স্বাস্থ্যবিধি মানা, না মানার বিষয়টি সাধারণ মানুষের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে যাবে না। সরকারকেই এ বিষয়ে নজর রাখতে হবে। করোনা সংক্রমণের আগের অবস্থায় চলে গেছে দেশের মানুষের চলাফেরা। একদিকে নেই সরকারি নির্দেশনা; অন্যদিকে করোনার ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের বিষয়টি ভুলে যেতে বসেছে মানুষ। স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। এমন পরিস্থিতিতে সংক্রমণের হার হঠাৎ বেড়ে গেলে দেশ বড় বিপদে পড়বে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।

মন্তব্য

Beta version