-->

এবার যথাসময়েই নতুন বই পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা

ভোরের আকাশ ডেস্ক
এবার যথাসময়েই নতুন বই পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা

এবার যথাসময়েই নতুন বই পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের হাতে সময়মতো নতুন বই তুলে দেয়া নিয়ে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল গত বছর। কাগজ আমদানি ও মান নিয়েও ক্ষোভ ছিল প্রেস মালিক-শিক্ষার্থীদের। বই বিতরণ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় ছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তবে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের বই পৌঁছে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে সংস্থাটি।

 

এনসিটিবির তথ্যমতে, আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকের ৯ কোটি বইয়ের চাহিদা রয়েছে। এরই মধ্যে প্রাথমিকের বই ছাপানো প্রায় শেষ। সেগুলো উপজেলায় পাঠানোও হয়েছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সব বই ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ছাপা শেষ হবে। অষ্টম শ্রেণির বইয়ের পান্ডুলিপি প্রস্তুত। প্রেসে গেলে নভেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে কাজ শেষ হবে। নবম শ্রেণির বইয়ের কাজ এখনো বাকি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পার্সেজ কমিটির মিটিং হলে পান্ডুলিপি দ্রুত প্রেসে পৌঁছে যাবে। বই পেতে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ লাগতে পারে।

 

সরেজমিন প্রেসপাড়া ঘুরে জানা যায়, সামনে নির্বাচন। তাই এর আগেই জেলা-উপজেলায় বই পৌঁছে দেয়ার জন্য রাত-দিন কাজ চলছে প্রেসগুলোতে। মুদ্রণ শেষ হলেই বাঁধাইয়ের কাজে লেগে পড়ছেন কর্মীরা।

 

এবছর খুব গুরুত্বের সঙ্গে বইয়ের তদারকি করছি। গত বছর কাগজের বাজার অস্থিতিশীল ও প্রেস মালিকদের কিছু হেয়ালির কারণে বই পেতে বিলম্ব হয়েছিল। এবার তেমনটি হওয়ার আশঙ্কা নেই। এবার কাগজের দামও স্থিতিশীল। আশা করি সঠিক সময়ে বই পৌঁছাবে।

 

এনসিটিবির চেয়ারম্যান ফরহাদুল ইসলাম এনসিটিবি সূত্র জানায়, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ধরা হয়েছে তিন কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ জন। তাদের জন্য বই ছাপা হচ্ছে ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭ কপি। নতুন কারিকুলামের কারণে প্রতি ক্লাসে ১০টি করে বই হওয়ায় এবার কম ছাপানো হচ্ছে তিন কোটি বই।

 

রাজধানীর মাতুয়াইল প্রেসপাড়া ঘুরে দেখা যায়, প্রেসে প্রেসে চলছে বোর্ড বই ছাপানোর কাজ। ছাপানোর সঙ্গে সঙ্গে বাঁধাইকর্মীরা বই বাঁধাই করে সারি সারি করে সাজিয়ে রাখছেন। ছাপার কাজে প্রস্তুত বড় বড় কাগজের রোল। এনসিটিবির তদারকিতে দ্রুত কাজ শেষ করছেন ছাপাখানার মালিকরা। কাগজের বাজার তুলনামূলক স্থিতিশীল হওয়ায় এবছর কাগজ নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। তবে নিম্ন মানের কাগজ ব্যবহারের শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে মুদ্রণ সমিতি।

 

আনমন প্রেসের বাঁধাইকর্মী মাসুদ বলেন, ‘অষ্টম শ্রেণির বইয়ের চারটি প্যাকেজের টেন্ডার হয়েছে, কিন্তু এনসিটিবি থেকে এখনো পান্ডুলিপি পাঠায়নি। তারা যখন পাঠাবে আমরা কাজ করে দ্রুত জমা দেব। অনেক সময় তারা প্রেসে পাঠানোর পরে ভুল থাকে। তখন সংশোধন করতে ফেরত নিয়ে যায়। এভাবে মাঝে মধ্যে পৌঁছাতে দেরি হয়।’

 

নবম শ্রেণির বই সময়মতো পাওয়া নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন রেদোয়ানি প্রেসের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘নবম শ্রেণির বইয়ের কোনো কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। দেরিতে শুরু হলে বইও দেরিতে যাবে। ছোট প্রেসগুলো শর্ত পূরণ করলেও কাজ কম পায়। কিন্তু বড় প্রেসগুলো বেশি কাজ পেলেও তারা যথাসময়ে শেষ করতে পারে না।’

 

মুদ্রণ মালিক সমিতির সভাপতি রূপালী প্রিন্টার্স অ্যান্ড ম্যাগাজিনের স্বত্বাধিকারী শহিদ সেরনিয়াবাত বলেন, ‘এবছর বই সময় মতো পৌঁছাবে। গত বছরের মতো বিলম্ব হবে না। প্রেসগুলো ব্যস্ত। কিন্তু নবম শ্রেণির বই নিয়ে কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। এই বই সময়মতো পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ।’ তিনি আরো বলেন, ‘সময় মতো পেলেও বইয়ের মান নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এনসিটিবি থেকে নির্দেশনা দেয়া থাকলেও অনেকে সেটি মানছেন না। আমি নাম বলবো না, অনেক প্রেসে নিউজপ্রিন্টে বই ছাপানো চলছে। এসব বই কমাস টিকবে জানি না। এনসিটিবির উচিত এসব তদারকি করা।’

 

জনতা প্রেসের স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম কাজল বলেন, ‘আমরা প্রাইমারি স্কুলের যে বইয়ের দায়িত্ব পেয়েছি, সেটার কাজ শেষ। তবে তৃতীয় শ্রেণির খ্রিস্টান ধর্ম ও শিক্ষা এবং হিন্দুধর্মের বই সংশোধনের জন্য নিয়ে গেছে। সপ্তম শ্রেণির তিনটি প্যাকেজ পেয়েছি (এক প্যাকেজে চার লাখ বই থাকে)। সেগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করে পাঠিয়ে দেব।’

 

নবম শ্রেণির বইয়ের কোনো কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। দেরিতে শুরু হলে বইও দেরিতে যাবে। ছোট প্রেসগুলো শর্ত পূরণ করলেও কাজ কম পায়। কিন্তু বড় প্রেসগুলো বেশি কাজ পেলেও তারা যথাসময়ে শেষ করতে পারে না। রেদোয়ানি প্রেসের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম কাগজের মানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কাগজের মান নিশ্চিতে বোর্ড প্রেসগুলোকে মনিটরিংয়ে রেখেছে। প্রেসমালিকরাও চাপে আছেন। বাকিটা বই হাতে পাওয়ার পর বোঝা যাবে।’

 

এনসিটিবির শিক্ষাক্রম সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ‘গত বছর কাগজ পাওয়া যায়নি, বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে বই দিতে বিলম্ব হয়। এবছর এসব সমস্যা পোহাতে হয়নি। দাম বেশি হলেও বাজারে কাগজ রয়েছে। এবছর সময় মতো বই পৌঁছে দেয়া হবে। তবে নতুন কারিকুলামের কারণে এবার অষ্টম ও নবম শ্রেণির বই প্রস্তুত করতে দেরি হয়েছে। পার্সেজ কমিটির পর প্রেসে চলে যাবে আগামী সপ্তাহের মধ্যে।’

 

সার্বিক বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘এবছর খুব গুরুত্বের সঙ্গে বইয়ের তদারকি করছি। গত বছর কাগজের বাজার অস্থিতিশীল ও প্রেস মালিকদের কিছু হেয়ালির কারণে বই পেতে বিলম্ব হয়েছিল। এবার তেমনটি হওয়ার আশঙ্কা নেই। এবছর আমি নিজেই ব্যাংকে বলে পেপার মিল মালিকদের লোন পেতে সাহায্য করেছি যেন সহজে কাগজ আমদানি করতে পারে। এবার কাগজের দামও স্থিতিশীল। আশা করি সঠিক সময়ে বই পৌঁছাবে।’

 

গত বছর কাগজ পাওয়া যায়নি, বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে বই দিতে বিলম্ব হয়। এবছর এসব সমস্যা পোহাতে হয়নি। দাম বেশি হলেও বাজারে কাগজ রয়েছে। এবছর সময়মতো বই পৌঁছে দেয়া হবে। এনসিটিবির শিক্ষাক্রম সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামান তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রাইমারির বইয়ের কাজ প্রায় শেষ। নভেম্বরের মধ্যেই পৌঁছে যাবে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বইয়ের কাজও প্রায় শেষ। নতুন কারিকুলামের কারণে সমাজবিজ্ঞানের সিলেবাস নিয়ে একটু সমস্যা। দ্রুত কাজ শেষ হবে। নবম শ্রেণির বই নিয়ে একটু শঙ্কা, কারণ বইটি লিখতে দেরি হয়েছে। অর্থমন্ত্রী অসুস্থ হওয়ায় পার্সেজ কমিটির মিটিং হয়নি। সেখানে চূড়ান্ত হলে আমরা পান্ডুলিপি প্রেসে পাঠিয়ে দেব।’

 

জানা যায়, এবছর চারটি শ্রেণিতেই নতুন কারিকুলামের পাঠ্যবই পাবে শিক্ষার্থীরা। চলতি বছর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলামের বই দেয়া হয়েছে। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে আরো দুই শ্রেণিতে অর্থাৎ অষ্টম ও নবম শ্রেণিতেও নতুন কারিকুলামের বই মুদ্রণ করা হচ্ছে। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে দশম শ্রেণির নতুন কারিকুলামে বই তৈরি হবে।

 

২০১০ সাল থেকে সরকার বছরের শুরুতে সারাদেশের সব শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পাঠ্যবই দিয়ে আসছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে এনসিটিবি প্রতি বছর এ কাজ করে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version