-->
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস: আজ থেকে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস: আজ থেকে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেয়া হবে। একই সঙ্গে আজ মঙ্গলবার থেকে যথারীতি ক্লাস-পরীক্ষা চলবে। সোমবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এ ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার।

 

উপাচার্য বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর কতিপয় স্থানীয় লোকজন যেভাবে চড়াও হয়েছিল, আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ বৃহৎ আকার ধারণ করলে আমরা ১২-১৩ মার্চ দুদিন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছিলাম। আমাদের শিক্ষার্থীরা শান্তিপ্রিয়।

 

তারা আমাদের কাছে কিছু দাবি জানিয়েছে। আমরা সে দাবিগুলো মেনে নিয়েছি। তারাও ঘরে ফিরে গেছে। এখন ক্যাম্পাস শান্ত রয়েছে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আবারো যথারীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা চলবে।’

 

এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো নিয়ে আমার প্রশাসন কাজ করছে। সবচেয়ে বড় দাবি হলো শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করা। আমাদের দশতলা করে দুটি ভবনের কাজ চলমান। খুব শিগগির ভবনগুলোর কাজ শেষ হবে। এছাড়াও চারটি আবাসিক হল নির্মাণের জন্য আমরা ওপর মহলে আবেদন জানিয়েছি। আমরা এরই মধ্যে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছি।

 

এ কমিটি সব বিষয়ে খুঁটিয়ে দেখবে এবং আমাদের কাছে প্রতিবেদন দেবে। আমরা অজ্ঞাতপরিচয় ৫০০ জনের নামে মামলাও করেছি।’ এ সময় বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাও জারি করেন রাবি উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। ক্যাম্পাসে মাইকিং করে বহিরাগত প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে।

 

সন্ধ্যার পর থেকে কোনো বহিরাগত ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না। শিক্ষার্থীদের চলাচলের ক্ষেত্রেও তাদের আইডি কার্ড দেখাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিরিক্ত গেট থাকায় এমন সমস্যাগুলো সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা গেটের সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য কাজ করছি।’

 

শনিবার সন্ধ্যায় বাসের ভাড়া নিয়ে এক রাবি শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা কাটাকাটির জের ধরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর রাতভর দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। ব্যবসায়ীদের ইটপাটকেল এবং পুলিশের টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এদের মধ্যে শতাধিক শিক্ষার্থী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় এবার পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত রোববার রাতে নগরীর মতিহার থানা পুলিশের এসআই আমানত উল্লাহ বাদী হয়ে মামলাটি করেন বলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার বিভূতি ভূষণ ব্যানার্জি জানান। তিনি বলেন, মামলায় অজ্ঞাত ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

 

পুলিশ বক্স ও মোটরসাইকেলে আগুন এবং সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে এ মামলায়। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৪০০/৫০০ জনকে আসামি করে রাজশাহী মহানগরের মতিহার থানায় একটি মামলা করেন।

 

রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উদ্ভত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের কাছে যেসব দাবি উত্থাপন করেছে, সে বিষয়ে উপাচার্য সংবেদনশীল এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এরই মধ্যে স্থানীয় মতিহার থানায় এ ব্যাপারে একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলায় তসলিম আলী ওরফে পিটার (৪৫) নামে একজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানান মতিহার থানার ওসি হাফিজুর রহমান।

 

বাসযাত্রী এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের ভাড়া ও সিটে বসা নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেট সংলগ্ন এলাকায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত থেমে থেমে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ, হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

 

সংঘর্ষের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটের পাশে সীমানা প্রাচীর লাগোয়া বেশ কয়েকটি দোকানে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। কিছু দোকানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। আগুন দেয়া হয়েছে বিনোদপুর গেটসংলগ্ন পুলিশ বক্সেও। পুলিশের একটিসহ বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়া হয়।

 

চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সংঘর্ষের সময় ইট-পাটকেল, কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেটের আঘাতে প্রায় দুইশ শিক্ষার্থী আহত হন। এর মধ্যে ভোর পর্যন্ত দেড়শজন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নেন।

 

তাদের মধ্যে ৯২ জনকে ভর্তি করা হয়। একজন আইসিইউতে আছেন। এ ঘটনার জেরে রোববার দিনভর বিক্ষোভে উত্তাল ছিল ক্যাম্পাস। সোমবারও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং আশপাশের এলাকা থমথমে অবস্থা বিরাজ করেছে।

 

মহাসড়ক দিয়ে বাস-ট্রাকসহ বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। উপ-পুলিশ কমিশনার বিভূতি ভূষণ বলেন, ‘ছাত্রদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা হচ্ছে। তারা যদি আন্দোলনে না নামে তা হলে রাস্তা খুলে দেয়া হবে। তবে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে সতর্ক অবস্থানে আছে।’

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনা তদন্তে উপউপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীরকে প্রধান করে ইতোমধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

 

কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন সাবেক প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক তারিকুল হাসান এবং সহকারী প্রক্টর আরিফুর রহমান। প্রক্টর বলেন, ‘আহত ছাত্রদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়েছে। আন্দোলনকারী ছাত্রদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। তারা যেসব দাবি দিয়েছে, তা পালনের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। আর আন্দোলনে হওয়ার কথা নয়।’

 

এদিকে রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনের সংঘর্ষের ঘটনায় রোববার মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেদিন বিকেলে বিশ্ব বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম বাদী হয়ে নগরের মতিহার থানায় মামলাটি করেন। মামলায় বিনোদপুর এলাকার ৪০০ থেকে ৫০০ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

 

এ ঘটনায় মো. তসলিম আলী ওরফে পিটার নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি নগরের খোঁজাপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি একটি বাসের কাউন্টারের চেইনমাস্টার। গ্রেপ্তার তসলিম প্রথমে শিক্ষার্থীদের আঘাত করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। বিশ্ব বিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক আরিফুর রহমান থানায় মামলার এজাহার জমা দেন।

 

তিনি বলেন, বিশ্ব বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। বিকেলে তিনি (আরিফুর) এজাহারটি থানায় জমা দিয়েছেন। নগরের মতিহার থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান বলেন,বিশ্ব বিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

 

মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী আল-আমিন আকাশ গত শনিবার দুপুরে বগুড়া থেকে বাসে বিশ্ব বিদ্যালয়ে আসছিলেন। বাসের আসনে বসাকে কেন্দ্র করে বাসের তত্ত¡াবধায়কের (সুপারভাইজার) সঙ্গে আল-আমিনের বাগবিতন্ডা হয়।

 

বাসে থাকতে তিনি বিষয়টি মুঠোফোনে তার বন্ধুদের জানালে ক্যাম্পাস থেকে তার বন্ধুরা বিনোদপুর বাজারে অবস্থান নেন। সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে বাসটি বিনোদপুর বাজারে বিশ^বিদ্যালয়ের ফটকের সামনে পৌঁছালে আবার কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় বিনোদপুর বাজারের দোকানদার ও বাসের চেইনমাস্টার আল-আমিনের ওপর অতর্কিত হামলা করেন এবং তার বন্ধুরা ঠেকাতে গেলে তাদের মারধর করে গুরুতর জখম করেন।

 

এজাহারে আরো বলা হয়, সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সহকারী প্রক্টররা ঘটনাস্থলে গিয়ে উপস্থিত ছাত্রদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। সেখানে আধাঘণ্টা কথাবার্তা চলে। এ সুযোগে বিনোদপুর দোকান মালিকের সদস্য ও স্থানীয় অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জন দলবদ্ধ হয়ে দা, কাচি, লাঠি, রড, পাথর, ইট নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে বিশ্ব বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে ছাত্রদের ওপর হামলা করে।

 

ইট, লাঠি ও রামদার আঘাতে বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রকিব, মার্কেটিং বিভাগের একই বর্ষের আরিফ, তৃতীয় বর্ষের সাব্বিরসহ মোট ৮৬ শিক্ষার্থী আহত হয়ে বিশ্ব বিদ্যালয়ে চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হন। ভিসি ও প্রোভিসি আহত শিক্ষার্থীদের মেডিকেলের চিকিৎসাসহ দেখভাল করছেন।

 

এর আগে শনিবার বাস শ্রমিকদের সঙ্গে বচসাকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এদিন বগুড়া থেকে মোহাম্মদ পরিবহনের বাসে করে রাজশাহী আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী আলামিন আকাশ।

 

বাসে সিটে বসা এবং ভাড়াকে কেন্দ্র করে পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হন এবং স্থানীয় দোকানদারদের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে স্থানীয়রা একজোট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ধাওয়া করে। সেখান থেকেই ঘটনা আরো বিস্তৃত হয়।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version