-->
বইয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন নিম্ন মানের বই ছাপালেই শাস্তি

১৫ জানুয়ারির মধ্যে বই পাবে শতভাগ শিক্ষার্থী

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
১৫ জানুয়ারির মধ্যে বই পাবে শতভাগ শিক্ষার্থী

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: বছরের প্রথম দিন দেশে বই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম দিনেই বই পেয়েছে দেশের সব উপজেলার শিশুরা। তবে অনেকেই শতভাগ বই পায়নি। সংকট থাকার কারণে অর্ধেক বা তার কমসংখ্যক বই পেয়েছে কেউ কেউ। সরকারের পক্ষ থেকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সব শিশুদের হাতে শতভাগ বই তুলে দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে।

 

তবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) মনে করছে, এর আগেই তারা শতভাগ বই বিতরণ করতে সক্ষম হবে। তাদের দাবি, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে শতভাগ বই বিতরণ শেষ করা হবে।

 

জানা যায়, এবার কাগজ সংকটের কারণে সব বই ছাপা শেষ করা সম্ভব না হলেও প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি পাঠ্যবই ছাপা শেষ হয়েছে। এসব বই প্রতিটি স্কুলে পৌঁছানো হয়েছে। প্রথম দিনেই বিতরণ করা হয়েছে এসব বই। তবে ভিড় সামাল দেয়ার জন্য কিছু জায়গায় শিশুদের হাতে সব বই তুলে দেয়া যায়নি। একইভাবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কিছু শিক্ষার্থী উপস্থিত না থাকায় সেসব শিক্ষার্থীদের বই বিতরণ চলমান রয়েছে।

 

এদিকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ কিছু অঞ্চলে শতভাগ বই দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, ছাপার কাজ দেরিতে শুরু হওয়ায় প্রাথমিকের বই কিছুটা পিছিয়ে আছে। তবে অবশিষ্ট বইও ১০ জানুয়ারির মধ্যে সব উপজেলায় চলে যাবে।

 

আশা করছি, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে কোনো শিশু শতভাগ বই পেতে বাকি থাকবে না। যদিও মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, ৩১ জানুয়ারির মধ্যে শতভাগ বই বিতরণ শেষ করতে। কিন্তু আমরা ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এ কাজ শেষ করে দিতে পারব বলে আশাবাদী।

 

একই বিষয়ে কথা বললে নড়াইলের সীমানন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কল্যাণ কান্তি বিশ্বাস ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আমাদের এখানে বই উৎসব খুব ভালোভাবে পালিত হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল, প্রথম দিনে তারা সবাই বই পেয়েছে। তবে সংকট থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা একটি করে বই কম পেয়েছে। খুব শিগগির বাকি বইগুলো তাদের হাতে তুলে দেয়া হবে। বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে পেরে তারা যেমন খুশি, আমরাও খুশি’।

 

এদিকে বইয়ের মান নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন অনেক অভিভাবক। তাদের মতে, বই খুব নিম্ন মানের। এসব বইয়ের আয়ুষ্কাল ছয় মাসের বেশি হবে না। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান ফরহাদুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ অভিযোগ সত্য নয়। সমস্যার কারণে এবার কিছু বইয়ে ব্রাইটনেস কম আছে। কিন্তু এগুলো নিন্ম মানের তা বলা ঠিক হবে না। আর যদি কোনো প্রেস এ ধরনের বই দিয়ে থাকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

বছরের প্রথম দিন রোববার কেন্দ্রীয়ভাবে প্রাথমিকের বই উৎসব শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে। মাধ্যমিকের বই উৎসব হয় গাজীপুরের কাপাসিয়া সদর উপজেলার কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন।

 

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে শিক্ষার্থীদেরও স্মার্ট শিক্ষার্থী হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। আমরা ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করেছি। তার মোট সংখ্যা ৪৩৪ কোটি ৪৫ লাখ ৮০ হাজার ২১২ কপি। পৃথিবীর কোনো দেশ বা সরকারের জন্য এটি একটি অচিন্তনীয় ব্যাপার। বিনামূল্যে বই পাওয়ার ফলে আমাদের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হারও কমে গেছে।

 

এর আগে গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের বই তুলে দেন তিনি। করোনার কারণে গত দুই বছর বই উৎসব করা সম্ভব হয়নি। এ বছর সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে উৎসব করতে আগেই নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

 

প্রাপ্ত তথ্যমতে সারা দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে মোট ৩৩ কোটি ৪৮ লাখ ৭৭ হাজার ৮৩৩টি পাঠ্যপুস্তক বিতরণের কথা রয়েছে। এর মধ্যে প্রাইমারির (প্রাক প্রাথমিক থেকে ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠীসহ) মোট বই নয় কোটি ৬৬ লাখ সাত হাজার ২৪৫ কপি এবং মাধ্যমিকের জন্য ২৩ কোটি ৮২ লাখ ৭০ হাজার ৫৮৮টি বই বিতরণ করা হবে।

 

এদিকে ৯টিরও বেশি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য নিম্নমানের বই ছাপার অভিযোগ পেয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। নিম্ন মানের বই ছাপিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো এনসিটিবিকে হস্তান্তর করার আগে সরেজমিন পরিদর্শন শেষে প্রায়-প্রস্তুত ৫০ হাজার পাঠ্যবই ও ছাপানো ফর্মা কেটে বিনষ্ট করা হয়েছে।

 

এনসিটিবি জানায়, গ্লোবাল প্রিন্টিং অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট, আমিন আর্ট প্রেস অ্যান্ড প্রিন্টিং, আলামিন প্রেস, সরকার প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশনস, লিখন আর্ট প্রেস, হাওলাদার প্রেস, এস এস প্রিন্টার্স, নয়ন মনি এবং রিফাত প্রেসে ছাপানো ৫০ হাজার পাঠ্যবই ও বইয়ের ফর্মা কেটে বিনষ্ট করা হয়েছে।

 

জানা গেছে, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, গ্যাস ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের অভাবে কাগজ সংকট চলছে কিছু দিন আগে থেকেই। এদিকে ডলার সংকট মেটাতে ভার্জিন পাল্প আমদানি করার সুযোগ পাননি কাগজকল মালিকরা। ফলে রিসাইকেলের মাধ্যমে তৈরি কাগজে পাঠ্যবই ছাপার সুযোগ দেয়া হয়েছে মুদ্রণ মালিকদের।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version