-->
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তি

সাত কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়ায় বেহাল অবস্থা!

মোস্তাকিম আহমেদ
সাত কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়ায় বেহাল অবস্থা!

ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) অধিভুক্তির পর থেকে রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের সমস্যা যেন আর পিছু ছাড়ছে না। সময়মতো পরীক্ষা গ্রহণ না করা, ফল প্রকাশে বিলম্ব, প্রকাশিত ফলাফলে শিক্ষার্থীদের তীব্র অসন্তোষসহ নানা কারণে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছে বহুবার। সম্প্রতি ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে অনার্স ভর্তি কার্যক্রমেও হযবরল অবস্থা চলছে। ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ভর্তি কার্যক্রম চলমান থাকার নোটিশ দিলেও ১৮ অক্টোবর থেকে ক্লাস শুরু করার নোটিশ দেয়া হয়েছে।

 

সরজমিনে দেখা যায়, গতকাল মঙ্গলবার দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভর্তিচ্ছুদের ভর্তি ফরম জমা নেয়নি রাজধানীর তিতুমীর কলেজ। অন্যদিকে অনলাইনের সার্ভার জ্যাম ছিল, ছাত্রছাত্রীরা টাকা জমা দিতে পারেননি।

 

ঢাকার আশুলিয়া থেকে আগত এক শিক্ষার্থী জানান, তিতুমীর কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে এসেছি, অথচ অফিসে আমার ভর্তির কাগজপত্র কেউ জমা নিচ্ছেন না।

 

ভর্তিচ্ছু বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, আগামী ২০, ২১ এবং ২২ অক্টোবর অনলাইন সার্ভারও বন্ধ থাকবে বলে শুনেছেন তারা।

 

এদিকে, ভর্তির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা না নেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিতুমীর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন ভোরের আকাশকে জানান, যারা রশিদ জমা দিতে এসেছে, সেই রশিদ আমরা জমা নিচ্ছি। সমাজবিজ্ঞান বিভাগে যদি কোনো ধরনের বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটে থাকে, তবে খোঁজ নিয়ে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তাছাড়া ভর্তির সামগ্রিক কার্যক্রমের সঙ্গে আমরা কোনোভাবেই জড়িত নই। সাত কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়া, টাকা গ্রহণ, নোটিশ প্রণয়ন সবকিছু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছে।

 

ভর্তি কার্যক্রম ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে, ১৮ অক্টোবর ক্লাস শুরু হবে কীভাবেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমন বিভ্রান্তিকর নোটিশের সঙ্গে আমরা কোনোভাবেই জড়িত নই। আমাদের কলেজের ওরিয়েন্টেশন ক্লাস আগামী ৩১ অক্টোবর হবে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর সরকারি কলেজগুলোর শিক্ষার মান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং সরকারি বাঙলা কলেজকে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করা হয়। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে কলেজগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়তে থাকে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তির পর থেকেই সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দেয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম সংবলিত পরিচয়পত্র ব্যবহার করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহনসহ প্রদেয় সব সুযোগ-সুবিধা ব্যবহারে উৎসাহী হয়ে ওঠে। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের এ ধরনের আচরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয়। ফলে তারা সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করলেও এ কলেজগুলোর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্তি বাতিল করা হয়নি।

 

অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশে অভ্যস্ত শিক্ষার্থীরা আকস্মিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আসায় বিভিন্ন পরীক্ষায় ব্যাপক হারে অকৃতকার্য হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ ছাড়া নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের টাকা জমা দিতে হচ্ছে এক জায়গায় আর ভর্তির কাগজপত্র জমা দিতে হচ্ছে অন্য জায়গায়। নতুন শিক্ষার্থীরা ভর্তি সংক্রান্ত কোনো সমস্যা নিয়ে কলেজে যোগাযোগ করলে সমাধানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করার জন্য বলা হচ্ছে। আর এসব কারণে সাত কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছে নবাগত শিক্ষার্থীরা।

 

এ বিষয়ে ৭ কলেজের কেন্দ্রীয় অনলাইন ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সাত কলেজের অধ্যক্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্যরা বসে ১৮ অক্টোবর ওরিয়েন্টেশন ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেভাবেই রুটিন দেয়া হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে, নিয়মিত ক্লাস এবং ওরিয়েন্টেশন ক্লাসের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

 

তিনি বলেন, নিয়মিত শিডিউল ক্লাসের বিষয়ে যার যার কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষক মিলে রুটিন করবেন। অনলাইন সার্ভারে ভোগান্তির ব্যাপারে তিনি জানান, অধিক শিক্ষার্থী একসঙ্গে সার্ভারে প্রবেশ করলে নেটে ঝামেলা হতে পারে। তাই এক সময়ে অনলাইনে ভর্তি ফি জমা দিতে ব্যর্থ হলে অন্য সময়ে চেষ্টা করলে নিশ্চয়ই পারবে।

 

তিনি বলেন, কেউ যদি তার কলেজে কাগজপত্র জমা দিতে গিয়ে ভোগান্তির স্বীকার হয় এবং তা আমাদের জানান, তবে আমরা সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। কেউ যদি অনলাইনে টাকা জমা দিয়ে সরাসরি কলেজে গিয়ে কাগজপত্র জমা না দেয়, সেক্ষেত্রেও তাদের সঙ্গে আমরা ২৭ অক্টোবর ফোনে যোগাযোগ করব।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version