-->

সবজির বাজারে স্বস্তির হাওয়া

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
সবজির বাজারে স্বস্তির হাওয়া

কীতের সবজিতে ভরে গেছে বাজার। প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় ঢুকছে সবজি পরিবহন। এর জের ধরে বাজারে সবধরনের সবজির দামই কিছুটা কমতে শুরু করেছে। এতে করে কিছুটা স্বস্তি এসেছে ক্রেতাদের মধ্যে।

 

বিক্রেতারা বলছেন, শীত আরও বাড়লে দাম আরও কমবে। এদিকে শুধু সবজির দাম না, কমতে শুরু করেছে মুরগির দামও। তবে সবজি আর মুরগির দাম কমলেও সব ধরনের পেঁয়াজের দাম এখনও নামেনি ১০০ টাকার নিচে। এ নিয়ে বিক্রেতারা বলছেন, নতুন পেঁয়াজ উঠলে দাম কমবে তবে পুরনো পেঁয়াজের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।

 

রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বরের কাঁচাবাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা জানা গেছে বাজারের এ পরিস্থিতি। শীত আসতে শুরু করতেই কমতে শুরু করেছে সবজির দাম। শুরুর দিকে দাম চড়া থাকলেও এখন অনেকটাই আসতে শুরু করেছে নাগালের মধ্যে। কিন্তু এখনো যেসব সবজি নতুন আসছে সেগুলো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। সবজি বিক্রেতা মো. হায়দার বলেন, দেশি পাকা টমেটো আর নতুন আলুটা মাত্র আসতে শুরু করেছে তাই এগুলোর দামটা বেশি। তবে কমে যাবে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই। এছাড়া অন্যান্য সব সবজির দামই কমেছে। দাম বাড়ে নাই কোনোটারই।

 

হরতাল-অবরোধের প্রভাবে কোনো কিছুর দাম বেড়েছে কিনা বা প্রভাব পড়েছে কিনা জানতে চাইলে সবজি বিক্রেতা মো. সাদ্দাম বলেন, হরতাল-অবরোধের কোনো প্রভাব বাজারে পড়ে নাই। প্রথম দিকে (শুরুর দিকের অবরোধ) সবজি আনতে ভাড়া বেশি লাগত। কারণ কেউ আসতে চাইত না। এখন আর সে রকম কিছু হয় না।

 

বাজারে শিম ৬০ টাকা, মৌ শিম ৬০ টাকা, শালগম ৬০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৮০ টাকা, টমেটো ১৬০ টাকা, পেঁয়াজ পাতা ৯০-১২০ টাকা, মূলা ৪০ টাকা, গাজর ১০০ টাকা, লম্বা বেগুন ৫০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৬০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৮০ টাকা, শসা ৫০-৮০ টাকা, উচ্ছে ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা, ধনেপাতা ১২০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতিটি লাউ ৬০ টাকা, ফুলকপি ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা ও চাল কুমড়া ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজিতে।

 

বাজার করতে আসা নেহাল হুসাইন বলেন, সবজির দাম অনেকটা কমে আসছে। কিছুটা স্বস্তি হয়তো পাওয়া যাবে। আরেক ক্রেতা শাহরিয়ার বলেন, সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। কিন্তু যখন সব সবজির দাম ৫০ টাকার নিচে নেমে আসবে তখন বলব দাম কমেছে।

 

সবজির দাম কমলেও পেঁয়াজের দাম এখনো ১০০ টাকার নিচে নামেনি। আজকের বাজারে মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ১১৫-১২০ টাকা, ক্রস জাতের পেঁয়াজ ১১০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আলুর দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। গত সপ্তাহের মতো আজও লাল ও সাদা আলু ৫০ টাকা দরেই বিক্রি করতে দেখা যায়। আলু-পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. কাজল মিয়া বলেন, পেঁয়াজের দাম কমার আর কোনো সম্ভাবনা দেখি না। বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠলে সেগুলোর দাম কমবে, কিন্তু এই পেঁয়াজের দাম আর কমবে না।

 

এছাড়া অপরিবর্তিত রয়েছে আদা রসুনের দাম। আজকেও ভারতীয় আদা ২০০-২২০ টাকা, দেশি রসুন ২০০ টাকা, চায়না রসুন ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

এছাড়া ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৩০০- ২২০০ টাকা, রুই মাছ ৩৮০-৬৫০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৬৫০ টাকা, কালিবাউশ ৩৫০- ৭০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৭০০ -১০০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০-৬০০ টাকা, কৈ মাছ ৩৫০-৫০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৭০০ টাকা, শিং মাছ ৩০০-৪০০ টাকা, বেলে মাছ ৬০০-১০০০ টাকা, টেংরা মাছ ৮০০ টাকা, কাজলি মাছ ১০০০ টাকা, বোয়াল মাছ ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগি ১৫৮-১৭২ টাকা, কক মুরগি ২৪৫-২৫০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৪০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি ডজন লাল ডিম ১২০ টাকা, সাদা ডিম ১১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায় ব্রয়লার মুরগি ও কক মুরগির দাম কমে এসেছে। মুরগি বিক্রেতা মো. হারুন বলেন, মুরগির দাম আসলে প্রতিদিনই উঠা-নামা করে। তবে এখন দাম কমের দিকেই আছে বলা যায়।

 

এছাড়া গত সপ্তাহের মতো অপরিবর্তিত দামেই বিক্রি হচ্ছে মুদি দোকানের পণ্য। আজকে ছোট মুসরের ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মুসরের ডাল ১১৫ টাকা, মুগ ডাল ১৪৫ টাকা, খেসারি ডাল ৯৫ টাকা, বুটের ডাল ৯৫ টাকা, ছোলা ৯০ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৯ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা, খোলা চিনি ১৪২, টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৪০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১২০ টাকা খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

চিনি-ডাল-আটা-ময়দার দাম চড়া: বাজারে বেশকিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে চিনির দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া চড়া চাল, ডাল, আটা, ময়দা, মসলাসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম। রামপুরা মালিবাগ কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজার ও মুদি দোকান ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। তবে বাজারে সবজির দাম কিছুটা কম দেখা গেছে। নিম্ন মুখী আছে মুরগি ও ডিমের দাম।

 

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খোলা বাজারে খোলা সাদা চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। আর প্যাকেজাত সাদা চিনি ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায়। এসব চিনির দাম কয়েক সপ্তাহ আগে ১৪০ টাকার মধ্যে ছিল। রামপুরা এবি স্টোরের কালাম হোসেন বলেন, কোম্পানি তারপরও চিনি দিচ্ছে না। তারাই সংকট লাগিয়ে রেখে দাম বাড়াচ্ছে।

 

এদিকে, মুদি দোকানে চলতি মাসের শুরুতে মসুর ডালের দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছিল। মাঝে কয়েক দিন কমে আবার বেড়েছে এখন। বর্তমানে মোটা দানার ডালের কেজি ১১০ থেকে ১২০ এবং ছোট দানার ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খোলা আটা ৪৮ থেকে ৫০ টাকা আর খোলা ময়দা ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহের তুলনায় ৫ টাকা বেশি।

 

চালের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে বুলু রাইস স্টোরের স্বত্বাধিকারী বুলু মিয়া বলেন, বিআর আটাশ চালের দাম কেজিতে চার টাকা বাড়ছে। নাজিরেও বাড়ছে চার টাকা আর মিনিকেটে বাড়ছে দুই টাকা। কয়েক বছর থেকে ধান কাটা-মারির মৌসুমে আর চালের দাম কমে না। এখন অব সিজনে দাম কমে। সিজন সময়ে আগে কমত।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version