-->
২৩ দিনে পণ্য যাবে আমেরিকায়

জাপানের অর্থায়নেই হচ্ছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর

মো. ইব্রাহিম শেখ, চট্টগ্রাম
জাপানের অর্থায়নেই হচ্ছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর
মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর

মো. ইব্রাহিম শেখ, চট্টগ্রাম: মহেশখালীর মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে যৌথ অংশীদার হতে না পারলেও সেই মাতারবাড়ি বন্দর ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারত ও চীন। এই দুই দেশের প্রতিযোগিতার কারণে দীর্ঘদিন গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ আটকে থাকলেও শেষ পর্যন্ত জাপানের অর্থায়নেই হচ্ছে ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এই বন্দর। আর প্রতিযোগী দুই দেশকে হাতে রেখে তৃতীয় একটি দেশকে দিয়ে বন্দর নির্মাণের কৌশলকে কূটনৈতিক বিজয় হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

 

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল বলেন, ‘সর্বোচ্চ আগামী তিন বছরের মধ্যে টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হবে এবং তখন এটি পূর্ণাঙ্গ অপারেশনে চলে যাবে। এটির মাধ্যমে শুধু যে বাংলাদেশের মানুষ উপকৃত হবে, তা কিন্তু নয়। বরং দক্ষিণ এশিয়া এবং চীনসহ সব মিলিয়ে প্রায় ৩ বিলিয়ন মানুষ সরাসরি এই বন্দরের মাধ্যমে উপকৃত হবেন।’ মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের সাবেক প্রকল্প পরিচালক মো. জাফর আলম বলেন, ‘প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক দিক মূল্যায়নের পর ভারত, চীন ও নেদারল্যান্ডসকে পেছনে ফেলে এ প্রকল্পের দায়িত্ব পেয়েছে জাপান। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে মোট খরচ ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপানের জাইকার ঋণ সহায়তা ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। বাকি অর্থ বন্দরের নিজস্ব তহবিল ও সরকারের অর্থায়ন।

 

বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় একটি পণ্যের চালান পাঠাতে সময় লাগে ৪৫ দিন। মাতারবাড়ি বন্দর চালু হলে মাত্র ২৩ দিনেই সরাসরি নির্ধারিত গন্তব্যে পণ্য পৌঁছে যাবে। গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মাতারবাড়ি সফরের আগের দিন উদ্বোধনের প্রস্তুতি পরিদর্শন শেষে নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘গভীর সমুদ্রবন্দর বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন। যা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। প্রকল্প প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রকল্পের অধীনে একটি ৩০০ মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণ, একটি ৪৬০ মিটার দীর্ঘ কন্টেনার জাহাজ বার্থিং জেটি, ৩৫০ মিটার চওড়া এবং ১৬ মিটার গভীরতার ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ চ্যানেল নির্মাণ, উত্তর দিকে ২ হাজার ১৫০ মিটার এবং দক্ষিণ দিকে ৬৭০ মিটার লম্বা ঢেউ নিরোধক বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও তিনটি টাগবোট, একটি পাইলট বোট, একটি সার্ভে বোটসহ কার্গো হ্যান্ডেলিং ইক্যুইপমেন্ট টিওএস অ্যান্ড সিকিউরিটি সিস্টেম ক্রয় করা হবে। এছাড়াও জাতীয় মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য ২৭ দশমিক ৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে।

 

মহেশখালী কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, দেশে জ্বালানি ও পাওয়ার হাব গড়ে তুলতে সুনীল জলরাশির বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষা উপকূলীয় মহেশখালী দ্বীপের মাতারবাড়িকে ঘিরে গভীর সমুদ্র বন্দর, কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, ইকোনমিক জোন ও এলএনজি টার্মিনালসহ সব মেগা প্রকল্পে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। অপরদিকে দোহাজারী কক্সবাজার রেললাইন আগামীতে সমপ্রসারিত হয়ে আন্তর্জাতিক রুটে সংযুক্ত হলে চীনের কুনমিং মেইন পর্যন্ত পৌঁছে বাংলাদেশের সঙ্গে বৈদেশিক অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। বন্দরকেন্দ্রিক এই সমুদ্র বাণিজ্য সমপ্রসারণের স্বার্থে মহেশখালী দ্বীপের সঙ্গে কক্সবাজার জেলা শহরের স্থল যোগাযোগ তৈরি করতে মহেশখালী চ্যানেলের ওপর সংযোগ সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর দেশের অর্থনৈতিক বিপ্লবে আমূল পরিবর্তন এনে দেশকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করবে। এটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের বড় অর্জন বলে মনে করি।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version