-->
টাস্কফোর্সের ষষ্ঠ সভা

রমজানে জিনিসের দাম বাড়লেও সমস্যা হবে না: বাণিজ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
রমজানে জিনিসের দাম বাড়লেও সমস্যা হবে না: বাণিজ্যমন্ত্রী

কয়েক বছর পরে এবার রমজান উন্মুক্তভাবে হচ্ছে। ইফতার পার্টিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান বেশি হবে। এ কারণে হয়তো জিনিসের দাম একটু বাড়তে পারে। তবে সমস্যা হবে না বলে মন্তব করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

 

একই সঙ্গে তিনি বলেন, রমজানে জিনিসপত্রের দাম সহনীয় রাখতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। দাম বৃদ্ধি নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। সরকারের কাছে যে মজুত আছে, তাতে কোনোভাবেই দাম বাড়বে না। যদি কেউ সুযোগ নেয় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

রোববার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে ‘দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের ষষ্ঠ সভা’ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষসহ সকল স্টেক হোল্ডাররা উপস্থিত ছিলেন।

 

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেন, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং ব্যবসায়ী নেতারা কথা দিয়েছেন আসন্ন রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম কোনোভাবেই বাড়বে না। দেশে কৃষি পণ্যের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। এ আতঙ্কিত হয়ে একসঙ্গে বেশি পণ্য না কেনার আহব্বান জানান।

 

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রমজান পণ্য যেন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, এ বিষয়ে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে রোজা শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহ থেকে সব মাল ঘরে ঢুকিয়ে ফেলে। তাহলে সাপ্লাই চেন কোথা থেকে আসবে। সাপ্লাইয়ের তো একটা সিস্টেম আছে। জাতির সামনে একটি কথা বলতে চাই, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হয়েছে।

 

তেল, চিনি এবং ছোলাসহ যা প্রয়োজন এখন মজুত আছে তার দেড় গুণ। দাম বাড়ার কোনও কারণ নাই। দাম বাড়তির কারণে চিনির উপর থেকে ভ্যাট কমানো হয়েছে। চিনির দামের উপর থেকে যে ৫ ভাগ ট্যারিফ কমানো হয়েছে, সেটার প্রভাব রমজানের শুরু থেকেই বাজারে থাকবে। এছাড়াও দেশে প্রচুর ভোজ্যতেলের মজুত রয়েছে।

 

মুরগির দাম এখন বাড়তির দিকে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এটা যাতে করে রমজান মাসে সহনীয় থাকে, সেজন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। এটা আর বাড়বে না। মুরগির দাম নিয়ে কাজী ফার্মের একজন পরিচালক ভোক্তা অধিকারের কাছে সম্প্রতি বলেছেন মুরগির উৎপাদন খরচ ১৩০ টাকা আর পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন ১৯০ টাকা থেকে ২৬০ টাকা পর্যন্ত।

 

এই যে মূল্যের ব্যবধান সে বিষয়ে আপনারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, মুরগির দামের বিষয়ে কেউ একজন এসে বলে গেছে সেটা তার বক্তব্য। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

 

তারাই বিবেচনা করে মুরগির মূল্য ঠিক করে দেবে। তারা যদি ঠিক করে দেন মুরগীর উৎপাদন খরচ ১৩০ বা ১৪০ টাকা এবং এটার প্রকৃত মূল্য হচ্ছে ১৭০ টাকা এটা যদি তারা ঠিক করে দেন তাহলে ভোক্ত অধিকার সে মূল্যেই তাদেরকে ধরবে। তাহলে আমরা এ বিষয়টি ঠিক করতে পারবো।

 

তিনি বলেন, পেঁয়াজ যথেষ্ট পরিমাণ আছে। ভারত থেকে আমদানিও ধীরগতি করা হয়েছে। যাতে করে কৃষকরা দাম পায়। ভোক্তারাও যাতে ন্যায্যমূল্যে কিনতে পারে। শাকসবজির গাড়িতে চাঁদাবাজি বন্ধে শক্তভাবে মনিটর করা হবে। সচিবকে বলেছি, ডিসি পর্যায়ে সরাসরি বলে দিতে মহাসড়কগুলো দিয়ে খাদ্যসামগ্রী, শাকসবজি নিয়ে আসা যায়। এসব ট্রাক যাতে কোথাও না থামায়। কোনো অবস্থাতেই চাঁদাবাজি করতে দেয়া যাবে না।

 

এফবিসিসিআই এবং ব্যবসায়ী নেতারাও কথা দিয়েছেন জিনিসপত্রের দাম আর বাড়বে না। ভয়ের কোনও কারণ নেই। রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আজ সোমবার থেকে কঠোরভাবে মনিটরিং করবে বলেও জানান তিনি।

 

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে গেছে, দেশের বাজারে কমানো হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে গেছে এটা ঠিক। দুর্ভাগ্য তেলের দাম কমলেও ডলারের দাম বেড়ে গেছে। যদি এমনটা হতো তেলের দাম কমেছে ডলারের দাম আগের অবস্থায় রয়েছে তাহলে তেলের দাম কমানো যেতো। তারপরও দেখছি, যদি কিছু করা যায়।

 

টিপু মুনশি বলেন, রমজান মাস সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের বলেছি রমজানের পর আপনাদের নিয়ে বসবো। এ সময়টায় আর কোনো অবস্থাতেই পণ্যের দাম বাড়াবেন না। এবিষয়টি ব্যবসায়ীরা মেনে নিয়েছেন। মন্ত্রণালয় দাম নির্ধারণ করে দিলেও মাঠ পর্যায়ে গিয়ে মিল পাওয়া যায় না সে বিষয়ে কি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, একটু আগেই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হয়েছে।

 

আমাদের যা প্রয়োজন তার দেড়-গুণ তাদের কাছে মজুদ রয়েছে। তাদের হাতে ও পাইপ-লাইনে আছে। তেল এবং চিনি তাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণে আছে। ছোলা যে দামে আনা হচ্ছে তার থেকে কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে কোনো সমস্যা হবে না।

 

তিনি বলেন, সাংবাকদিকরা বাজারে গেলে গড়মিল পাচ্ছেন সেটাও ঠিক। তবে এটাও ঠিক কারওয়ান বাজারে যে দাম উত্তরার বাজারে তার থেকে ২০ টাকা বেড়ে যেতে পারে। যদি বলেন কারণ বাজারে ৫০ টাকা উত্তরায ৮০ টাকা।

 

তাহলে ৮০ টাকা ধরেই দাম বাড়ানো শুরু করবে। এ সময় তিনি জানান রমজান মাসে ১ কোটি দরিদ্র পরিবারকে মাসে দুই বার কম দামে টিসিবির পণ্য দেয়া হবে। এখন যা দেওয়া হয় মাসে একবার করে।’ এটার প্রভাব বাজারে পড়বে বলে মনে করেন তিনি।

 

বাণিজ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, প্রধানমন্ত্রীর দফতর, স্বরাষ্ট্র, স্থানীয় সরকার, অর্থ, কৃষি, খাদ্য, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং বাংলাদেশ আনসারসহ দেশের চারটি গোয়েন্দা সংস্থার উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version