-->

ফের অস্থির ডিমের বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফের অস্থির ডিমের বাজার

তিন দিন আগেও যারা ব্রয়লার মুরগি কিংবা ফার্মের ডিম কিনেছেন, সকালে বাজারে এসে তাদের পিলে চমকে যেতে পারে। কারণ, এ সময়ের ব্যবধানে প্রতি কেজি ব্রয়লারের দাম ৩০ টাকা ও ডিম ডজনে বেড়েছে ১০-১৫ টাকা। এখন বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০-১৫৫ থেকে বেড়ে ১৮০-১৮৫ টাকা হয়েছে। আর ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকা, যা আগে ছিল ১২৫ টাকা।

 

হঠাৎ করে ব্রয়লার ও ডিমের এই দাম বৃদ্ধি বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে। দোকানে দোকানে দাম নিয়ে চলছে ক্রেতা-বিক্রেতার বাগবিতন্ডতা। সকালে সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। শান্তিনগর বাজারে ডিমের দরদাম করছিলেন ওই এলাকার বাসিন্দা মাহফুজা পারভিন। নির্দিষ্ট দোকান থেকে তিনি ব্রয়লার মুরগি ও ডিম কেনেন। এদিন সকালে ডিম কিনতে এসে তিনি জানতে পারেন দাম বৃদ্ধির কথা।

 

বিক্রেতা পরিচিত হলেও তিনি তাকে সাফ বলে দিলেন, ‘মগের মুল্লুক নাকি’! মাহফুজা পারভিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সোমবারও ব্রয়লার মুরগি ১৫৫ টাকায় কিনেছি। এখন বলছে ১৮৫ টাকা। আশ্চর্য লাগছে। মাঝে তিন দিনে কীভাবে এত বাড়ে। আমাদের জীবন চালানো অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।

 

শাহনাজ বেগম নামের অন্য এক ক্রেতা বলেন, ডিমের দাম এই বাড়ে তো এই কমে। আগে ১১০ টাকায় এক ডজন ডিম পাওয়া যেত। এরপর একবার ১৫০ টাকা হলো। তারপর কমে আবার ১২০ টাকায় নেমেছে। এখন আবার ডজনে ১৫ টাকা বেশি চাওয়া হচ্ছে। বাজার থেকে যদি এ দামে কিনতে হয়, পাড়া-মহল্লার দোকানে নিশ্চয়ই আরো বেশি দামে কিনতে হবে। আর কাল কী হবে সেটা কীভাবে বলবেন? কারওয়ান বাজার, মালিবাগ ও রামপুরা বাজার ঘুরেও ব্রয়লার মুরগি ও ফার্মের ডিমের বাড়তি দামের তথ্য পাওয়া গেছে। কারওয়ান বাজারের বিক্রেতারা সরবরাহে সংকট না থাকলেও আড়তে ডিমের দাম বাড়ছে বলে জানান।

 

কারওয়ান বাজারের ডিম ব্যবসায়ী জামাল হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, হুট করে ডিমের দাম বেড়ে গেল। তিন দিন ধরে এ দামবৃদ্ধি। আজকে এক রকম তো কাল আরেক রকম। প্রতিদিন ডজনে ৫ টাকা করে বাড়তি কিনতে হচ্ছে। জানি না এ দাম কোথায় ঠেকবে। অন্যদিকে পাড়া-মহল্লার মুদি দোকান থেকে ডিম কিনলে গুনতে হচ্ছে তার চেয়ে কয়েক টাকা বেশি। কোথাও কোথাও ডিম ৫০ টাকা হালি বিক্রি হতে দেখা গেছে। ফার্মের মুরগির সাদা ডিম একটু কমে, প্রতি হালি ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর বাজারভেদে হাঁসের ডিমের হালি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা।

 

অন্যদিকে বাজারভেদে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ১৯৫ টাকা। আর সোনালি মুরগির দাম প্রতি কেজি ৩০০-৩২০ টাকা পর্যন্ত। এ সময়ের ব্যবধানে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম প্রতি কেজি ৩৫ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কারওয়ান বাজারে এসএম এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা কাশেম সিকদার বলেন, মাঝে মুরগির দাম বেশ বেড়েছিল।

 

এরপর আবার কিছুটা কমেছে। এখন আবার বাড়তির দিকে। তবে এবার দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। তিনি বলেন, কাঁচামালের দাম মাঝেমধ্যে হেরফের হয়। শীতের সময় ব্রয়লারের চাহিদা বাড়ে, সরবরাহ কমে যায়। তবে হুট করে কেন এমন হলো, সেটা জানা নেই। এ বিষয়ে কথা হয় খামারিদের সংগঠন পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদারের সঙ্গে।

 

তিনি বলেন, খামারেই ডিম ও মুরগির দাম বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। খামারে মুরগি ১৪৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ দাম কয়েকদিনে বেড়েছে। সামনে দাম আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। এ বিষয়ে সুমন হাওলাদার বলেন, আমাদের এ বাজারে করপোরেট কোম্পানিগুলোর শক্ত সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা ১০ দিনে ১০ টাকার বাচ্চা ৪৩ টাকা করেছে।

 

গত বছরের আগস্টের পর থেকে দফায় দফায় ফিডের দাম বাড়িয়েছে। যার প্রভাবে টিকতে না পেরে অনেক খামারি খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন তারাই (করপোরেট কোম্পানি) বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। তিনি বলেন, গত বছরের আগস্টের পর থেকে ফিড ও বাচ্চার অস্বাভাবিক বাজার নিয়ে আমরা বারবার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে যাচ্ছি। সরকারের উচ্চমহলও এটি নিয়ন্ত্রণে এক মাসের মধ্যে কৌশলপত্র তৈরি করতে বলেছে।

 

কিন্তু সেটা তারা করেনি। দুমাসের বেশি সময় আমরা ঘুরছি। তাদের কোনো প্রকার আগ্রহ নেই। সেটা কেন জানি না। তারপরও তিন দিনের ব্যবধানে এ অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন সাধারণ খামারিদের কাছে মুরগি নেই। যেগুলো আছে সেগুলো চড়া দামের ফিড খাওয়া। অন্যদিকে করপোরেট কোম্পানি সিন্ডিকেট করছে, তাদের কাছে মুরগি আছে। তারা দাম বাড়াচ্ছে। যখন খামারিদের মুরগি থাকে, তখন তারা দাম দেয় না। মুরগি শেষ হলে ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে দেয়।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version