-->

বছরের প্রথম মাসে পুঁজিবাজারে সাড়ে ৪ হাজার নতুন মুখ

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
বছরের প্রথম মাসে পুঁজিবাজারে সাড়ে ৪ হাজার নতুন মুখ

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: টানা পতনের পর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও বিনিয়োগকারী টানতে পারছে না পুঁজিবাজার। দিন যত যাচ্ছে ক্রমেই এর প্রতি অনীহা সৃষ্টি হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। একসময় মাসের ব্যবধানে লাখ বিনিয়োগকারী এলেও এখন তা নেমে এসেছে হাজারে। চলতি বছরের প্রথম মাসে পুঁজিবাজারে এসেছে প্রায় ৪ হাজার বিনিয়োগকারী।

 

গত কয়েক মাস ধরে একই অবস্থা বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন বাজার পরিস্থিতি ভালো না থাকায় এর প্রতি সাধারণ জনগণের আগ্রহ কমে গেছে। বাজার পরিস্থিতি পাল্টালে এ অবস্থার উন্নতি হবে বলে মনে করেন তারা।

 

জানা যায়, পুঁজিবাজারে বর্তমানে যাদের বিনিয়োগ সচল রয়েছে তাদের সিংহভাগ লোকসানি। সে কারণে নতুন বিনিয়োগ থেকে দূরে রয়েছেন তারা। একইভাবে বাজার থেকেও দূরে রয়েছেন। এরা বাজারমুখী হচ্ছেন না। অনলাইনে নিজের পোর্টফোলিও দেখে বা শেয়ারদর জানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ তাদের কার্যক্রম। আইপিও মার্কেটেও তেমন সাড়া নেই। একইভাবে নতুন বিনিয়োগকারীর খরায় ভুগছে পুঁজিবাজার। সরকারের পক্ষ থেকে পুঁজিবাজার উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নিলেও তা কাজে লাগছে না। বিনিয়োগকারীদের মনোগত কারণে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না বাজার।

 

প্রাপ্ত তথ্যমতে সম্প্রতি বেনিফিশিয়ারি অনার্স বা বিও অ্যাকাউন্ট খোলার প্রবণতায় থমকে গেছে। এক মাসের ব্যবধানে বাজারে নতুন বিও খোলা হয়েছে ৪ হাজার ৩৭১। ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার সংরক্ষণকারী কোম্পানি সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে এ খবর জানা গেছে।

 

এক মাস আগে যার সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ৬১ হাজার ৩০১টি। এখন যার সংখ্যা ১৮ লাখ ৬৫ হাজার ৬৭২টি। এদিকে বর্তমানে যে বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে এর মধ্যে পুরুষ অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা ১৩ লাখ ৮৯ হাজার ৮৯০টি। অন্যদিকে নারী বিও সংখ্যা রয়েছে ৪ লাখ ৫৫ হাজার ২৪টি। বাকিগুলো কোম্পানির বিও অ্যাকাউন্ট।

 

পুঁজিবাজারে টানা পতন থামাতে গত ২৮ জুলাই বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইস) শেয়ার ও ইউনিটের ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয়। বিএসইসির আদেশে বলা হয়, বিগত ৫ দিনের ক্লোজিং প্রাইসের গড় দর হবে প্রতিটি সিকিউরিটিজের ফ্লোর প্রাইস। ফ্লোর প্রাইসের নিচে নামতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে কোম্পানির বোনাস শেয়ার বা রাইট শেয়ারের কারণে ফ্লোর প্রাইসে থাকা সিকিউরিটিজের দর সমন্বয় হবে।

 

তবে নতুন শেয়ারের বেলায় প্রথম দিনের লেনদেনের ক্লোজিং প্রাইসকে ফ্লোর প্রাইস হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এর পর কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। এতে পুঁজিবাজারমুখী হতে শুরু করেন সাধারণ মানুষ। যার ফলে বাড়তে থাকে বিও অ্যাকাউন্ট। তখন ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া হয়। পরে বাজারচিত্র না বদলানোর কারণে আবারো বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পুঁজিবাজারের প্রতি অনীহা তৈরি হয়।

 

২০১০ সালের পর থেকে মূলত বিনিয়োগকারী এবং সাধারণ জনগণের পুঁজিবাজারের প্রতি অনাগ্রহ তৈরি হয়। ফলে বাজার ছাড়তে শুরু করেন বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে সাধারণ জনগণও পুঁজিবাজারমুখী হননি। যে কারণে একেবারে থমকে যায় বিও খোলা। কোনো কোনো হাউসে দিনে একটি বিও ওপেন হয়নি এমন নজিরও রয়েছে। এরপর ২০১২ সাল থেকে ধীরে ধীরে বিও বাড়তে থাকে। বাজার পরিস্থিতি বিচেচনায় নেয়ায় আবারো বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমতে থাকে।

 

এ প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচাল শাকিল রিজভী বলেন, পুঁজিবাজার ভালো না হলে এখানে বিনিয়োগকারীরা আসবেন না। এটা খুবই স্বাভাবিক। এখন পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। এ অবস্থায় নতুন বিনিয়োগকারীর বাজারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু কেন এর উল্টো হচ্ছে তা বোধগম্য নয়।

 

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়। এর আগে পঞ্জিকা বর্ষ হিসেবে প্রতি বছর ডিসেম্বরে এই ফি জমা নেয়া হতো।

 

তবে ২০১০ সালের জুনে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে। এ সময়ে বিও নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। এরপর বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল এক সার্কুলারে ৩০ জুনের মধ্যে বিও হিসাব নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। না হলে তা বাতিল করা হবে বলে ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল।

 

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১৯ মার্চও বাজারের পতন ঠেকাতে সরকারের নির্দেশে ফ্লোর প্রাইস বসানো হয়েছিল। তখন ডিএসইর প্রধান সূচকটি নেমে এসেছিল ৩ হাজার ৬০৪ পয়েন্টে। এরপরই মূলত পতন ঠেকাতে শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দামের সর্বনি¤œ সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version