-->
দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার প্রত্যাশা

আবারো পুঁজিবাজারমুখী হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
আবারো পুঁজিবাজারমুখী হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: দীর্ঘদিন থেকে দেশের পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা ভালো নেই। প্রতিনিয়ত সূচকের পতন সেই সঙ্গে সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাস পেয়েছে। এর জের ধরে কমে গেছে বাজার মূলধন। এ অবস্থায় লোকসানের হিসাব করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না বিনিয়োগকারীদের। তবে নতুন বছরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বাজার। বাড়ছে বাজার মূলধন ও শেয়ার এবং ইউনিট দর। এতে বাজারে ফিরে আসছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজারের এ ধারা অব্যাহত থাকবে এমন প্রত্যাশা তাদের।

 

সাম্প্রতিক বাজারচিত্রে দেখা যায়, বছরের শুরুতে সূচকের পতন অব্যাহত থাকলেও পরে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। গত দুসপ্তাহে অবস্থার আরো উন্নতি হয়। এ সময় ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে গত সপ্তাহে বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন বাজার মূলধন বেড়েছে ২ হাজার কোটি টাকা করে।

 

গত সপ্তাহের বাজারচিত্রে দেখা যায়, চার দিন উত্থান আর এক দিন সূচক সামান্য পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এ সময়ে সূচক বাড়ায় বাজার মূলধন অর্থাৎ পুঁজি বেড়েছে ১০ হাজার ১৮৫ কোটি ৬২ লাখ ২৩ হাজার ২৩১ টাকা। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে লেনদেনের শুরুতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূলধন ছিল ৭ লাখ ৫৬ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা।

 

শেষ দিন বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৬৭ হাজার ২৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ টাকার অঙ্কে পুঁজি বেড়েছে ১০ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, যা এর আগের সপ্তাহে বেড়েছিল ২ হাজার ১৪৯ কোটি ৩০ লাখ ৬ হাজার ৮১৯ টাকা। অর্থাৎ টানা দুই সপ্তাহ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি বাড়ল। এদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই ধারা দেখা গেছে।

 

বিদায়ী (২২ থেকে ২৬ জানুয়ারি) সপ্তাহে মোট পাঁচ কর্মদিবস লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম কর্মদিবসে সূচক পতন, এরপর সোম থেকে বৃহস্পতিবার টানা চার কর্মদিবস সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন হয়। এ সময় ডিএসইতে মোট ৩৮৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে।

 

এর মধ্যে ৬৩টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে ১১৯টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২০৫টির। তার আগের সপ্তাহে লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছিল ১১৪টির, কমেছিল ৬৮টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২০৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। সে হিসাবে আগের সপ্তাহের তুলনায় দাম কমা কোম্পানির সংখ্যা বেড়েছে।

 

এদিকে বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বললে বিনিয়োগকারীরা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা খুশি। তবে এ ধারা অব্যাহত থাকতে হবে। কারণ পূর্বে অনেকবার এমন পরিস্থিতি হওয়ার পরও বাজার আগের ধারায় ফিরে গেছে।

 

জানতে চাইলে সাজেদুল করিম বলেন, আশা করছি এবার বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। কারণ বহুদিন থেকে বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো নয়। আমাদের লোকসানও অনেক। এ পরিস্থিতিতে যদি আবার পতন নেমে আসে তাহলে আমাদের অবস্থা আরো খারাপ হবে। সে জন্য সংশ্লিষ্টদের উচিত হবে বাজারের প্রতি নজর রাখা।

 

এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, প্রতি বছরই বিনিয়োগকারীরা প্রত্যাশা নিয়ে লেনদেন শুরু করেন। তাদের প্রত্যাশা থাকে বাজার ভালো যাবে। কিন্তু প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি এক কথা নয়। বিভিন্ন কারণে পুঁজিবাজারের চিত্র পরিবর্তন হয়। যে কারণ বিনিয়োগকারীদের লোকসানের হিসাবও কষতে হয়। পুঁজিবাজারে লাভ-লোকসান থাকবে এটা স্বাভাবিক। তবে বাজারে যেন অস্বাভাবিক কিছু না ঘটে তার জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

 

জানা যায়, চলতি বছরে ডিএসইর বর্তমান বোর্ডের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো এক্সচেঞ্জের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন আধুনিক ডাটা সেন্টার তৈরি করা। যার কাজ চলমান রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার সংযোজনের পর শিগগির ডাটা সেন্টার চালু করা সম্ভব হবে।

 

ডিএসই জানিয়েছে, জাতীয় অর্থনীতির নিরবচ্ছিন্ন প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশের পুঁজিবাজারে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডিএসইর সেবা ও কার্যক্রম ব্যাপকভাবে প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ায় এর প্রযুক্তিগত ঝুঁকিও অনেক বেশি। কোনো দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেশের পুঁজিবাজারের কার্যক্রমকে অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিতে পারে। সম্ভাব্য ঝুঁকি ও বিপর্যয় রোধের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্নভাবে সচল রাখতে মোনায়েম বিজনেস ডিসট্রিক্ট-এ ২৪ রেকের একটি ডিজাস্টার রিকভারি (ডিআর) সাইট স্থাপনের কাজও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ডাটা সেন্টার এবং ডিআর প্রবর্তনের মাধ্যমে ডিএসই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে প্রবেশ করবে এবং ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।

 

পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা আশা করেন, ২০২৩ সালের শুরুতেই এ সংকট কিছুটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। এর মূল কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তার বৈশিষ্ট্যগত সহনশীলতার কারণে বিভিন্ন সূচকের অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাছাড়া ২০২৩ সালের শুরুতেই মোবাইল অ্যাপসের ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি, বন্ড মার্কেটের জন্য স্বতন্ত্র অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রতিষ্ঠাসহ বাজারের অধিকতর স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং গুণগত সম্পসারণের জন্য ব্যপক কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version