-->
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা

ক্রেতাদের অভিযোগ : চড়া দাম লিখে ছাড় দিয়ে বিক্রি

সুশীল সরকার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
ক্রেতাদের অভিযোগ : চড়া দাম লিখে ছাড় দিয়ে বিক্রি

সুশীল সরকার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ): পূর্বাচলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ক্রেতা টানতে ব্যবসায়ীরা ছাড় দিচ্ছেন বিভিন্ন পণ্যে। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ মেলায় ভালো মানের নামিদামি কোম্পানীগুলো ছাড়া অনেক স্টল মালিকরা ছাড়ের নামে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। অনেক স্টলেই পণ্যের উপর চড়া মূল্য বসিয়ে ছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি করছেন বলে দর্শনার্থীরা অভিযোগ করেন। এতে অনেক ক্রেতাই মূল্যের ছাড় পেয়ে বোঁকার মতো পণ্য কিনছেন।

 

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় এবারের আসরে মোট ৩৩১ টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এদিকে আরএফএল, বেঙ্গল, নেসলে, আকতার ফার্নিচার, নাদিয়া ফার্নিচার, হাতিল ফার্নিচারসহ স্কয়ারের মতো ভাল ভাল প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অন্যান্য অপরিচিত প্রতিষ্ঠানও অংশগ্রহণ করেছে। ভাল ভাল নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রির কোন টার্গেট থাকে না। তারা মেলায় আসা দর্শনার্থীদের কাছে নিজেদের পণ্যকে পরিচিত করতে মেলায় অংশগ্রহণ করেন।

 

তবে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো মেলায় আসে অধিক মুনাফার উদ্দ্যেশ্যে। মেলার প্রথম দশ দিনে জমে না উঠলেও দশদিন পর থেকে পুরোপুরি জমে উঠেছে। মেলা শেষের দিকে হওয়ার কারণে দর্শনার্থী ও ক্রেতার সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। দর্শনার্থী বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশি বিক্রির উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যে বিভিন্ন রকম ছাড় দিচ্ছেন। আর ছাড় পেয়ে ক্রেতারা পণ্য কিনছেন নিজেদের পছন্দমতো। মেলায় সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে গৃহস্থালী পণ্যের স্টল গুলোতে।

 

বিভিন্ন গৃহস্থালি পণ্যের দোকানগুলোতে ১ টি আইটেমের পণ্য কিনলে ৯ টি আইটেম ফ্রি, এ ছাড়া এসব পণ্যে বিভিন্ন প্রকার লোভনীর ছাড় দিতে দেখা গেছে। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ এসকল পণ্যের গায়ে দাম বেশি দিয়ে পড়ে ছাড় দিচ্ছেন। এটি ব্যবসায়ীদের ছাড়ের নামে প্রতারণা ফাঁদ বলে আগত দর্শনার্থীরা অভিযোগ করেন। একই দৃশ্য দেখা যায় শীতকালীন বস্ত্রের দোকানগুলোতে। দোকান গুলোতে পণ্যে ছাড়ের নামে চলছে প্রতারণা। মেলার ভেতরে স্টলগুলোতে ছাড় দেওয়ার পর শীতকালীন পণ্যের দাম যা দেওয়া রয়েছে অথচ মেলার বাইরে অন্যান্য মার্কেটগুলোতে সে পণ্যের দাম একই। এ ছাড়া দেশীয় কাপড়কে বিদেশী কাপড় বলে বিক্রির অভিযোগও রয়েছে।

 

রূপগঞ্জের রূপসী কাজীপাড়া এলাকা থেকে মেলায় এসেছেন আবুল কালাম আজাদ। জিনিসপত্রের দাম সম্পর্কে কথা হলে তিনি বলেন, মেলায় জিনিসপত্রের দাম যেন আগুন। আমি এসেছিলাম পরিবারের জন্য কিছু কেনাকাটা করতে। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি। স্টলগুলোতে ছাড় দিয়ে পণ্যের দাম যা ধরা হয়েছে। এর চেয়ে কম দামে বাইরের দোকানে পাওয়া যায় ওসব পণ্য। এ কারণে অনেক ক্রেতাই প্রতারিত হচ্ছেন।

 

কথা হয় আক্তার মিয়া নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, মেলা শেষের দিকে হওয়ার কারণে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে এসেছিলাম। স্ত্রী ও মায়ের জন্য শাল কিনতে একটি কাপড়ের দোকানে যাই। গিয়ে দেখি সেখানে দেশীয় শালকে কাশ্মীরি শাল বলে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। আর ক্রেতারাও না বুঝে সেগুলো কাশ্মীরি শাল হিসেবে বেশি দাম দিয়ে কিনে নিচ্ছেন।

 

রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকা থেকে আসা মৌসুমী আক্তার বলেন, ঘরের জন্য কিছু গৃহস্থালির কেনাকাটা করতে মেলায় এসেছিলাম। কিন্তু মেলায় এসে দেখলাম মেলার অনেক প্রতিষ্ঠানই ছাড়ের নামে প্রতারণা করছে। যেটি দেখে ভাল লাগেনি। এ ছাড়া যেসকল কাপড় নিউ মার্কেটে ৫’শ থেকে ৮’শ টাকায় বিক্রি করা হয়। সেসকল পণ্য মেলায় ছাড় দিয়ে দেড় থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

 

কথা হয় রাজধানীর মধ্য বাড্ডা এলাকার আফতাব হোসেনের সঙ্গে তিনি বলেন, স্ত্রীকে নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছি। কাপড়েরর দোকানে গিয়ে দেখি জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি। অনেক দোকানেই পণ্যের উপর মূল্য ছাড়ের কাগজ লাগানো রয়েছে। ১ হাজার ১৫’শ টাকার জিনিসে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা লাগিয়ে ৪০% থেকে ৫০% ছাড় দিয়ে একটা মূল্য নির্ধারণ করে মূল্যের কাগজ লাগানো হচ্ছে। এটা ঠিকনা। এসব বিষয়ে ভোক্তা অধিকারের নজর দেয়া উচিৎ। না হয় মেলায় আসার আগ্রহ হারাবে মানুষ।

 

এ ব্যাপারে কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, আমরা অনেক টাকা দিয়ে স্টল নিয়েছে। তাছাড়া দোকানের কর্মচারী, অতিরিক্ত বাড়িভাড়া গুনতে হয়েছে। এ কারণে মেলায় পণ্যের দাম কিছুটা বেশি। তবে পণ্যে ছাড়ের নামে প্রতারণার বিষয়টি মিথ্যা। মেলা শেষের দিকে চলে আসায় আমরা নির্দিষ্টমূল্যের চেয়ে ছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি করে ফেলেছি।

 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েরর রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, মেলায় আগের চেয়ে লোকসমাগম বেড়েছে। মেলায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। কোথাও কোনো অসংগতি পেলে তারা জরিমানা করছে ব্যবসায়ীদের। এ ছাড়া ভোক্তারা চাইলে অভিযোগ করতে পারবে ভোক্তা অধিদপ্তরের কাছে।

 

ভোরের আকাশ/নি  

মন্তব্য

Beta version