-->

ঘাটতি ২৩৫ কোটি টাকা, নিয়মনীতির ধার ধারছে না প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
ঘাটতি ২৩৫ কোটি টাকা, নিয়মনীতির ধার ধারছে না প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: যেকোনো নিবন্ধনপ্রাপ্ত কোম্পানির কিছু নিয়মনীতি মেনে চলতে হয়। এর চেয়ে একটু কঠিন নিয়ম পালন করতে হয় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির। কারণ এসব কোম্পানিকে সরকারের কাছ থেকে সুবিধা পাওয়ার জন্য জবাবদিহিও করতে হয় সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এসব নিয়মনীতির ধার ধারছে না পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ আর্থিক হিসাবে নিরীক্ষকের তথ্যে এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।

 

প্রাপ্ত তথ্যমতে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শত শত কোটি টাকা পরিচালকরা নিজেদের কোম্পানির মাধ্যম সরিয়ে নিয়েছেন। একইভাবে তারা কোম্পানিটির অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নিয়মকেও তোয়াক্কা করেননি। যারা নিজেদের মতো করে আইডিআরএর বেঁধে নিয়মের থেকে কোথাও বেশি, কোথাও কম বিনিয়োগ করেছেন। নিরীক্ষক জানান, আইডিআরএর নির্দেশনা অনুযায়ী, জীবনবিমা কোম্পানির পলিসি হোল্ডারের দায় বা বিমাকারীর সম্পদের ৩০ শতাংশ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ সরকারি সিকিউরিটিজে ১৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু ৩০ শতাংশ হিসাবে ২৫৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা দরকার। এ হিসাবে সরকারি সিকিউরিটিজে ২৩৫ কোটি ৩২ লাখ টাকার বিনিয়োগ ঘাটতি রয়েছে।

 

এদিকে সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে বিমা কোম্পানি পলিসি হোল্ডারের দায় বা বিমাকারীর সম্পদের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারবে বলে আইডিআরএর নির্দেশনা আছে। তবে প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্স তা ভঙ্গ করে অতিরিক্ত বিনিয়োগ করেছে। বিমা কোম্পানিটির ১০ শতাংশ হারে সর্বোচ্চ ৮৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ থাকলেও করা হয়েছে ৮৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা। অন্যদিকে আইডিআরএর আরেক নির্দেশনায় স্থাবর সম্পদে পলিসি হোল্ডারের দায় বা বিমাকারীর সম্পদের ২০ শতাংশ বিনিয়োগের জন্য বলা হয়েছে। এ হিসাবে ওই সম্পদে প্রাইম লাইফের ১৬৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তারা করেছে ২৭৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। নিরীক্ষক জানান, বিমা কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের মালিকানা নেমে এসেছে ৩৮.০৮ শতাংশ। অথচ আইডিআরএর ২০১৮ সালের ২৯ মে’র নির্দেশনা অনুযায়ী কমপক্ষে ওই শেয়ার ধারণ ৬০ শতাংশ করা দরকার।

 

অন্যদিকে অন্যান্য বিনিয়োগের বিষয়ে আইডিআরএর নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ওই খাতে পলিসি হোল্ডারের দায় বা বিমাকারীর সম্পদের সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ বিনিয়োগ করা যাবে। এ হিসাবে অন্যান্য খাতে প্রাইম লাইফের সর্বোচ্চ ৪২ কোটি ১৭ লাখ টাকা বিনিয়োগের সুযোগ থাকলেও তারা করেছে ১৮৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ১৪৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা অতিরিক্ত বা নিয়মবহির্ভূত বিনিয়োগ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানি সরকারের পক্ষ থেকে ট্যাক্সাসহ অন্যান্য সুবিধা গ্রহণ করেন। ফলে তাদের উচিত সব নিয়ম মেনে চলা। কারণ তারা অনিয়ম করলে বিনিয়োগকরীও পলেসি হোল্ডারদের মধ্যে কোম্পানি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। এটা কোনো কোম্পানির জন্য ভালো নয়। কিন্তু তারপরও প্রায় এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে এ ধরনের খবর শোনা যায়।

 

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন,তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম পাওয়া যায় বিমার। বছরের পর বছর এমন কার্যক্রম সংঘটিত হলেও তাদের তেমন পরিবর্তন নেই। তাদের বিরুদ্ধে আরো কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। একই বিষয়ে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জবাবদিহি করা উচিত। কারণ তালিকাভুক্তির শর্তই হচ্ছে জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ। কেউ যদি সেটা না করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। বিমা খাতের এ কোম্পানিটি ২০০৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। প্রাইম ইসলামী লাইফের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৩০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৬৩.৯২ শতাংশ মালিকানা রয়েছে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন শ্রেণির (উদ্যোক্তা ও পরিচালক ব্যতীত) বিনিয়োগকারীদের হাতে। গতকাল বৃহস্পতিবার এ কোম্পানির শেয়ার ৬১ টাকা ৪০ পয়সায় কেনাবেচা হয়। ২০১৯ সালে কোম্পানিটি তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ করে লভ্যাংশ প্রদান করে।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version