-->

বিদেশে পাচার অর্থ উদ্ধারে জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার

মো. রেজাউর রহিম
বিদেশে পাচার অর্থ উদ্ধারে জোরালো
পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার

মো. রেজাউর রহিম: বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার ব্যাপারে সরকার জোরালো পদক্ষেপ ও কার্যক্রম শুরু করেছে। আর বিদেশে পাচারকৃত অর্থ যেকোনো মূল্যে দেশে ফেরত আনার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর সরকার। এছাড়া অর্থ পাচার বন্ধে পাচারের সম্ভাব্য উৎসগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনতে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সমন্বিতভাবে কাজ শুরু করছে। অন্যদিকে বিভিন্ন দেশে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া বেশ জটিল বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

 

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিদেশে অর্থ পাচার রোধ এবং পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার পাশাপাশি পাচারকারীদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ পুলিশের সিআইডি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সমন্বিতভাবে কাজ করছে।

 

এদিকে মালয়েশিয়া, কানাডা, হংকং, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফ্ল্যাট বা বাড়ি ক্রয়, অবৈধ ব্যবসা বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে অর্থ পাচার সংক্রান্ত বেশ কিছু মামলা বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। অর্থ পাচারের সম্ভাব্য উৎসগুলো বন্ধ করার পাশাপাশি অর্থ পাচার রোধ এবং পাচারকৃত অর্থ বাংলাদেশে ফেরত আনার বিষয়ে সরকার জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা একযোগে কাজ করছে।

 

সূত্র জানায়, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ-সম্পদ উদ্ধার এবং দেশে ফেরত আনতে অ্যাটর্নি জেনারেলের নেতৃত্বে একটি আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স কাজ করছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দায়েরকৃত অর্থ পাচার-সংশ্লিষ্ট বেশকিছু মামলাও চলমান রয়েছে। অন্যদিকে, পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পারস্পরিক আইনগত চুক্তি ও সহযোগিতা নিশ্চিত করার জন্যও কাজ করছে সরকার।

 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের আকাশকে জানান, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) পাচারকারী বা পাচারকৃত অর্থের বিষয়ে বিভিন্ন দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করছে। এছাড়া পাচার রোধকল্পে এবং পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে সংস্থার পক্ষ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশের সিআইডি শাখা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থাকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করছে।

 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, পাচারকৃত অর্থ ও সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সহযোগিতামূলক কর্মকান্ড সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এজন্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে যেসব দেশে অর্থ পাচার হয়েছে, সেসব দেশের জন্য বিভিন্ন চুক্তি সম্পাদনের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। এছাড়া অর্থ ও সম্পদ পাচার সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পারস্পরিক সহায়তা, চুক্তি সম্পাদনের জন্য কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ পাচার সংক্রান্ত বেশকিছু মামলা বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তাধীন রয়েছে।

 

এদিকে সম্প্রতি জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, দেশ থেকে অর্থ পাচারের পরিমাণ যাই হোক, পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার ব্যাপারে সরকার বদ্ধপরিকর। তবে বিদেশে পাচার করা দেশের অর্থ উদ্ধার করার প্রক্রিয়া বেশ জটিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন পদ্ধতিগত ও আইনি জটিলতার কারণে অর্থ উদ্ধারে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়। অর্থ পাচারের পরিমাণ নির্ধারণের বিষয়টিও বেশ দুরূহ।

 

অর্থমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন উন্নয়ন ও গবেষণা সংস্থা বিভিন্ন ধরনের মেথোডলজি ব্যবহার করে পাচার করা অর্থের পরিমাণ সম্পর্কে প্রাক্কলন করলেও তার যথার্থতা ওইসব প্রতিষ্ঠানও দাবি করে না। আর এসব সংস্থার প্রতিবেদনে বাংলাদেশ থেকে কী পরিমাণ অর্থপাচার হয় সে বিষয়ে পরস্পরবিরোধী তথ্য পরিলক্ষিত হয়। সরকারের পদক্ষেপে অবৈধ অর্থ পাচার আগামীতে অনেকাংশে কমে আসবে এবং বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনা সম্ভব হবে আশা প্রকাশ করে

 

অর্থমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন দেশে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে সরকার বিভিন্ন জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং আইনগত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এ বিষয়ে সহযোগিতামূলক কর্মকান্ড সম্প্রসারণ হয়েছে।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এমনিতেই সামনের দিনগুলোতে সংকটের আশঙ্কা রয়েছে। সংকট মোকাবিলায় এবং উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়তে যে কোনো মূল্যে দেশ থেকে অর্থ পাচার বন্ধ করতে হবে। এছাড়া দেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে এনে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক গতিশীলতা বৃদ্ধিতে জোরোলো পদক্ষেপ নিতে হবে। আর বিদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হলে এবং এ অর্থ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ সম্ভব হলে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার কাজটি অনেকাংশে সহজ হবে বলেও মনে করেন তারা।

 

ভোরের আকাশ/নি

মন্তব্য

Beta version