-->

ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির শঙ্কা

রুবেল দাশ, চট্টগ্রাম
ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির শঙ্কা
ডলার সংকটে এলসি খোলা হচ্ছে না

রুবেল দাশ, চট্টগ্রাম : ডলার সংকটের কারণে চলতি বছর ভোগ্যপণ্য আমদানির পর্যাপ্ত এলসি খুলতে পারছেন না আমদানিকারকরা। এরই সূত্র ধরে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ভোগ্যপণ্যের আমদানি কমেছে। তবে রোজায় পরিস্থিতি সামাল দিতে সংকটময় সময়েও চলছে সাধ্যমতো এলসি খোলার প্রস্তুতি। এসব পণ্য চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে আসলে ‘কোনোমতে’ রোজার মাস সামাল দেয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে কিনা, তার নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না কেউই। উল্টো বিশ্ববাজারে পণ্যের দর বৃদ্ধি বা ডিজেলের দাম বাড়লে রোজায় পণ্যের দামও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

 

আমদানিকারক ও খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোনো পণ্য আমদানি করতে হলে কমপক্ষে ৩ মাস আগে থেকে এলসি খুলতে হয়। রমজান উপলক্ষে ডাল, ছোলা, তেল, চিনিসহ সংশ্লিষ্ট সব পণ্য আমদানি করতে গত ডিসেম্বর মাসে এলসি খুলেছেন আমদানিকারকরা। এসব পণ্য ফেব্রæয়ারিতে প্রবেশ করবে। পাশাপাশি জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়েও কিছু এলসি খোলা হবে। এসব পণ্য আসবে মার্চে। চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) যে পরিমাণে ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছিল চলতি অর্থবছরে একই সময়ে তার চেয়ে কমেছে।

 

 

২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে ৩ লাখ ১৬ হাজার টন চিনি আমদানি হয়েছিল। অথচ চলতি অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৪১ হাজার টন চিনি। ফলে সরবরাহ সংকট দেখিয়ে খাতুনগঞ্জেও বেড়েছে চিনির দাম। ৩ মাস আগে প্রতিমণ চিনি ৩ হাজার ৬৮০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে ৩ হাজার ৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে রমজান ঘিরে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ লাখ ৬৮ হাজার ২৯৭ টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৭২ টন ছোলা আমদানি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ছোলা ও মটরশুঁটি মিলে ২ লাখ ১৭ হাজার টন পণ্য আমদানি হয়েছে। কানাডা, ইথিওপিয়া, ভুটানসহ বিশে^র ১৫টি দেশ থেকে এসব ছোলা আমদানি হয়েছে। চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ৮০ হাজার টন ছোলার চাহিদা রয়েছে।

 

 

তাই ছোলায় সংকট হবে না। তবে এ বছর বেশি পরিমাণে তেল আমদানি হয়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ৬ লাখ ৭১ হাজার টন সয়াবিন ও পামতেল আমদানি হয়েছিল। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ৯ লাখ ৪৯ হাজার টন তেল আমদানি হয়। বর্তমানে খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ সয়াবিন তেল ৬ হাজার ৬৮০ ও পামতেল ৪ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

এদিকে রমজান ঘিরে বেড়েছে ফলের আমদানি। গত বছরের আগস্ট মাসের পর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ফলের আমদানি বেড়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত সেপ্টেম্বর মাসে কমলা, মাল্টা, আপেল, নাশপতি ও আঙুর মিলে সাড়ে ২১ হাজার টন, অক্টোবরে ৩৩ হাজার ৪৫৫ টন, নভেম্বরে ৩৪ হাজার ১৯১ টন ও ডিসেম্বরে ৪২ হাজার টন ফল আমদানি হয়েছে। খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সেক্রেটারি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ভোরের আকাশকে বলেন, রোজার মাসে ডাল, ছোলা, চিনি, তেলের চাহিদা বেশি থাকে। গত বছর প্রচুর পরিমাণে ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছিল। এ বছর ডলার সংকটে পর্যাপ্ত পরিমাণে এলসি খোলা সম্ভব হয়নি।

 

 

রোজার এখনো ৩ মাস বাকি। ডিসেম্বরে যেসব এলসি খোলা হয়েছে তা ফেব্রæয়ারিতে আসবে। জানুয়ারির মাঝামাঝিতেও কিছু এলসি খুলবেন আমদানিকারকরা। এ পণ্যগুলো মার্চে আসবে। তাই রোজাতে যেসব ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ থাকবে তা দিয়ে কোনোমতে পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব হবে। তবে গত বছরের মতো রোজার পণ্য উদ্বৃত্ত থাকবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোজায় ভোগ্যপণ্যের দাম কেমন থাকবে, তা এখনো বলা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ বিশ^বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেলে অথবা ডিজেলের দাম বাড়লে তখন পণ্যের দামও বেড়ে যাবে।

 

 

এদিকে বর্তমানে খাতুনগঞ্জে বর্তমানে যে পরিমাণে মরিচ, হলুদ, রসুন, আদা, পেঁয়াজ ও এলাচ রয়েছে তা দিয়ে রোজার মাস সামাল দেয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে পাইকারিতে প্রতি কেজি শুকনা মরিচ ৪৬৯, রসুন ৯৬, হলুদ ১১০, আদা ১২০ ও পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া প্রতি কেজি এলাচ ১ হাজার ২০০, দারুচিনি ৪৮০ ও লবঙ্গ ১ হাজার ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রোজার মাসেও এসব পণ্যের দাম আর বাড়বে না বলে আশা করছেন তারা।

 

 

খাতুনগঞ্জ হামিদউল্লাহ মিয়া মার্কেট (পেঁয়াজ) ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ইদ্রিস ভোরের আকাশকে বলেন, এবার আমদানিকারকরা বেশি পরিমাণে এলসি খুলতে পারেননি। তবে বাজারে এখন যে পরিমাণে মসলা জাতীয় পণ্য রয়েছে, তা দিয়ে রোজার পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে। পাশাপাশি রোজার মধ্যেই দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসবে। তাই আশা করি, রোজায় মসলাজাতীয় পণ্যের ঘাটতি পড়বে না এবং দামও বাড়বে না।

 

ভোরের আকাশ/মি/আসা

মন্তব্য

Beta version