-->

জরিমানায় নাখোশ বানকো ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
জরিমানায় নাখোশ বানকো ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট

লাভেলো আইসক্রীম, সী পার্ল, বিবিএস কেবলস কিছু কোম্পানিতে শেয়ার ধারন না করেও ১০ কোটি টাকার আর্থিক ও ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞার শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে বানকো ব্যবস্থাপনা পরিচালক হামদুল ইসলামকে। এছাড়া তার আত্মীয়-স্বজন বানকো ফাইন্যান্সের মালিকানায় কোনভাবে জড়িত না সত্তে ও ওইসব কোম্পানির প্লেসমেন্ট কেনার দায়ে , তারেকে ১৬ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বিষযটিতে নাখোশ হয়েছে বানকো ফাইন্যান্স কর্তৃপক্ষ।

 

জানা যায় স¤প্রতি প্রত্যক্ষভাবে মালিকানায় সম্পৃক্ত থাকার পরেও ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সকে পুঁজিবাজারে আনার জন্য ইস্যু ব্যবস্থাপনার ায়িত্ব পালন করেছে সোনার বাংলা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট। একইভাবে বিডি থাই ফুডের শেয়ার ধারন সত্তে¡ও সাউথইস্ট ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস ও আলমগীর কবিরের নিয়ন্ত্রণাধীন বিএলআই ক্যাপিটাল কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার কাজ করেছে। এতে আইনে কোন পদক্ষেপ নিতে খো যায়নি। অথচ বানকোর বেলায় এ নীতি মানা হয়নি।

 

বানকো ইস্যু ব্যবস্থাপনার ায়িত্ব পালন করা কোম্পানিগুলোতে হামুল ইসলামের আত্মীয়-স্বজন প্লেসমেন্ট শেয়ার ধারন করায়, ২০১৫ সালের পাবলিক ইস্যু রুলসের ৩(২)(ডি) লঙ্ঘন হয়েছে বলে বিএসইসির াবি। এ কারনে হামুল ইসলাম ও তার পরিবারকে জরিমানা করেছে বিএসইসি। কিন্তু বিএসইসির আইনে কোন ইস্যু ম্যানেজার প্রতিষ্ঠানের এমডির আত্মীয়-স্বজন শেয়ার ব্যবসা করতে পারবে না, এমনটি নেই।

 

ইস্যু ম্যানেজারের সংজ্ঞায় সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজার) বিধিমলিা ১৯৯৬ এর ২(ঞ) ধারায় বলা হয়েছে, মার্চেন্ট ব্যাংকার অর্থ এমন ব্যক্তি যিনি এই বিধিমালার অধীন করপোরেট উপদেষ্টা, পোর্টফোলিও ম্যানেজার, অবলেখক এবং ইস্যু ব্যবস্থাপক হিসেবে যাবতীয় কাজ করার জন্য নিবন্ধন সনদ প্রাপ্ত হইয়াছেন। আর ব্যক্তি অর্থ কোম্পানী, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা।

 

২০১৫ সালের পাবলিক ইস্যু রুলসের ৩(২)(ডি)-তে বলা হয়, ইস্যু ম্যানেজার ইস্যুয়ারের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারবে না এবং শেয়ার ধারন করতে পারবে না। যা ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই সংশোধনীতে বলা হয়, ইস্যু ম্যানেজার ও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত কোন ব্যক্তি ইস্যুয়ারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারবে না এবং শেয়ার ধারন করতে পারবে না।

 

বিএসইসির সংজ্ঞা অনুযায়ি, ইস্যু ম্যানেজার বানকো ফাইন্যান্স। যার সঙ্গে সম্পৃক্ত ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মালিকগন। কিন্তু বিএসইসি বানকো ফাইন্যান্সের ইস্যুয়ার কোম্পানির শেয়ার হামদুল ইসলামের আত্মীয়-স্বজন কেনার জন্য জরিমানা করেছে। যার কোনটি থেকেই হামদুল ইসলাম শেয়ার কিনেন নাই। অথচ এই বিএসইসিই স¤প্রতি ইস্যু ম্যানেজার সোনার বাংলা ক্যাপিটালের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সকে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন দিয়েছে। সেক্ষেত্রে কোন সমস্যা হয়নি।

 

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের খসড়া প্রসপেক্টাস অনুযায়ি, এই কোম্পানিটি থেকে সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সে বিনিয়োগ করা হয়েছে। যার সাবসিডিয়ারি কোম্পানি সোনার বাংলা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট। অর্থাৎ ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের মালিকানা সোনার বাংলা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টেও রয়েছে।

 

এ বিবেচনায় মালিকানাধীন ইস্যু ম্যানেজারের তত্ত¡াবধানে পুঁজিবাজারে এসেছে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স। সেটা কোন বাধাঁ বা আইনগত সমস্যা হয়নি। অন্যদিকে আরেক কোম্পানি বিডি থাই ফুড অ্যান্ড বেভারেজও রয়েছে একই ধরনের ঘটনা। চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি লেনদেন শুরু হওয়া কোম্পানিটিকে বাজারে আনতে ইস্যু ব্যবস্থাপনার কাজ করেছে বিএলআই ক্যাপিটাল লিমিটেড। যার হোল্ডিং কোম্পানি বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট।

 

অন্যভাবে বললে, বে লিজিংয়ের সাবসিডিয়ারি বা অধীনস্থ কোম্পানি বিএলআই ক্যাপিটাল। এই বে লিজিং, বিএলআই ক্যাপিটাল ও সাউথইস্ট ব্যাংকের কিছু পরিচালকের কমন শেয়ার ধারন রয়েছে। যারা আবার বিডি থাই ফুডেরও শেয়ার ধারন করেছে।বিডি থাই ফুডে আইপিও পূর্ব বা প্লেসমেন্ট শেয়ারহোল্ডার হিসেবে রয়েছেন- বিএলআই ক্যাপিটালের পরিচালক হূমায়ন কবির, সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর কবির, সাউথইস্ট ব্যাংক ও সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস। যাদের শেয়ার ৩ বছর লক-ইন থাকবে।

 

এই ৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিডি থাই ফুডের ১ লাখ শেয়ার ড. হূমায়ুন কবির, ২০ হাজার শেয়ার আলমগীর কবির, ৬২ লাখ শেয়ার সাউথইস্ট ব্যাংক ও ৩২ লাখ শেয়ার সাউথইস্ট ব্যাংক সার্ভিসেস ধারন করে আসছে। আর তাদেরই নেতৃত্বাধীন বা সম্পৃক্ত বিএলআই ক্যাপিটাল ইস্যু ব্যবস্থাপনার কাজ করেছে বিডি থাই ফুডের।

 

আলমগীর কবির সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান হলেও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বে-লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের বড় শেয়ারহোল্ডার ছিলেন। যিনি স¤প্রতি কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী সুরাইয়া বেগম বে-লিজিংয়ের উদ্যোক্তা পরিচালকদের একজন, পরিচালক তারিক সুজাত ভাগনে আর পরিচালক জুবায়ের কবির তাঁর ভাতিজা। স্বতন্ত্র পরিচালক জাইদি সাত্তার সাউথইস্ট ব্যাংক ফাউন্ডেশনের পরিচালক।

 

আবার শেয়ারহোল্ডার হিসেবে বে-লিজিংয়ের ইভিপি এম মনিরুজ জামান খান সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালক পদেও আছেন।

 

ভোরের আকাশ/নি

 

মন্তব্য

Beta version