-->

পুঁজি রক্ষায় কোনো থিওরিই কাজে লাগছে না

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
পুঁজি রক্ষায় কোনো থিওরিই কাজে লাগছে না

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পতনমুখী পুঁজিবাজারে টিকে থাকার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করেন বিনিয়োগকারীরা। কখনো এক খাতের শেয়ার ছেড়ে দিয়ে অন্য খাতের শেয়ারে বিনিয়োগ করেন তারা। কখনো ঝুঁকে পড়েন অপেক্ষাকৃত কম দরের শেয়ারে। আবার সুয়োগমতো ‘বি’ ক্যাটাগরির শেয়ারেও বিনিয়োগ করেন। কখনো আবার অল্প পুঁজিতে বেশি লাভের আশায় বিনিয়োগ করতে দেখা যায় ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ারে। এসব কারণেই বারবার পোর্টফোলিওতে পরিবর্তন আনেন তারা। কিন্তু পুঁজি রক্ষায় এর কোনো থিওরিই কাজে আসছে না। প্রতিদিনই তাদের লোকসান ভারী হচ্ছে। এতে বেকায়দায় পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

 

দীর্ঘদিন টানা সূচকের পতনের পর গত মাসে একবার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে পুঁজিবাজার। টানা সাত কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী ছিল সূচক, কিন্তু তা স্থায়ী হয়নি। হঠাৎই এর চিত্র বদলে গেছে। নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে সূচক। ছোট ছোট পতন থেকে এখন তা বড় পতনে রূপ নিয়েছে। ফলে যারা সম্প্রতি বাজারে এসেছিলেন তারা বেকায়দায় পড়েছেন। পুঁজি রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছেন ভুক্তভোগী এসব বিনিয়োগকারী। যে কারণে ঘন ঘন সিদ্ধান্ত বদলে এক কোম্পানির শেয়ার থেকে অন্য কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছেন তারা। কিন্তু এতে কোনো লাভই হচ্ছে না বলে মনে করেন বিনিয়োগকারীরা।

 

ভুক্তভোগীরা জানান, বাজারের নাজুক পরিস্থিতিতে নিজেদের পুঁজি রক্ষার চেষ্টা করছেন বিনিয়োগকারীরা। এ ক্ষেত্রে তারা বেছে নিয়েছেন সমন্বয় ও পোর্টফোলিওতে পরিবর্তন। কেউ কেউ বড় লোকসানের ভয়ে কম লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে পুঁজি তুলে নেয়ার চেষ্টা করছেন।

 

জানতে চাইলে লুৎফর রহমান নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, পুঁজি টিকিয়ে রাখার জন্য সমন্বয়সহ সব ধরনের চেষ্টা করেছি। আগে এর কিছুটা ফল পেলেও এখন আর তা পাওয়া যাচ্ছে না। বলতে গেলে এখন পোর্টফোলিওটা ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। এ ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না। লাভের বদলে প্রতিদিনই লোকসানের হিসাব কষছি। আমার মতো অবস্থা আরো অনেক বিনিয়োগকারীর।

 

সাম্প্রতিক বাজারচিত্রে দেখা যায়, সূচকের পতন থামছেই না। ছোট ছোট পতনের পাশাপাশি হচ্ছে হঠাৎ বড় পতন। গত এক সপ্তাহে ডিএসইর সূচক ৬ হাজার ৪১০ পয়েন্ট থেকে কমে ৬ হাজার ৩৫৩ পয়েন্টে চলে এসেছে। এ সময় বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।

 

এদিকে পুঁজি বাঁচাতে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে অনেকে বাজার থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। এমনকি হাতে থাকা মৌলভিত্তির শেয়ারের ক্ষেত্রেও একই নীতি অবলম্বন করছেন তারা। আবার লোকসানের ভয়ে এক কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে কিনছেন অন্য কোম্পানির শেয়ার। তবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যারা এ পথে হাঁটছেন, তাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

 

তারা এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন না। তারা বলছেন, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এক শেয়ার ছেড়ে অন্য শেয়ারে গেলে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হতে পারেন না। বরং তারা বারবার শেয়ার কেনাবেচা করলে হাউস কর্তৃপক্ষই লাভবান হয়।

 

বিষয়টি নিয়ে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, পুঁজিবাজারে কিছু বিনিয়োগকারী দ্রুত মুনাফা করে তা ঘরে তুলতে চান। আবার লোকসানের ভয়ে এক কোম্পানি ছেড়ে অন্য কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করেন। এ সময় কেউ কেউ অপেক্ষাকৃত দুর্বল কোম্পানিতে ঝুঁকে পড়েন। কিন্তু যারা ঝুঁকি নিতে চান না, তারা ভালো কোম্পানির সঙ্গে থাকেন। এখানে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করলে তাদের ভালো মুনাফা তৈরির সম্ভাবনা তৈরি হয়।

 

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ্রকটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, বিনিয়োগকারীদের উচিত সব সময় ভালো মানের কোম্পানির সঙ্গে থাকা। এতে তারা সব সময়ই অপেক্ষাকৃত নিরাপদে থাকতে পারেন। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা গুজবে কান দিয়ে কিংবা অন্যের দেয়া সংবাদে দ্রুত লাভবান হওয়ার জন্য যে কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন। তারা লোকসানে এক কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে অন্য কোম্পানির শেয়ার কেনেন। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই এর ফল উল্টো হয়। একসময় এসব শেয়ার নিয়ে তাদের পস্তাতে হয়। তিনি বলেন, অনেক সময় হাউস থেকেই বিনিয়োগকারীদের এক শেয়ার ছেড়ে অন্য শেয়ারে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেয়া হয়। এটা ঠিক নয়। এতে হাউস কর্তৃপক্ষই লাভবান হন, বিনিয়োগকারী নয়।

 

একই প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা ভালো কোম্পানির সঙ্গে থাকলে তা বাজার ও বিনিয়োগকারী- উভয়ের জন্যই ভালো। অধিক লাভের আশায় নামসর্বস্ব কোম্পানিতে বিনিয়োগ না করে তাদের উচিত ভালো কোম্পানিতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করা; কারণ এখানে খুব বেশি লাভ না হলেও লোকসান হওয়ার শঙ্কা থাকে কম।’ বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন ভালো নয়।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version