-->
আইএমএফের ঋণ নিতে যে বিষয়গুলো আলোচনায়

শর্তের কারণে আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ভালো লক্ষণ 

জাফর আহমদ
শর্তের কারণে আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ভালো লক্ষণ 

জাফর আহমদ: বৈশিক অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিও চাপে। এই সংকট যাতে আরো তীব্র না নয়, এ জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে সরকার। বিষয়টি যতটা আলোচনা হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি আলোচিত আইএমএফ থেকে ঋণ নিতে অর্থনীতিতে যেসব সংস্কার কার্যক্রম শুরু করতে হবে, তা কতটা সম্ভব হবে। অর্থনীতিতে এর ফলই বা কী দেবে।

 

৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ দিতে আইএমএফ প্রাথমিকভাবে সমঝোতায় পৌঁছায়। ২৬ অক্টোবর থেকে শুরু করে পক্ষকাল আলোচনা শেষে গত বুুধবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সম্মতির কথা জানায় আইএমএফ। সংবাদ সম্মেলনে ঋণ দেয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের যেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া দেখতে চায় আইএমএফ, তা হলো ব্যাংকিং খাতের সংস্কার, প্রবৃদ্ধি সহায়ক মুদ্রানীতির ব্যবহার ও রাজস্ব বৃদ্ধিতে সংস্কার কার্যক্রম। ৭ কিস্তিতে এ ঋণ দেয়া হবে। প্রথম কিস্তিতে ঋণ দেয়া হবে ফেব্রুয়ারী মাসে।

 

পরের কিস্তির ঋণগুলো ছাড় হবে শর্তগুলো পালন সাপেক্ষে। এর বাইরে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবিলায় কার্যক্রম গ্রহণসহ আরো যেসব শর্ত মানতে হবে, সেগুলো সরকারের পক্ষ থেকেই ইতোমধ্যে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

 

আইএমএফের ঋণের আশ্বাসে স্বস্তি দেখছেন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) নেতা আ. রহিম ফিরোজ। তিনি বলেন, অর্থনীতি যে অবস্থায় উপনীত সেখানে আইএমএফের ঋণ প্রতিশ্রুতিতে পুরো অর্থনীতি জুড়ে এক ধরনের স্বস্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তবে এই ঋণ আরো দুই মাস আগে পেলে ভালো হতো। ডিসেম্বর মাসে সরকারের বড় ধরনের পেমেন্ট আছে।

 

মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ আরো গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানির জন্যও বড় ধরনের পরিশোধ আছে ডিসেম্বরে। আইএমএফের প্রতিশ্রুতিতে মানসিক স্বস্তি তৈরি হয়েছে। দুই মাস আগে কিস্তির অর্থ পেলে ডিসেম্বরে সরকারের বৈদেশিক পরিশোধে স্বস্তি আসবে।

 

সুশাসনের অভাব ও খেলাপি ঋণ ব্যাংকিং খাতের প্রধান সমস্যা। নানা রকম সুবিধা দেয়ার পরও খেলাপি ঋণের হার প্রায় ১০ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকসহ কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের গড় খেলাপি হারের তিন গুণেরও বেশি। সুশাসনের অভাবে ডুবতে বসেছে ব্যাংকিং খাত। ব্যাংক সংস্কারের উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও আলোর মুখ দেখেনি।

 

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতেও সুশাসনের অভাবে নানা অনিয়ম সামনে আসছে। বাংলাদেশের ট্যাক্স-জিডিপি সবচেয়ে কম। রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়ায় সংস্কার কার্যক্রম ত্বরান্বিত দেখতে চায় আইএমএফ। কিন্তু এসব সংস্কার কার্যক্রম কতটা চলমান থাকবে, তা নির্ভর করবে সরকারের সদিচ্ছার ওপর।

 

খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে ইতোমধ্যে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। শিগগিরই আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। এ ঘোষণা আগেও একবার দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

 

কোন পরিস্থিতিতে আইএমএয়ের ঋণের প্রয়োজন হচ্ছে : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সংকটে পড়ে বৈশিক অর্থনীতি। মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি করে। এর প্রভাব পড়ে বাংলাদেশেও। যুদ্ধের আগে যে দামে পণ্য আমদানি করা হতো, যুদ্ধকালীন একই পণ্য আমদানি করতে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়ে যায়। দাম বেড়ে যায় আমদানিনির্ভর সব ধরনের খাদ্যপণ্যের।

 

এর প্রভাবে দেশের বাজারে বেড়ে যায় সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম। টান পড়ে রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ে। ফলে ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ঘাটতি আরো বেড়ে যায়। এতদিন রপ্তানি আয়, প্রবাসী আয় বা বৈদেশিক ঋণ ও সহায়তা দিয়ে আমদানি ব্যয় সামাল দেয়া হতো। এখন আর সম্ভব হচ্ছে না। খাদ্য পরিস্থিতি, বৈদেশিক লেনদেনে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি করেছে। এর প্রভাবে উৎপাদন, বিপণনও বাধাগ্রস্ত হয়। এ অবস্থা সামাল দিতে রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে সংকট আরো বেশি বড় হচ্ছে। এ অবস্থায় আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিতে চেষ্টা করে সরকার। সরকারের সঙ্গে আলোচনা শেষে সম্মত হয় আন্তর্জাতিক এই অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানটি।

 

ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি। এ বিষয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করলেও শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। এক ধরনের সুবিধাভোগীর কারণে এ উদ্যোগ এগোতে পারেনি। আইএমএফের শর্তের কারণে যদি সম্ভব হয় তাহলে এটা হবে ভালো খবর। আ. রহিম ফিরোজ বলেন, সুশাসন সব ক্ষেত্রেই প্রথম অগ্রাধিকার। এটা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ব্যাংকিং খাতে আরো বেশি জরুরি। কয়েক বছর আগে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে চলে যাওয়া হলো। সুশাসন থাকলে এটা হতো না। খেলাপি বলেন বা অন্য যে কোনো অনিয়ম বলেন, এসব হচ্ছে সুশাসনের অভাবে।

 

 

ভোরের আকাশ/নি

মন্তব্য

Beta version