-->
চাহিদার তুলনায় কোম্পানি কম

বহুজাতিকেই আস্থা বিনিয়োগকারীদের

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
বহুজাতিকেই আস্থা বিনিয়োগকারীদের

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বহুজাতিক কোম্পানির সংখ্যা সীমিত। বর্তমানে পুঁজিবাজারে মোট ৬৫৭টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড, বন্ড ও ডিবেঞ্চার তালিকায় ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে বহুজাতিক কোম্পানির সংখ্যা মাত্র ১২। মৌল ভিত্তির যোগ্যতা বা আর্থিক দিয়ে অন্যান্য কোম্পানির চেয়ে এসব প্রতিষ্ঠান এগিয়ে রয়েছে। শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়ার দিক দিয়েও এসব কোম্পানি এগিয়ে রয়েছে। যে কারণে ঘুরেফিরে এসব কোম্পানিতেই আস্থা বিনিয়োগকারীদের। দীর্ঘদিন সার্বিক বাজার পরিস্থিতি নাজুক থাকায় এসব কিছুটা পিছিয়ে গেলেও সম্প্রতি আবারো এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

 

রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসে (আরজেএসসি) নিবন্ধিত বহুজাতিক কোম্পানির সংখ্যা হচ্ছে ৩৫৫। এর মধ্যে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত রয়েছে মাত্র ১২টি। এগুলো হচ্ছেÑ বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ, ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো, গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন, গ্রামীণফোন, ম্যারিকো বাংলাদেশ, লিন্ডে বাংলাদেশ, রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশ, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট লিমিটেড, সিঙ্গার বাংলাদেশ, রবি আজিয়াটা এবং বাটা সু। বর্তমানে যদিও সম্প্রতি গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের মালিকানা কিনে নিয়েছে ইনিলিভার। প্রাপ্ত তথ্যমতে, সম্প্রতি বাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানিতে বিনিয়োগ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। বাজারসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, তিন কারণে এসব কোম্পানির শেয়ারে ঝোঁক বিনিয়োগকারীদের। প্রথমত, এসব কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ভালো। দ্বিতীয়ত, আগামী মাসে এসব কোম্পানির আর্থিক বছর শেষ হচ্ছে। এরপরই আসবে লভ্যাংশ মৌসুম। তৃতীয়ত, এখন এসব কোম্পানির শেয়ারদর অনেক কম। এখান থেকে বিনিয়োগ করলে আগামীতে ভালো মুনাফা করা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, যেসব বহুজাতিক কোম্পানি আমাদের দেশে ব্যবসা করছে তাদের বেশিরভাগের আর্থিক অবস্থা ভালো। তাদের লভ্যাংশ প্রদানের হারও ভালো। যে কারণে বিনিয়োগকারীদের এসব কোম্পানির শেয়ারে ঝোঁক বেশি। এখন বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর অনেক কম। হয়তো সে কারণেই এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

 

বাজারসংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বাংলাদেশে পুঁজিবাজারের যে আকার, সেই তুলানায় বহুজাতিক কোম্পানির সংখ্যা কম। অর্থাৎ পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানির অভাব রয়েছে। গত ১৩ বছরে বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানির সংখ্যা বাড়লেও পুঁজিবাজারে আসেনি কোনো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ ২০০৯ সালে তালিকাভুক্ত হয় গ্রামীণফোন। এর এক দশক পর দুই বছর আগে তালিকাভুক্ত হয় রবি আজিয়াটা। এরপর আর কোনো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা ধরনের চেষ্টা সত্ত্বেও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বছরের পর বছর ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে। কিন্তু পুঁজিবাজারে না আসায় এসব কোম্পানির মুনাফার কোনো সুফল পাচ্ছেন না দেশবাসী। গত তিন বছর আগে এসব কোম্পানি বাজারে আনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে কিছু প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর মধ্যে অন্যতম ছিল বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী করে তুলতে বাধ্যবাধ্যকতা আরোপের পাশাপাশি কর হ্রাসসহ একাধিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান। এক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানির করহার অতালিকাভুক্ত বিদেশি কোম্পানির চেয়ে ১৫ শতাংশ কম নির্ধারণ করা যেতে পারে বলে প্রস্তাব করা হয়। একই সঙ্গে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত না হলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশের ওপর প্রয়োজনে বর্ধিত হারে করারোপসহ প্রাপ্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কাটছাঁট করার প্রস্তাব করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। কিন্তু এরপর আর কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।

 

পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের পুঁজিবাজারকে আরো শক্তিশালী করার জন্য বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তি জরুরি। কিন্তু বিভিন্ন কৌশলে কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজার থেকে দূরে সরে রয়েছে। এ অবস্থায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বিষয়ে সরকারকে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন তারা। এ বিষয়ে এখন দ্বিমত নেই বিএসইসি, ডিএসই (ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ) ও সিএসইর (চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ)। সূত্রমতে, বাংলাদেশে ব্যবসা করার জন্য কোম্পানিগুলোকে আরজেএসসি থেকে নিবন্ধন সনদ নিতে হয়। এ নিবন্ধনের সময় শর্তারোপ করে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির ব্যাপারে বাধ্য করা যেতে পারে বলেও প্রস্তাব করেছিল বিএসইসি। এছাড়া কোম্পানির মূলধনের একটি নির্দিষ্ট অংশ পুঁজিবাজার থেকে পাবলিক অফারের মাধ্যমে সংগ্রহের শর্তারোপ করা যেতে পারে। এছাড়া বহুজাতিক কোম্পানিগুলো কোনো না কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সঙ্গে সম্পৃক্ত, এদের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে বাধ্য করার সুপারিশ করে বিএসইসি। প্রসঙ্গত, দেশীয় মৌল ভিত্তিসম্পন্ন তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা কম হওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানিতেই সাধারণত বিনিয়োগ করেন। অন্যদিকে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মৌল ভিত্তি ভালো হওয়ায় এ কোম্পানিগুলো ঘিরে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ অনেক বেশি।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version