-->
বিনিয়োগকারীরা তীর্থের কাক

পুঁজিবাজারে মাসে বড় পতন ৬ বার

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
পুঁজিবাজারে মাসে বড় পতন ৬ বার

পুঁজিবাজারে পতন থামছেই না। সময় যত গড়াচ্ছে বাজারের সার্বিক অবস্থা ততই খারাপ হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ছোট ছোট পতনের মধ্যে মাঝে মাঝেই আঘাত হানছে বড় পতন। এতে বিনিয়োগকারীদের পরিকল্পনা ভেস্তে যাচ্ছে। বাজার পরিস্থিতি বদলাবে এমন আশায় বছরের পর বছর তীর্থেক কাকের মতো অপেক্ষায় থাকা বিনিয়োগকারীদের আস্থায় আরও ফাটল ধরছে। গত মাসে সূচকের ছোট পতনের পাশাপাশি ছয়বার বড় পতন দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। এতে বাজার নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তারা।

 

প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত অক্টোবরে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মোট ২১ কার্যদিবস লেনদেন হয়। এর মধ্যে ১৪ দিনই সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। এ সময় বড় পতন হয়েছে ছয়বার। বিদায়ী মাসে সবচেয়ে বড় পতন ঘটে ১০ অক্টোবর। এ দিন সূচক কমে যায় ৬৫ পয়েন্ট। ২৩ অক্টোবরও বড় পতন দেখেন বিনিয়োগকারীরা। এদিন সূচকের পতন হয় ৪৮ পয়েন্ট। কয়েকদিনের বিরতি দিয়ে ৩০ অক্টোবর আবারও বড় পতনে ফিরে যায় পুঁজিবাজার। এদিন সূচক কমে ৪৩ পয়েন্ট। এ ছাড়া গত মাসে এক দিন ৩৭ পয়েন্ট সূচক কমে। একইভাবে অন্য দুদিন ২৭ এবং ২৫ পয়েন্ট সূচকের পতন দেখা যায়।

 

বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বিনিয়োগকারীরা জানান, সাম্প্রতিক সূচকের বড় পতনে তাদের আস্থায় ফাটল ধরেছে । পুঁজিবাজার স্থিতিশীল না থাকায় বিনিয়োগ নিয়ে দোলাচলে পড়েছেন তারা। একইভাবে বাজারে নতুন অর্থলগ্নি না করে উল্টো বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন অনেকে। সবমিলে তাদের আস্থার অবস্থা নড়বড়ে। তবে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনও পুঁজিবাজার নিয়ে দুশ্চিন্তা করার সময় আসেনি।

 

তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে সিঁদুরে মেঘের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে তাদের অবস্থা করুণ হবে বলে তারা অভিমত প্রকাশ করেন। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বাজার-সংশ্লিষ্টদের ইতিবাচক মন্তব্যের ওপরও আস্থা রাখতে পারছেন না তারা। কারণ পুঁজিবাজারে এর প্রতিফলন নেই।

 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মো. লুৎফর রহমান নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, সংশ্লিষ্টরা বলছেন পুঁজিবাজারে এখন বিনিয়োগ করার সময়। এখানে বিনিয়োগ করলে ভালো মুনাফা পাওয়া সম্ভব। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, এর উল্টো চিত্র। বাজার ভালো হবে- এ আশায় বারবার নতুন বিনিয়োগ করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমরা এমন একটি পুঁজিবাজার চাই, যেখানে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা থাকবে। ২০১০ সালের পর যা আমরা আর দেখিনি।

 

এদিকে, এক মাসের এই পতনে ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ২০৫ পয়েন্ট। গড়ে দৈনিক সূচক কমেছে প্রায় ১০ পয়েন্ট। একই সময়ে বাজার মূলধন কমেছে সাত হাজার কোটি টাকার বেশি। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে বাজার মূলধন কমেছে ৩০০ কোটি টাকা। এতে পরিস্থিতি দিন দিন নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে মত দেন ভুক্তভোগীরা।

 

এদিকে সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। কিন্তু বাজারে এমন কোনো পরিস্থিতি হয়নি, যার জন্য লাগাতার পতন হতে পারে। মূলত বিনিয়োগকারীরা ভয় পেয়ে পেনিক সেল করছেন, যার প্রভাবে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। তাদের শেয়ার বিক্রির চাপে বাজারে নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের মনোগত কারণে পতন আরও ঘনীভূত হচ্ছে। তাদের আস্থা বাড়লে পুঁজিবাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমি বারবার একই কথা বলিÑ পুঁজিবাজারে সূচকের হ্রাস-বৃদ্ধির বিষয়টি স্বাভাবিক। পুঁজিবাজারে সূচক হ্রাস-বৃদ্ধি পাবে এটাই নিয়ম। কিন্তু আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা সহজে বিচলিত হন। এ অবস্থায় তাদের পেনিক সেল বেড়ে যায়। তাই পতন নেমে আসে। কোনো কারণে বাজারে পতন নেমে এলে ভীত হয়ে শেয়ার ছেড়ে দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। উল্টো এ সময় তাদের ধৈর্যের পরিচয় দেয়া উচিত। এটা না হলে বাজারচিত্র সহজে বদলাবে না।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version