-->

ডিমের দামে হাত পুড়ছে ক্রেতার

ইফ্ফাত শরীফ
ডিমের দামে হাত পুড়ছে ক্রেতার

ঢাকা: অতি প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের মধ্যে ডিম অন্যতম। এ ছাড়া শিশুখাদ্য হিসেবে ডিমের চাহিদা অনেক। মূলত করোনা মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারে সব পণ্যের ওপর প্রভাব পড়ছে। মধ্যবিত্ত পরিবারে মাছ-মাংসের চাহিদা কমিয়ে ডিমের ওপর নির্ভর করলেও এখন সেখানে মূল্যবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। সরকারি হিসাবে গত এক বছরে প্রতি ডজন ডিমের (লাল) দাম বেড়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমান বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে দেড়শ টাকা পর্যন্ত।

 

খামারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পোলট্রি খাদ্যের দাম না কমলে ডিমের দাম আরও বাড়বে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা যে কোনো সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। কোনো একটি পণ্যের দাম একবার বাড়লে তা আর কমার লক্ষণ দেখা যায় না। ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও ভোজ্যতেল এবং গমের দাম কমলেও অভ্যন্তরীণ বাজারে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে সরকার দাম ঠিক করে দিলেও তা কার্যকর হচ্ছে না।

 

ডিমের বাজার পরিস্থিতির বিষয়ে কয়েকটি জেলার খামারি এবং ডিমের পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুরগির খাবারের দাম বৃদ্ধির ফলেই ডিমের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের মতে, প্রতি বস্তা ৫০ কেজি ওজনের পোলট্রি খাদ্য বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা। তিন মাস আগে ছিল আড়াই হাজার থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা। আর এক বছর আগে একই খাবারের দাম ছিল ১৭শ থেকে ১৮শ টাকা পর্যন্ত।

 

পোলট্রি ব্যবসায়ীরা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশে ভুট্টা আমদানি কমেছে, সে কারণেই মুরগির খাবারে দাম বাড়ায় অনেক খামারি ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। যার প্রভাব ডিমের বাজারে দেখা দিচ্ছে। লোকসানের কারণে একের পর এক খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আবার অনেক ব্যবসায়ী লোকসান কমাতে খামারের আকার ছোট করছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে বা পোলট্রি খাদ্যের দাম না কমলে আগামী কিছুদিনের মধ্যে ডিমের দাম আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা।

 

দাম বাড়ার বিষয়ে বেসরকারি চাকরিজীবী সোলাইমান সবুজ ভোরের আকাশকে বলেন, দাম বাড়ার কারণে এক ডজন না কিনে এক হালি ডিম ৪৮ টাকায় কিনেছি। শুধু ডিম নয়, খরচ বাঁচাতে অন্য জিনিসের ক্ষেত্রেও একই রকম কাটছাঁট করতে হচ্ছে। গতকাল সোমবার রাজধানীর খিলগাঁও বাজারে তার সঙ্গে ভোরের আকাশের কথা হয়।

 

জানতে চাইলে খিলগাঁও বাজারের ডিম বিক্রেতা মামুন মিয়া জানান, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে ডিম আমদানিতে খরচ বেড়েছে। এ ছাড়া মুরগির খাদ্যের দামও বেড়েছে। যে কারণে ডিমের দাম বাড়ছে।

 

একই প্রসঙ্গে কিশোরগঞ্জের মোস্তফা নেমের এক খামারি ও পাইকারি বিক্রেতা মোবাইল ফোনে ভোরের আকাশকে বলেন, কিশোরগঞ্জে যে খামারে আগে দুই লাখ মুরগি ছিল, সেখানে এখন আছে এক লাখেরও কম। খাবারের দাম বাড়ার কারণে অনেক খামারি লসে পড়ে ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার ব্যবসা ছোট করছেন। যে কারণে চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ কম হচ্ছে। ফলে দাম বাড়ছে।

 

তিনি বলেন, গতকাল পর্যন্ত ১০ টাকা ৫০ পয়সা করে স্থানীয় খামারিদের কাছ থেকে ডিম সংগ্রহ করি। পরে এই ডিম ঢাকার আড়তে পৌঁছাতে যাতায়াত খরচ হয় ২৫-৩০ পয়সা করে। এরপর ১৫ থেকে ২০ পয়সা লাভ করে প্রায় ১০ টাকা ৯০ পয়সায় বা ১১ টাকায় ডিম বিক্রি করি ঢাকার আড়তগুলোতে। এই ডিম আবার খুচরা ব্যবসায়ীরা ৫০ পয়সা বেশি দিয়ে আড়তদারদের থেকে কেনে, যা খুচরা পর্যায়ে ১২ টাকা থেকে ১২ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হয়।

 

কতটা অস্থিতিশীল ডিমের দাম, তা সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের প্রতিবেদন দেখলে টের পাওয়া যায়। টিসিবির তথ্যমতে, এক বছর আগেও এই সেপ্টেম্বর মাসে ডজনপ্রতি ডিমের দাম ছিল ৯৫ থেকে ১০৫ টাকা। বর্তমানে এই ডিমের দাম দাঁড়িয়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ডিমের দাম বেড়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকার মতো।

 

টাঙ্গাইল চৌনা বাজার এলাকার অন্যতম ব্রয়লার মুরগি ও ডিম উৎপাদনকারী জাকিয়া এন্টাপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জাহিদ হাসান ভোরের আকাশকে জানান, প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ লাখ ডিম ঢাকার বাজারে বিক্রি করেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অস্থিতিশীল বাজার পরিস্থিতির কারণে তা পারছেন না। কারণ হিসেবে তিনি জানান, মুরগি পালনে মোট খরচের ৭৫ শতাংশই হয় খাবারের পেছনে। সম্প্রতি খাবারের দাম আরও বেড়েছে। এ ছাড়া অনেক খামারি লোকসানে পড়ে উৎপাদন বন্ধ রেখেছেন। কেউ কেউ ব্যবসা ছেড়েও দিয়েছেন। সব মিলিয়ে পোলট্রি খাতে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

 

বাজার বিশ্লেষকরা জানান, বর্তমানে প্রতি পিস ডিম উৎপাদনে খামারিদের খরচ ৯ টাকার ওপরে। পোলট্রি ফিডের দাম বাড়ায় লোকসান এড়াতে ছোট এবং মাঝারি ব্যবসায়ীরা খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন। ফলে উৎপাদন কম হচ্ছে এবং বাজারে প্রভাব ফেলছে। এর সমাধানে সঠিক বাজার তদারকি না হলে পরিস্থিতি আরও বেগতিক হয়ে উঠবে।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version