-->

তলানিতে শেয়ারদর

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
তলানিতে শেয়ারদর

ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির প্রথম দিকে বিনিয়োগকারীদের চাহিদার শীর্ষে ছিল আমান ফিড। প্রতিনিয়ত এ শেয়ারে বিক্রেতার চেয়ে ক্রেতার সংখ্যা ছিল বেশি। ফলে দরও ছিল ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু এ পরিস্থিতি বেশিদিন বহাল থাকেনি। কিছুদিনের মধ্যে দেখা যায় উল্টো চিত্র। কোম্পানির নামে নানা কারসাজির গুঞ্জনে কমতে থাকে শেয়ারদর। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি কোম্পানিটি। বর্তমানে এ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের চেয়ে দায়দেনার পরিমাণ প্রায় তিনগুণ। ১৩১ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিতে দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮৬ কোটি টাকা। এর জেরে শেয়ারদরও তলানিতে নেমে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

 

বিবিধ খাতের এ কোম্পানি ২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর আইপিওর টাকা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও অনিয়ম করে। তখন পুঁজিবাজার থেকে ৭২ কোটি টাকা সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানটি। আইপিওর প্রসপেক্টাস অনুসারে অর্থ হাতে পাওয়ার ১৫ মাস বা ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তা ব্যয় করার সময়সীমা নির্ধারিত ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি আইপিওর অর্থ ব্যয় করতে পারেনি। তখনই এ কোম্পানির নামে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। পরে ২০২০ সালে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান এমএবিএস অ্যান্ড জে পার্টনার্সের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে আইপিও অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমান ফিডের বিরুদ্ধে অনিয়মের তথ্য উঠে আসে। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসির সেই সময়ের কমিশন কোম্পানিটির প্রত্যেক পরিচালককে ২৫ লাখ টাকা করে জারিমানা করে। এরপর আর কোম্পানিটির পূর্বের জৌলুস ফিরে আসেনি। দিন যত যাচ্ছে, এ কোম্পানির দায়দেনার পরিমাণ ততই বাড়ছে।

 

প্রাপ্ত তথ্য মতে, বর্তমানে ১৩০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানির ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩৮৬ কোটি টাকার বেশি, যা কোম্পানিটির মূলধনের প্রায় তিনগুণ। একইভাবে প্রতিষ্ঠানটির যে স্থায়ী সম্পদ আছে, ঋণের পরিমাণ তার দ্বিগুণেরও বেশি। প্রতিষ্ঠানটির ঋণের বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এরপরও ঋণের পরিমাণ কমেনি, উল্টো সময়ের সঙ্গে ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। যার জেরে এ কোম্পানির শেয়ারদর দিন দিন কমছে। এর দায় নিতে হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। যারা বেশি দরে শেয়ার কিনেছিলেন, তারা এখন লোকসান দিয়েও এ প্রতিষ্ঠান থেকে বের হতে পারছেন না।

 

অন্যদিকে এবি ব্যাংকের ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় ২০২০ সালের ৭ আগস্ট আমান ফিডের জমি নিলামে তুলতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে একটি ব্যাংক। ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত ঋণ ও সুদসহ আমান ফিডের কাছে ব্যাংকটির পাওনা ছিল ২৬৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। পাওনা টাকা আদায়ে ব্যাংক আমান ফিডের জমি নিলামে তোলার উদ্যোগ নিলে আদালতের শরণাপন্ন হয় কোম্পানিটি। গত বছরের জুনে আদালত আমানি ফিডের বন্ধকী সম্পত্তি নিলামে বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটির জমি নিলামে বিক্রির বিষয়টি আপাতত স্থগিত রয়েছে।

 

কোম্পানিটির মোট ঋণের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ১৮৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ২০২০ সালের জুনে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ছিল ১৭১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের জুনে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ছিল ১৫৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ ধারাবাহিকভাবে প্রতি বছর কোম্পানিটির দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে স্বল্পমেয়াদি ঋণ। ২০২১ সালের জুনের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানিটির স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ১৭৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। ২০২০ সালের জুনে এ ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের জুনে ছিল ১৪২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

 

বিষয়টি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির সচিব মাসুদ করিম বলেন, প্রতিষ্ঠানে নতুন যোগদান করায় তিনি কিছু বলতে পারবেন না।

 

একই বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, একটি কোম্পানি যখন পুঁজিবাজারে আসে, তখন বিনিয়োগকারীরা সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালো করে জানার সুযোগ পান না। কারণ এর জন্য কিছুদিন সময় লাগে। দুই এক বছর গেলে আসল চিত্র বোঝা যায়। এর শেয়ারদর বা চাহিদা নির্ভর করে এ সময় কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কী করল। ভালো কিছু করলে দর বাড়ে। পক্ষান্তরে উল্টো হলে দর কমে যায়। এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। বর্তমানে এ কোম্পানির শেয়ার ৩৭ থেকে ৩৮ টাকার মধ্যে হাতবদল হচ্ছে। এক বছর আগে এ প্রতিষ্ঠানের একটি শেয়ার কিনতে খরচা হয়েছে ৭০ টাকা। কোম্পানির কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে ৬৩.২৬ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন পরিচালকেরা। বাকি শেয়ারের মধ্যে ২৬.১১ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এবং ১০.৫৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে। এছাড়া ০.০৫ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন বিদেশিরা। সর্বশেষ বছর প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারহোল্ডারদের ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করে।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version