-->

টাকার ঠিকানা বদল

জাফর আহমদ
টাকার ঠিকানা বদল

ঢাকা: দুই বছরে ঢাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আমানতের পরিমাণ কমেছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে যেখানে সারা দেশের মানুষের মোট ব্যাংক আমানতে ঢাকার অংশ ছিল ৫২ দশমিক ৩৭ শতাংশ; সেখানে ২০২২ সালের ৩০ জুন সারা দেশের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ঢাকার অংশ দাঁড়িয়েছে ৫১ দশমিক ৪১ শতাংশ। ঢাকার এ টাকা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করে পুরো দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। যে কারণে মানুষের উপস্থিতি বেশি, সেই সঙ্গে মানুষের আর্থিক লেনদেনও বেশি। ব্যবসা-বাণিজ্য ও সচ্ছল মানুষের বসবাস ঢাকাতেই বেশি। যে কারণে সারা দেশে ব্যাংকে যে আমানত রয়েছে, তার অর্ধেকের বেশি আমানত শুধু ঢাকা জেলাতেই। ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর সারা দেশের ১২ কোটি ৯৫ লাখ ১৪ হাজার ৫১৩ অ্যাকাউন্টের বিপরীতে আমানতের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঢাকায় ছিল ৮ লাখ ৯ হাজার ১১২ কোটি টাকা, যা মোট অ্যাকাউন্টের ৫১ দশমিক ৪১ শতাংশ। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এ হার ছিল ৫২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। দুই বছর ছয় মাস সময়ে সারা দেশের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রক্ষিত আমানতে ঢাকার অংশ ১ শতাংশ কমেছে। টাকার হিসাবে প্রায় পনেরো হাজার কোটি টাকা।

তবে সারা দেশেই আমানতের গড় বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। এক্ষেত্রে ঢাকায় যে হারে বেড়েছে, ঢাকার বাইরে অন্যান্য জেলার আমানত তুলনামূলক বেশি বেড়েছে।

ব্যাংক আমানতে ঢাকার অংশ কমলেও পরিমাণ কমেনি। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হচ্ছে, যেমন ভৌত অবকাঠামোসহ নানা খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে। ঢাকার বাইরের মানুষের আয় বাড়ছে। এর ফলে ক্রয় ক্ষমতা ও সঞ্চয় বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং, যেমন এজেন্ট ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রসারের ফলে মানুষের হাতের কাছে আর্থিক লেনদেনের ব্যবস্থা চলে গেছে। এখানে মানুষ সঞ্চয় করছে। একই সঙ্গে এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মানুষ লেনদেন করছে। এ কারণে ঢাকার বাইরে ব্যাংক আমানত বেড়েছে বলে মনে করেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়রম্যান ড. জায়েদ বখত। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, ঢাকায় আগের তুলনায় আমানত বাড়ছে, ঋণ বিতরণ বাড়ছে, লেনদেন বাড়ছে। এর মানে এই নয় যে, ঢাকায় আমানতের হার কমেছে, তাই বলে ওভারঅল আমানত বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ঢাকায় লেনদেনের মানচিত্রে পরিবর্তন ঘটছে। মূলত নতুন সুযোগ-সুবিধা সংবলিত শহর গড়ে ওঠা ও কেন্দ্রীভূত হওয়ার কারণে পুরাতন অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলো প্রতিযোগিতায় পড়েছে। ব্যাংকপাড়া বলে খ্যাত রাজধানীর মতিঝিল। একই সঙ্গে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান কার্যালয়-কেন্দ্র। গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে মতিঝিলে আমানতের হার কমেছে। অন্যদিকে গুলশানে ব্যাংক আমানতের হার বেড়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার, যোগাযোগের সুবিধা বৃদ্ধিসহ নানারকম সুবিধার কারণে গুলশান এখন অভিজাত বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। যার ছাপ পড়েছে ব্যাংক আমানতেও।

চলতি বছরের ৩০ ডিসেম্বরে সারা দেশের ১৩ দশমিক ৪২ শতাংশ আমানত ছিল মতিঝিলে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এর হার ১৪ দশমিক ২০ শতাংশ। মতিঝিলে দশমিক ৭৮ শতাংশ আমানত কমেছে। অন্যদিকে গুলশানে দশমিক ৪৬ শতাংশ ব্যাংক আমানত বেড়েছে। ২০২২ সালের ৩০ জুন সারা দেশের ব্যাংক আমানতের ১১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ আমানত ছিল গুলশানে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এ হার ছিল ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version