-->
সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার

৪৮ ঘন্টার হরতালে ট্রেনসহ ২১ যানবাহনে অগ্নিসংযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
৪৮ ঘন্টার হরতালে ট্রেনসহ ২১ যানবাহনে অগ্নিসংযোগ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলের প্রতিবাদে জ্বালাও-পোড়াওয়ের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দফার ৪৮ ঘন্টার হরতাল পালিত হয়েছে। হরতালকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপি পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল সমাবেশ হয়েছে। বিরোধীরা তফসিল প্রত্যাখান করে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে মিছিল করেছে। হরতালে নাশকতা ঠেকাতে সারা দেশে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়। পুলিশ, র‌্যাব ছাড়াও দায়িত্ব পালন করেছে বিজিবি। এরমধ্যেই দুই দিনের হরতালে ঢাকাসহ সারা দেশে অন্তত ২১ টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। রাজধানী ঢাকার মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন ছিল। প্রায় প্রতিটি সড়কে টহল দিয়েছে র‌্যাব, পুলিশের ভ্রাম্যমান টিম। নির্বাচন কমিশন, সচিবালয়, জাতীয় সংসদ ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের বাসায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল জোরদার। বাড়ানো হয়েছে পুলিশ ও র‌্যাবে ভ্রাম্যমান টিম ও তল্লাশি চৌকি। হরতালে ঢাকা থেকে দূরপাল্লার তেমন কোনো যানবাহন ছেড়ে যায়নি। তবে ট্রেন যোগাযোগ স্বাভাবিক ছিল। অভ্যন্তরীনভাবে বিভিন্ন শহরে রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা ও কিছু যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। রাজধানী ঢাকায় সকালে যানবাহনের সংখ্যা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের জন্য বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকায় ভিড় ছিল দলীয় নেতাকর্মীদের। যে কারণে গুলিস্তান ও পুরানা পল্টন এলাকায় দুপুরের পর যানজট ছিলো উল্লেখযোগ্য।

 

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ থেকে ২০ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে ১৯টি অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তবে ২১টি যানবাহনে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে রাজধানীতে ছয়টি, ঢাকা বিভাগে একটি, রাজশাহী বিভাগে (নাটোর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ) সাতটি, চট্টগ্রাম বিভাগে (ফেনী, মিরসরাই, সাতকানিয়া) চারটি, ময়মনসিংহ বিভাগে (জামালপুর) একটি ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ১০টি বাস, একটি কাভার্ড ভ্যান, ছয়টি ট্রাক, একটি সিএনজি, একটি ট্রেন (তিন বগি) পুড়ে যায়। এই আগুন নির্বাপণ করতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর ৩১ ইউনিট ও ১৫৬ জন জনবল কাজ করে। গত ২৮ অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৯৫ টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। বেলা ২টা ৩৫ মিনিটে রাজধানীর মিরপুর-১০ এলাকায় বিআরটিসি’র একটি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বিকেল ৫টা ১০ মিনিটের দিকে পল্টন এলাকায় যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সদরঘাট থেকে মিরপুরগামী তানজিল পরিবহনের বাসটি পল্টন এলাকায় পৌঁছালে এটিতে আগুন দেওয়া হয়। বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর মতিঝিলে মধুমিতা সিনেমা হলের গলিতে সোনালী ব্যাংকের একটি স্টাফ বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।

 

তার আগে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে একটি ট্রাকে, সাতকানিয়ায় তিনটি বাসে, সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে একটি ট্রাকে আগুন দেয় দুর্বত্তরা।

 

এর আগে হরতালের প্রথম দিন ১৯ নভেম্বর রাতে সরিষাবাড়িতে ট্রেনে, বগুড়ায় একটি ও বগুড়ার নন্দীগ্রামে একটি ট্রাকে, ফেনীর লালপুরে একটি কাভার্ড ভ্যানে, নাটোরের ভবানীগঞ্জ একটি বাসে, রাজধানীর কাজী আলাউদ্দিন রোডে একটি সিএনজি অটোরিকশায় আগুন, ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের সামনে একটি বাসে, যাত্রাবাড়ী থানার সামনে একটি বাসে, টঙ্গীর মিরের বাজারে একটি ট্রাকে, রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে একটি বাসে, বগুড়ার নন্দীগ্রামে একটি ট্রাকে, ফেনীর মহিপালে একটি বাসে, পুঠিয়ার একটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

 

এদিকে, তফসিলের প্রতিবাদে সারাদেশের মতো ঢাকায় মিছিল করেছে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশষ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাম গণতান্ত্রিক জোট, গণতন্ত্রমঞ্চ, গণঅধিকার পরিষদের দুই অংশ। এছাড়াও ঢাকার বিভিন্নস্থানে ঝটিকা মিছিল করেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী।

 

আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা জানান, এই হরতাল-অবরোধে সরকারের প্রধান প্রশাসনিক দপ্তর বাংলাদেশ সচিবালয়ের নিরাপত্তা অতীতের যেকোনও সময়ের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নিয়োজিত করা হয়েছে। সাদা পোশাকে নিয়োজিত বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন সতর্কতার সঙ্গে।

 

গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির ডাকা মহাসমাবেশ ভণ্ডুল, পুলিশের লাঠিচার্জ, নেতাকর্মীদের মারধর ও গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপি প্রথমে হরতাল ও পরে দফায় দফায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। এসব কর্মসূচির শুরু থেকেই সচিবালয়কে বাড়তি নিরাপত্তা বেষ্টনীতে রাখা হয়। তফসিল ঘোষণার পর তা আরও বৃদ্ধি করা হয়।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version