-->
মামলা না করতে পুলিশ সদস্যের হুমকির অভিযোগ

মীমাংসার জন্য স্বামীর ডাকে সাড়া দিয়ে গণধর্ষণের শিকার নারী

ইমরান খান
মীমাংসার জন্য স্বামীর ডাকে সাড়া দিয়ে গণধর্ষণের শিকার নারী

ইমরান খান: মীমাংসার জন্য স্বামী রুবেলের ডাকে সাড়া দিয়ে তার আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নারী। গত বুধবার রাজধানীর কদমতলী এলাকার একটি ফ্ল্যাটে ধর্ষণের পর ওই নারী অসুস্থ হয়ে পড়লে বিভিন্ন কাগজে তার স্বাক্ষর নেয় স্বামী রুবেল। এরপর তাকে ফ্ল্যাট থেকে বের করে গাড়িতে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে পোস্তগোলা বাস স্ট্যান্ডে নামিয়ে দেয়া হয়। পরে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেকে) চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানে কয়েকজন পুলিশ সদস্য এসে এ ঘটনায় মামলা বা অভিযোগ না দিতে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেন। এরপর হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পর রাস্তায় আবারো হামলার শিকার হন ওই নারী। এ ঘটনায় কদমতলি থানা মামলা না নেয়ায় পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও ডিএমপি কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী নারী। ঘটনার দুদিন অতিবাহিত হলেও ধর্ষণ ও হামলার ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

 

অভিযোগে ধর্ষণের শিকার ওই নারী বলেন, আমার স্বামী রুবেলের সঙ্গে বিয়ের বিষয়ে মামলা চলছিল। ওই বিষয়ে মীমাংসা করে আবারো সংসার করার কথা বলে গত ৯ আগস্ট রুবেলের সঙ্গে কথা বলার পর তার বন্ধু সাঈদগং রুবেলের আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রাজধানীর কদমতলি এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। সেই ফ্ল্যাটে লিজা নামের এক নারীও ছিলেন। সেখানে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাবিবুল ইসলাম রুবেল, তার বন্ধু সাঈদ মিয়া, আব্দুর রউফ, নুরু পাইক ও আকাশ মিয়াসহ আজ্ঞাতনামা আরো দুই-তিনজন মিলে একের পর এক ধর্ষণ করে। সেখানে আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে বিভিন্ন কাগজে তার স্বাক্ষর নেয় তারা। এরপর গাড়িতে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে পোস্তগোলা বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দেয়। চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেকে) চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানে কয়েকজন পুলিশ সদস্য এসে ঘটনাটি জানতে চান। তখন পুরো ঘটনাটি তাদের খুলে বললে তারা এ বিষয়ে কোনো মামলা বা অভিযোগ না দিতে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেন। একপর্যায়ে একজন পুলিশ সদস্য অর্থের প্রলোভন দিয়ে তার মোবাইল নম্বর দিয়ে বলেন, ‘মামলা করার দরকার নাই। আসামিদের সঙ্গে কথা বলে টাকাপয়সা নিয়ে দেব। আপনি বাসায় চলে যান।’ তার মোবাইল নম্বরে কল দিলে সুমন বিপি লেখা আসে।’

 

অভিযোগে তিনি আরো বলেন, এ ঘটনার পর মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় বঙ্গবাজার ব্রিজ এলাকায় অজ্ঞাতনামা দুই থেকে তিনজন যুবক আমার বাইক থামিয়ে আমাকে মারধর করে। এ সময় পথচারীদের বাধার মুখে পড়ে হুমকি দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করলেও তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিকার পাইনি।

 

ওই নারীকে দেয়া ওই পুলিশ সদস্যের মোবাইল নম্বরে ফোন করলে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে কর্মরত কনস্টেবল সমন মিয়া বলেন, সেদিন এক আসামির পাহারায় ঢাকা মেডিকেলে আমার ডিউটি ছিল। ওই মহিলার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। কিন্তু তাকে কোনো হুমকি বা প্রলোভন আমি দিইনি। এটা মিথ্যা অভিযোগ।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও ডিএমপি কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করার পর নড়েচড়ে বসেছে কদমতলি থানা পুলিশ। ওই নারীর অভিযোগ গ্রহণ করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে কদমতলি থানা পুলিশ। পরে মামলাও রুজু হয়েছে। তবে ভুক্তভোগী ওই নারীকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কদমতলি থানার পরিদর্শক তদন্ত আলমগীর গাজী বলেন, এ ঘটনায় গতকাল ছয়জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। ভুক্তভোগী নারী হাসপাতালে রয়েছেন বলেও জানান তিনি।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version