-->

সমকামী গ্রুপের হাতে খুন হন ইমতিয়াজ: গ্রেপ্তার ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক
সমকামী গ্রুপের হাতে খুন হন ইমতিয়াজ: গ্রেপ্তার ৩

সমকামী একটি গ্রুপের খপ্পড়ে পড়ে জীবন দিতে হয়েছে স্থপতি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূইয়াকে। একটি ‘গে চ্যাটিং অ্যাপের মাধ্যমে এই গ্রুপের সদস্য আলিফের সঙ্গে পরিচয়। এই গ্রুপের সদস্যরা সমকামী ও হিজড়া। সমকামী পুরুষদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর প্রলোভন দেখিয়ে নিজেদের আস্তানায় ডেকে নিয়ে যায় তারা।

 

স্থপতি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূঁইয়ার লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তিনজনকে প্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

 

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার মো. গোলাম সবুর বলছেন, ওই তিনজনই ইমতিয়াজকে হত্যা করেছেন।

 

গ্রেপ্তার তিনজন হলেন– মিল্লাত হোসেন মুন্না ওরফে মুন (১৯), এহসান ওরফে মেঘ (২৩) ও আনোয়ার হোসেন (৩৮)। সিরাজগঞ্জ, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

 

তাদের কাছ থেকে হত্যার পর লাশ বহনের কাজে ব্যবহৃত একটি সাদা প্রাইভেটকার (টয়োটা কারিনা), (রেজিস্ট্রেশন নম্বর ঢাকা মেট্রো-গ-১১-১৯৪৪) উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রোববার সিরাজগঞ্জ থেকে মিল্লাত হোসেন মুন্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে কলাবাগান থেকে আনোয়ার হোসেন ও এহসান ওরফে মেঘকে গ্রেপ্তার করে ডিবির তেজগাঁও জোনাল টিম।

 

হারুন অর রশীদ বলেন, আসামিরা একটি গে চ্যাটিং অ্যাপের মাধ্যমে পূর্ব থেকে সমকামী বিভিন্ন লোকজনকে রুম ডেটের কথা বলে টার্গেট করে। তাদের বিভিন্ন বাসায় ডেকে নিয়ে নানা কায়দায় ব্লাকমেইল করে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়। ঘটনার দিন ইমতিয়াজ ওই দিন কলাবাগানের ওই বাসায় যান।

 

পরে আলিফের সঙ্গে একান্তে একটি রুমে ছিলেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আলিফের সহযোগী আরাফাত, মেঘ, মুন্না ও আনোয়ার রুমে প্রবেশ করে তাকে মারধর করে। এরপর তার কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকার করলে আসামিরা ইমতিয়াজের বুকে, পিঠে আঘাতসহ বেদম মারধর করে। এতে তার মৃত্যু ঘটে।

 

ইমতিয়াজের মৃত্যু নিশ্চিত হলে আসামিরা পরিকল্পনা করে সুকৌশলে বাসা থেকে তার লাশ নামিয়ে মেঘের প্রাইভেটকারে উঠিয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখানে নিয়ে যায়। সেখানে লাশ ফেলে দেয় তারা। পরে আলিফকে বাসাবো, আনোয়ারকে গ্রিন রোডে নামিয়ে দেয়। এরপর আরাফাত, মেঘ, মুন্না প্রথমে নারায়ণগঞ্জ, পরে চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ ও কুমিল্লা হয়ে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যায়।

 

ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ জানান, ভারতে আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় অভিযান চালানো হয়। তবে তারা পালিয়ে আবার একই পথে বাংলাদেশে ফিরে আসে। এরপর ডিবি পুলিশের অভিযানে হত্যাকান্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার হয়।

 

হারুন অর রশীদ বলেন, গত ৭ মার্চ রাজধানীর কলাবাগানের ক্রিসেন্ট রোড এলাকা থেকে ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভ‚ইয়া নিখোঁজ হন। ওই ঘটনায় পরের দিন ৮ মার্চ কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে ভুক্তভোগীর পরিবার। ওই দিনই মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের কামারকান্দা গ্রামের ঝোপ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। পরের দিন সিরাজদিখান থানায় হত্যা মামলা করা হয়।

 

উল্লেখ্য, স্থপতি ইমতিয়াজ ঢাকার তেজগাঁওয়ের মোহাম্মদ হোসেন ভূইয়ার ছেলে। তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাড়ির নকশার কাজ করতেন। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। তিনি তেজগাঁও থানার ডমিসাইল এলাকায় নিজের ফ্ল্যাটে সপরিবারে বসবাস করতেন। গত ৭ মার্চ বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন তিনি। পরদিন তার স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার কলাবাগান থানায় একটি জিডি করেন।

 

এর পরদিন সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আইনি প্রক্রিয়া শেষে ৯ মার্চ পুলিশ লাশ আঞ্জুমান মুফিদুলে হস্তান্তর করে।

 

একটি বেসরকারি টেলিভিশনে ইমতিয়াজ নিখোঁজের বিষয়ে প্রতিবেদন সম্প্রচারিত হলে ১০ দিন পর পরিবার জানতে পারে, ইমতিয়াজ মোহাম্মদ খুন হয়েছেন।

 

সিরাজদিখানে যে ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার হয়েছে, তা ইমতিয়াজের। পরে আদালতের অনুমতিতে ওই লাশ উদ্ধার করে শনাক্ত করেছেন ইমতিয়াজের স্বজনরা।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version