-->

ইমোতে পরিচয় প্রেম ও বিয়ে পরে ব্ল্যাকমেইল

ইমরান খান
ইমোতে পরিচয় প্রেম ও বিয়ে পরে ব্ল্যাকমেইল

ইমরান খান: ইমো বোর্ডে পরিচয়। তারপর ব্যক্তিগত ফোন নম্বরে আলাপচারিতা। সম্পর্ক গড়ায় বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসায়। মেয়েটি দেশে আর ছেলেটি বিদেশে। একপর্যায়ে বিয়ে করেন তারা। তাও ভার্চুয়াল মাধ্যমে। কোনো কাগজপত্র নেই। বিয়ের পর অবাধ প্রেমে দম্পতি। স্বামী-স্ত্রী হিসেবে কথা হতো ভিডিওকলে।

 

ভার্চুয়াল মাধ্যমে ভৌগোলিক দূরত্বকে জয় করতেন নানাভাবে। এ ভার্চুয়াল প্রেমই কাল হয়ে দাঁড়ায় তরুণীর জন্য। কিছুদিনের মধ্যেই ব্ল্যাকমেইলের শিকার হন তিনি। অন্তরঙ্গ কথোপকথনের ভিডিও ভাইরাল করে দেয় কথিত স্বামী। তারপর হতাশগ্রস্ত তরুণী জীবন থেকে পালানোর চেষ্টা করেন বারবার। শেষ পর্যন্ত নিয়েছেন আইনের আশ্রয়।

 

শুরুটা প্রায় দেড় বছর আগে। ইমো বোর্ডে সৌদিপ্রবাসী প্রতারক পাপ্পুর সঙ্গে পরিচয় হয় রাজধানীর পল্লবীর ওই তরুণীর। দীর্ঘদিন ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয় তাদের। একপর্যায়ে ওই তরুণীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় পাপ্পু। ২০২২ সালের ৩০ আগস্ট ইমো বোর্ডের অডিওকলের মাধ্যমে বিয়ে হয় তাদের।

 

বিয়ের পর ইমোতে ভিডিওকলে নিয়মিত কথা হতো। কিছুদিন পর নিজের বাবার চোখের অপারেশনের কথা জানিয়ে ওই তরুণীর কাছে ৫০ হাজার টাকা ঋণ চায় পাপ্পু। সরল বিশ্বাসে তাকে ৫০ হাজার টাকা পাঠান ওই নারী।

 

এরপর আবারো টাকা চাইলে তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তরুণী। এতেই বাধে বিপত্তি। শুরু হয় ব্ল্যাকমেইল। হঠাৎ করে পাপ্পু জানায়, তার কাছে ওই তরুণীর ইমোকলের সময় ধারণ করা ফুটেজ রয়েছে। টাকা না দিলে ভিডিওগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে দেয়ার হুমকি দেয় সে। এভাবে ব্ল্যাকমেইল করে ওই তরুণীর কাছ থেকে মোট ১ লাখ ৮৫ হাজার হাতিয়ে নেয় সৌদিপ্রবাসী পাপ্পু।

 

একপর্যায়ে নিরুপায় হয়ে পল্লবী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি। বিষয়টি জানার পর বিভিন্ন ইমো বোর্ডে ওই নারীর নগ্ন ছবি ও মোবাইল নম্বর ছড়িয়ে দেয় পাপ্পু। লজ্জায় বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেন তরুণী।

 

পরিচিতজনরা ফোনে নানা অনভিপ্রেত কথা শোনান। আবার ছবির সঙ্গে ফোন নম্বরটি ছড়িয়ে দেয়ার কারণে অনেকেই ফোন করে ওই তরুণীকে বিরক্ত করতে থাকেন। দুঃসহ এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তরুণী জানান, এসব যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে অত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। কিছু কাছের মানুষের কারণে এখন তিনি বিচারের জন্য লড়ছেন।

 

ভুক্তভোগী ওই তরুণী বলেন, আমি তো স্ত্রী হিসেবে তার সঙ্গে কথা বলেছি। সে আমার ইমোকলের ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করবে, সেটা কোনোদিন ভাবিনি। আমার ও আমার পরিবারের ইজ্জতের ভয়ে সে যতবার টাকা চেয়েছে, আমি দিয়েছি। মোট সে আমার কাছ থেকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বিকাশের মাধ্যমে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা নিয়েছে। আর টাকা না থাকায় দিতে পারিনি বলে আমার ছবি ও ভিডিওগুলো সে অনলাইনে ছড়িয়ে দিয়েছে। আমার মোবাইল নম্বর দিয়ে লিখেছেন আমি নাকি অনৈতিক কাজ করি।

 

ভুক্তভোগী ওই তরুণীর ছোট বোন জানান, আমার বোনের নগ্ন ছবি আমাদের পরিচিতদের ইমোতে পাঠিয়েছে। বিভিন্ন ইমো বোর্ডে ছড়িয়ে দিয়েছে। ব্ল্যাকমেইল ও নগ্ন ছবি ছড়িয়ে দিয়ে আমার বোনকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিচ্ছে সে। এখন সে বিষয়টি পুলিশকে না জানানোর জন্য অনুরোধ করছে। আপস করার কথা বলছে। আমরা চাই তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করা হোক। তার শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।

 

পল্লবী থানার উপপরিদর্শক চিন্ময় সরকার জানান, ওই তরুণী থানায় জিডি করেছেন। বিষয়টি সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগে (সিটিটিসি) পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। আসামি প্রবাসে থাকলেও দেশে যারা বিকাশের মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করা হবে বলেও জানান তিনি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version