-->
শিরোনাম
হদিস নেই ৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকার

ডাচ-বাংলার ছিনতাই হওয়া টাকা নিয়ে ধোঁয়াশা

ইমরান খান
ডাচ-বাংলার ছিনতাই হওয়া টাকা নিয়ে ধোঁয়াশা

ইমরান খান: রাজধানীর উত্তরায় ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের ছিনতাই হওয়া টাকা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি এখনও। ছিনতাই হওয়া ১১ কোটি ২৭ লাখ টাকার মধ্যে প্রথম দিনই ৯ কোটি টাকা উদ্ধারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরবর্তীতে ডিবি জানায়, উদ্ধারকৃত টাকার পরিমাণ ৯ কোটি নয় বরং ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার। থানা পুলিশ প্রকাশ্যে তিনটি ট্রাঙ্ক খুলে গণনা করে ওই পরিমাণ টাকা পেয়েছে বলে জানানো হয়। এছাড়াও টাকার পরিমাণ সম্পর্কে ডাচ বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিভিন্ন বুথে সরবরাহের জন্য ব্যাংক থেকে চুক্তি মোতাবেক ১১ কোটি ২৭ লাখ টাকা তুলে নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মানি প্ল্যান্ট লিংক লিমিটেড।

 

অন্যদিকে টাকা পরিবহণের দায়িত্বে থাকা মানি প্ল্যান্ট লিংক জানায়, ছিনতাই হওয়া টাকার পরিমাণ ১১ কোটি ২৫ লাখ। শুরু থেকে এ পর্যন্ত ছিনতাইয়ের এই পুরো ঘটনা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না কিছুতেই। ঘটনার প্রথম দিনই তুরাগ এলাকা থেকে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাটি ডাকাতি বা ছিনতাই বলা হলেও তখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়নি ডাকাত দলের কেউ। ওই সময়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মানি প্ল্যান্টের পরিচালকসহ সাতজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

 

এরমধ্যে গত শনিবার রাতে রাজধানীর মিরপুর, বনানী ও সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে আট জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ২ কোটি ৫৩ লাখ ৯৯ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলে ডিবি জানিয়েছে। এ নিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে ৬ কোটি ৪৩ লাখ ৪৮ হাজার ৫শ’ টাকা। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, সানোয়ার হাসান (২৮), ইমন ওরফে মিলন (৩৩), আকাশ মাদবর (২৫), সাগর মাদবর (২২), বদরুল আলম (৩৩), মিজানুর রহমান (২০), সনাই মিয়া (২৮) ও এনামুল হক বাদশা (২৬)।

 

গ্রেপ্তারের পর রোববার দুপুরে এ বিষয়ে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেছে ডিবি। সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ জানান, শনিবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও সুনামগঞ্জে অভিযান চালিয়ে ডাচ বাংলা ব্যাংকের টাকা ছিনতাইয়ে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

 

তিনি বলেন, বনানী থেকে সানোয়ার হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে ১ কোটি ১৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে মিলন ওরফে ইমনকে গ্রেপ্তার করা হয় বনানী এলাকা থেকে। পরে তার জোয়ার সাহারার বাসায় অভিযান চালিয়ে আরও ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ৫শ’ টাকা উদ্ধার হয়। আকাশ ও সাগর নামে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয় উত্তরা থেকে। তাদের বাসা থেকে ১ কোটি ৭ লাখ টাকা এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি জব্দ করা হয় বলে জানান হারুন অর রশীদ। এছাড়া গোয়েন্দা পুলিশের আরেকটি দল সুনামগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বদরুল আলম, মিজানুর রহমান, সনাই মিয়া ও এনামুল হক বাদশাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

 

তিনি জানান, উত্তরায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকাসহ লুট হওয়া চারটি ট্রাংকের মধ্যে ঘটনার দিনই তিনটি ট্রাংক উদ্ধার করা হয়। তবে সেগুলো আংশিক খালি ছিল। গণনার পরে ওই তিন ট্রাংকে সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। বাকি টাকা দুটি চালের বস্তা ও পাঁচটি ব্যাগে ভরে নিয়ে যায় ডাকাতরা। আর কোনও ব্যাগ বা বস্তা না থাকায় টাকাসহ ট্রাংক ফেলে পালিয়ে যায় তারা।

 

এসময় এক প্রশ্নের জবাবে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, ঘটনার দিন মানি প্ল্যান্টের কয়েকজন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আটক করা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি তাই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। প্রয়োজন হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবারও ডাকা হবে বলে জানান তিনি।

 

ডাকাতির পর ডিবির মিরপুর জোনাল টিমের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে তিনটি ট্রাঙ্ক উদ্ধার করেছিলো। ওই টিমের প্রধান পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, ট্রাঙ্কগুলো উদ্ধারের পর থানায় নিয়ে টাকা গণনা করা হয়েছে। তখন উদ্ধার করা ট্রাঙ্কগুলো তালাবদ্ধ ছিল। থানা পুলিশ ও মানি প্লান্টের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এগুলোর তালা খোলা হয়। চাবি ছিলো মানি প্লান্টের কর্মকর্তাদের কাছে। তিনটি ট্রাঙ্কের মধ্যে একটি খালি পাওয়া গেছে। তখন সবার উপস্থিতিতে গুনে ৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা পাওয়া যায়। তবে ৯ কোটি টাকা উদ্ধারের তথ্যের বিষয়ে এই ডিবি কর্মকর্তা বলেন, আসলে তাৎক্ষণিকভাবে ট্রাঙ্ক না খুলেই এবং টাকা না গুনেই এটা বলা হয়েছিল। কারণ মানি প্লান্টের লোকজন বলেছিলেন যে, তিনটি ট্রাঙ্কে এ পরিমাণ টাকা থাকতে পারে।

 

গরমিল শুধু উদ্ধার হওয়া টাকার ক্ষেত্রেই ঘটেছে, তা-ই নয়। বহন করা টাকার পরিমাণ নিয়েও রয়েছে রহস্য। টাকা পরিবহণের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মানি প্ল্যান্ট লিংক লিমিটেড জানায়, ছিনতাই হওয়া টাকার পরিমাণ ১১ কোটি ২৫ লাখ। আর ডাচ্-বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চুক্তি মোতাবেক ১১ কোটি ২৭ লাখ টাকা বিভিন্ন বুথে সরবরাহের জন্য ব্যাংক থেকে তুলে নেয় যায়।

 

সংবাদ সম্মেলনে টাকার অঙ্কে গরমিলের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, আমি ধারণা থেকে টাকার অঙ্ক ৯ কোটি উল্লেখ করেছিলাম। তবে থানা পুলিশ প্রকাশ্যে সবার উপস্থিতিতে গুনে যেটা পেয়েছে, সেটাই ঠিক।

 

উল্লেখ্য, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা পৌঁছে দিতে যাওয়ার সময় মাইক্রোবাস আটকে চার ট্রাঙ্ক টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ঘটনাটি ঘটে গত বৃহস্পতিবার সকালে তুরাগ এলাকায়। টাকা পরিবহন করছিলো বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের কর্মীরা।

 

এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই উত্তরার তুরাগ থানা এলাকা থেকে ছিনতাই হওয়া টাকার মধ্যে ৯ কোটি টাকা উদ্ধারের কথা জানায় ডিবি পুলিশ। পরে টাকা গণনা করে পাওয়া যায় ৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। নতুন করে উদ্ধার নিয়ে মোট উদ্ধারকৃত টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ কোটি ৪৩ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা। । ডাচ বাংলা ব্যাংকের টাকা ছিনতাইয়ের চাঞ্চল্যকর এই মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। গ্রেপ্তার আট জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ড চেয়েছে ডিবি।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version