-->
৩০ পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রজেক্ট

ভুয়া সনদে ৪৭ কোটি টাকার কাজ নিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান

ইমরান খান
ভুয়া সনদে ৪৭ কোটি টাকার কাজ নিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান

ইমরান খান: ভুয়া সার্টিফিকেট দেখিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পে ভুয়া সনদে ৪৭ কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে এমএস জিলানী ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ‘৩০ পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রজেক্টে’ এমন ঘটনা ঘটেছে।

 

অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্প পরিচালক মো. মীর শহীদ ও এস্টিমেটর মো. মনির হোসেনের মদদে কুমিল্লা ও জয়পুরহাটের কাজ বাগিয়ে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।

 

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির ওই জালিয়াতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করার অনুরোধ জানিয়ে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) মহাপরিচালকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন মো. নুরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। সেই চিঠিতে বলা হয়, জিলানী ট্রেডার্সের জমা দেয়া সার্টিফিকেটটি ভুয়া। ‘বানোয়াট’ সার্টিফিকেট দিয়ে অনিয়মের মাধ্যমে শতকোটি টাকার কাজ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

 

এভাবে প্রকৃত ঠিকাদারকে কাজ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দরপত্র দুটি বাতিল করে জিলানী ট্রেডার্সের লাইসেন্স কালো তালিকাভুক্তির অনুরোধও জানানো হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২০ সালের ২ মার্চ কুমিল্লা জেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদুজ্জান ৩০ কোটি টাকার টেন্ডার আহব্বান করেন। কুমিল্লার ওই দরপত্রে একক কাজ হিসেবে ১৫ কোটি টাকা অথবা দুই কন্ট্রাকে ১০ কোটি টাকার কাজের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়।

 

কিন্তু কুমিল্লার কাজে সাবমিট করা সার্টিফিকেটে চাহিদা অনুযায়ী অভিজ্ঞতা ছিল না জিলানী ট্রেডার্সের। পরে এডিট ও জালিয়াতি করে কমপ্লিশন সার্টিফিকেটকে এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট বানিয়ে জমা দেন জিলানী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী কাজী মুহাম্মদ জিলানী হক।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জিলানী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী কাজী মুহাম্মদ জিলানী নিজের সার্টিফিকেট সঠিক দাবি করে তিনি বলেন, ‘সার্টিফিকেট তো আমি দিইনি। সার্টিফিকেট যেহেতু প্রতিষ্ঠান দিয়েছে, সেহেতু সঠিক।’ বরগুনা পৌরসভার সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী এটিএম মহিউদ্দিন খন্দকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে লেখা আছে এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট।

 

এটা সম্ভবত স্ক্যান করা কপি। আপনি দেখেন, স্মারক নম্বরে অবলিক দিয়ে ওয়ান লাগানো। আমি এটাতে সই করিনি। ২০১৯ সালের সার্টিফিকেট স্ক্যান করে আমার সই নকল করা হয়েছে। এর প্রমাণ হচ্ছে স্মারক নম্বরে অবলিক দিয়ে কখনো ওয়ান হয় না। কপি দিলে অবলিক দিয়ে স্মারক নম্বর হয়।’ তিনি জানান, কমপ্লিশন সার্টিফিকেট শত ভাগ ঠিক আছে। আগে যেটা দেখানো হয়েছে সেটা সম্ভবত স্ক্যান করা কপি।

 

আমি আমার উপসহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামানকে জিজ্ঞাসা করেছি। উনি জানালেন, এটা সম্ভবত স্ক্যান করে সই নকল করা হয়েছে। তিনি এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেটে কোনো সই করেননি বলেও দাবি করেন।’ প্রসঙ্গত, পৌর এলাকায় নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন সুবিধা দিতে ‘৩০ পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন’ নামের প্রকল্প হাতে নেয় সরকার।

 

পৌরসভার সক্ষমতা বাড়ানোর এ প্রকল্পের আওতায় বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে সরকারের ১০০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি সই হয়। এর মাধ্যমে ছোট ছোট শহরের ছয় লাখ মানুষের নিরাপদ পানি নিশ্চিত করার কথা।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version