-->
থামছে না আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাকারবারিদের তৎপরতা

স্বর্ণ পাচারের নিরাপদ রুট খুলনা অঞ্চল

খুলনা ব্যুরো
স্বর্ণ পাচারের নিরাপদ রুট খুলনা অঞ্চল

প্রতিবেশী দেশ ভারতের সীমান্তবর্তী খুলনা অঞ্চল এখন স্বর্ণ পাচারের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। মাঝেমধ্যেই ধরা পড়ছে স্বর্ণের ছোট বড় চালান। গ্রেপ্তারও হচ্ছে চোরাকারবারিরা। তারপরও থেমে নেই আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রের স্বর্ণ পাচারের তৎপরতা। সর্বশেষ শনিবার খুলনায় পাচারের সময় পৌনে ২ কেজি স্বর্ণসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২ কারবারিকে। জুতার মধ্যে করে পাচারের চেষ্টা করা হচ্ছিল স্বর্ণ।

 

পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে খুলনা হয়ে সাতক্ষীরা বা যশোর সীমানা পেরিয়ে প্রতিবেশী দেশে যাচ্ছে স্বর্ণের চালান। মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিমানযোগে আসা এসব স্বর্ণ ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের বিমানবন্দরে প্রায় ধরা পড়লেও পাচার হওয়া স্বর্ণের সিংহভাগই খুলনা অঞ্চল হয়ে ভারতে পাচার হচ্ছে।

 

সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় নগরীর লবণচরা থানা পুলিশ প্রায় পৌনে ২ কেজি ওজনের ১৫ পিস স্বর্ণের বারসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, এর আগেও ঢাকা থেকে খুলনা হয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে স্বর্ণ পাচার করেছে তারা। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে টুঙ্গিপাড়া বাসযোগে খুলনার জিরো পয়েন্ট মোড়ে আসেন এক স্বর্ণ কারবারি। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে ১ কেজি ৭৫০ গ্রাম স্বর্ণের বারসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হলেনÑ চট্টগ্রামের রাউজান থানাধীন পশ্চিম রাউজান মোহাম্মদপুরের বিটু বড়–য়ার ছেলে ইমন বড়–য়া।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইমন বড়–য়ার পরিহিত ডান পায়ের জুতার সুকতলার নিচে রক্ষিত অবস্থায় সাদা স্কচটেপে মোড়ানো ৮ পিস স্বর্ণের বার এবং বাম পায়ের জুতার সুকতলার নিচ থেকে সাদা স্কচটেপে মোড়ানো ৭ পিস স্বর্ণের বার জব্দ হয়। উদ্ধারকৃত ১৫ পিস স্বর্ণের বারের প্রায় মূল্য ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। পরে ইমন বড়–য়ার তথ্যের ভিত্তিতে তার সহযোগী আবুল হোসেন গ্রেপ্তার হন। এ ঘটনায় লবণচরা থানার মামলা হয়েছে।

 

গ্রেপ্তার আবুল হোসেনের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে। তিনি বাতিসার মোল্লাবাড়ি এলাকার আবুল কাশেম মোল্লার ছেলে। কেএমপির ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের পৌনে ২ কেজি স্বর্ণের বার জব্দ হয়।

 

তথ্যানুসন্ধ্যানে জানা গেছে, কতিপয় ব্যবসায়ী মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে স্বর্ণের বার বিমানযোগে এনে প্রথমে ঢাকায় গোপন আস্তানায় রাখেন। সেখান থেকে পাচার করে দেশের বাইরে। আর এ পাচারের অন্যতম রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয় ঢাকা-খুলনা রুট। পরে সাতক্ষীরা বা যশোর সীমান্ত দিয়ে স্বর্ণের বার ভারতে পাচার হয়। মাঝে মধ্যে দু-একটি চালান ভোমরা ও বেনাপোল বর্ডারে ধরা পড়ে। তবে বেশিরভাগ চালান পাচার হয়ে যায় বলে জানা গেছে।

 

বাংলাদেশ এবং দুবাইয়ের আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দামের আকাশ-পাতাল পার্থক্য থাকায় একশ্রেণির চোরাকারবারী এ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন। স্বর্ণ চোরাচালান সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক সদস্য জানান, যখন ঢাকা থেকে আনা হয়, তখন কীভাবে কোথায় রাখা হয় তা পুলিশসহ কোনো সংস্থাই সহজে ধরতে পারে না।

 

১ কেজি স্বর্ণকে এক গাড়ি বলে ওদের সংকেত থাকে উল্লেখ করে সূত্রগুলো জানায়, এ-সংক্রান্ত মোবাইল কথোপকথনের সময় গাড়ি উল্লেখ করায় মোবাইল ট্রাকিং বা অন্য কোনো উপায়েও ওদের ধরা কঠিন। যে কারণে দিনের পর দিন তারা অবৈধ কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ইউনিক সব শব্দ কোড বা সংকেত হিসেবে ব্যবহার করে চোর কারবারিরা।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version