-->

তুমব্রু শূন্যরেখা: থামেনি দুই সশস্ত্র গ্রুপের গোলাগুলি

বান্দরবান প্রতিনিধি
তুমব্রু শূন্যরেখা: থামেনি দুই সশস্ত্র গ্রুপের গোলাগুলি

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় শুক্রবার সারাদিন থেমে থেমে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। কোনারপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী দুই সশস্ত্র গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় গোলাগুলি অব্যাহত থাকায় আতঙ্কিত সাধারণ রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে আশপাশের এলাকায় আশ্রয় নিতে চেষ্টা করছেন।

 

এরই মধ্যে কয়েক শতাধিক রোহিঙ্গা তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর কোনারপাড়া খোলা বিলে তাঁবু টানিয়ে অবস্থান করছেন। কিছু চলে গেছেন মিয়ানমারের কাঁটাতারের ভেতরে। পোড়া ঘরের বাসিন্দারা হতবিহ্বল হয়ে যে যারমতো আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তীব্র শীতে ঘরহারা মানুষগুলো শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। সবমিলিয়ে সেখানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

 

এদিকে, শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চলমান ঘটনার পর বাড়তি সতর্কতায় তুমব্রু ও ঘুমধুমের প্রধান ও উপসড়কে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বিজিবি-পুলিশ। নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে যান চলাচল। স্থানীয়রা ছাড়া বাইরের কেউ চাইলেই এলাকায় ঢুকতে পারেননি । গোলাগুলির ঘটনায় তুমব্রু বাজারের অনেকেই দোকানপাট বন্ধ রেখেছেন। 

 

সীমান্ত এলাকায় অতিরিক্ত ফোর্স বাড়িয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি, ঘুমধুম-তুমব্রুর বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান একে জাহাঙ্গীর আজিজ।

 

বুধবারের গোলাগুলির পর অগ্নিসংযোগ তা অব্যাহত থাকে। শুক্রবারও গোলাগুলির ঘটনা অব্যাহত ছিল বলে জানান ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ কে জাহাঙ্গীর আজিজ।

 

তিনি বলেন, ‘তবে কারা গোলাগুলি করছে সেটা নিশ্চিত নই। গোলাগুলিতে আতঙ্কিত ও আগুনে ঘরহারা রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা খুঁজতে ক্যাম্প ছেড়ে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ছেন। অনেকে পাহাড় কিংবা আশপাশের খোলা জায়গায় তাঁবু টানিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। বুধবার ভোর থেকে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডের কোনারপাড়া ক্যাম্পের ভেতর এবং মিয়ানমার সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার ওপার থেকে গোলাগুলি হচ্ছিল।

 

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, ঘুমধুম-তমব্রু সীমান্তে শূন্যরেখায় মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি করে সীমান্তে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন।

 

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী, বিজিবিসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার নেই। তারপরও সীমান্তের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা সতর্ক অবস্থানে আছে।’

 

এদিকে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘আমি সবসময় বলেছি, একসময় রোহিঙ্গা ক্যাম্প আমাদের জন্য বিষফোঁড়া হবে। কারণ রোহিঙ্গারা তাদের সবকিছু ফেলে এখানে এসেছে। তারা যেকোনো যেকোনো প্রয়োজনে, প্রলোভনে প্রলুব্ধ হয়ে যেকোনো চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারে।’

 

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর রাখাইন রাজ্যে সেদেশের সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয় ৮ লাখ রোহিঙ্গা। এরআগে এসেছিল আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ।

 

ওইসময় ছয় হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের কোনারপাড়া খালের দক্ষিণে শূন্যরেখায় বসতি শুরু করেন। এখান থেকে কয়েক গজ দূরত্বে মিয়ানমার সীমান্ত কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা।

 

শূন্যরেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নজরদারিতে কাঁটাতারের বাইরে পাহাড়চূড়ায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) একাধিক চৌকি স্থাপন করেছে।

 

তুমব্রুর কোনারপাড়া শূন্যরেখা ক্যাম্পে ৬২১ পরিবারে চার হাজার ২৫৪ রোহিঙ্গা বাস করছিলেন বলে জানিয়েছেন ক্যাম্পের মাঝি (নেতা) দিল মোহাম্মদ।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version