-->
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন

নাশকতারোধে কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

এমদাদুল হক খান
নাশকতারোধে কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

পদ্ধা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে নাশকতারোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইতোমধ্যে সেতু এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া রাজধানীসহ আশপাশের এলাকার আবাসিক হোটেল, মেস এবং অস্থায়ী আবাসস্থলে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। কোনো বাসাবাড়িতে নতুন কোনো অতিথি এলে তাদের ব্যাপারেও খোঁজখবর নিচ্ছে পুলিশ। কাউকে সন্দেহ হলেই তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাতে কেউ গুজব ছড়াতে না পারে সেজন্য সার্বক্ষণিক সাইবার মনিটরিং করা হচ্ছে। এছাড়া সেতু এলাকায় বসানো হচ্ছে র‌্যাবের ওয়াচ টাওয়ার। থাকবে ফুট পেট্রোল, মোটরসাইকেল পেট্রোল, বোম স্কোয়াড, ডগ স্কোয়াড। স্পেশাল ফোর্স নিয়ে রেডি থাকবে র‌্যাবের হেলিকপ্টার।

গত মঙ্গলবার পদ্মা সেতুর দুই দিকে দুইটি থানার উদ্বোধন করা হয়েছে। আর জাজিরা প্রান্তে শেখ রাসেল সেনানিবাস উদ্বোধন করা হয়েছে এক বছর আগেই। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে পদ্মা সেতু রক্ষায় সেখানে এক ব্রিগেড সেনা সদস্য রয়েছেন। উদ্বোধনের দিন র‌্যাবের হেলিকপ্টার নিয়ে কাজ করবে স্পেশাল ফোর্স।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, মাওয়া প্রান্তে সেতুর উদ্বোধন করে জাজিরা প্রান্তে মাদারীপুরের শিবচরে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জনসভায় বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী। সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও জনসভাকে ঘিরে চলছে প্রস্তুতি কার্যক্রম। ইতিমধ্যে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ও জনসভাকে নিয়ে সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

জানা গেছে, ঢাকার মেস, হোটেলসহ যত সন্দেহজনক স্থান এবং অবস্থান আছে সবখানেই পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।

নদীপথ ছাড়াও সড়ক ও অনলাইনে যে কোনো নাশকতারোধে সতর্ক অবস্থানে থাকবে বিভিন্ন ইউনিট। নদীর দুই পাড় তথা মুঞ্জিগঞ্জ ও শরীয়তপুর এলাকায় স্থানীয় পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি শুরু হয়েছে। সেতু এলাকায় সন্দেহভাজন কাউকে পেলেই তাকে আটক করে জেরা করছে পুলিশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ২৫ তারিখে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যাতে না করা যায় সেজন্য একটি প্রচেষ্টা রয়েছে। কিন্তু এতে কারা জড়িতÑসেটি এখনই সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে পদ্মা সেতু যারা চায়নি তারাই এমনটি করতে পারে-আপাতত এ রকম ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। এক্ষেত্রে কেবল পদ্মা সেতুই নয়, দেশের যে কোনো প্রান্তেই ‘কিছু একটা’ ঘটানো হতে পারে।

সে কারণেই এত সতর্কতা। এজন্য মেগা প্রকল্পগুলোর নিরাপত্তা জোরদারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। উন্নয়ন প্রকল্পের নিরাপত্তা নজরদারিতে শীর্ষে রয়েছে-হাইটেক পার্ক, ইনকিউভেটর, পাবনার রূপপুরে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে, চট্টগ্রাম কর্ণফুলী নদীর তলদেশের টানেল।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে তল্লাশি পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি ‘ছক’ করে দেওয়া হয়েছে। ওই ছকে নির্ধারিত বিভাগ, তল্লাশির সংখ্যা, তল্লাশিকৃত হোটেল বা স্থানের নাম ও ঠিকানা, সেখানে আটক হলে তার সংখ্যা, আটককৃতদের নাম ও ঠিকানা, গৃহীত ব্যবস্থা এবং কিছু উদ্ধার হলে তা উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।

প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে পরদিন সকাল ছয়টা পর্যন্ত অভিযানে পাওয়া ফলাফল ছকের মাধ্যমে সকাল ১০টার মধ্যে ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনারকে (ক্রাইম) পাঠাতে বলেছে।

এছাড়া ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ডিসিদের দেওয়া এক নির্দেশনায় বলেছেন, জঙ্গি, নাশকতাকারী, তালিকাভুক্ত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও সব ধরনের অপরাধীদের সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।

এরপর সুনির্দিষ্ট কৌশলগত স্থান চিহ্নিত করে তল্লাশি পরিচালনা করতে হবে। সোশ্যাল, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় গুজব ও অপপ্রচার রোধে অনলাইন নজরদারির মাধ্যমে যে কোনো চক্রান্ত প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি প্রধান) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবেলার জন্য আমাদের সকল স্তরের সদস্যদের সতর্ক ও সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানসহ এই উপলক্ষে সারা দেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এসব অনুষ্ঠান যেন নির্বিঘ্নে হয়, সেই লক্ষ্যে পুলিশ নিরাপত্তার স্বার্থে কাজ করছে।

হাফিজ আক্তার আরও বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনে আমাদের সেতু এলাকার আশপাশে এবং সারাদেশে আমাদের নিরাপত্তা বলয় থাকবে। এদিনে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেই দিকে নজর রেখে আমরা নিরাপত্তার জোরদার করছি।

র‌্যাব সূত্র বলছে, শুধু সেতু এলাকা নয় পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে নাশকতা রোধে রাজধানীসহ সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যে কোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে প্রস্তুত থাকবে তারা।

পাশাপাশি নজরদারিতে থাকবে চৌকস গোয়েন্দা দল। সারাদেশে র‌্যাবের প্রতিটি ইউনিটকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাতে কেউ গুজব ছড়াতে না পারে সেজন্য সার্বক্ষণিক সাইবার মনিটরিং করা হচ্ছে।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনে আমাদের কাছে নাশকতার কিছু তথ্য এসেছে। সে তথ্যগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশা করি, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না। তবে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা তৈরি রয়েছি।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, সেতু উদ্বোধনের দিনে আকাশ ও নৌপথ ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে র‌্যাবকে সতর্ক রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, সেতু উদ্বোধনের দিন পদ্মা সেতুর আশেপাশের এলাকায় এবং ঢাকা শহরসহ সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। এছাড়া সেতু এলাকায় বসানো হচ্ছে র‌্যাবের ওয়াচ টাওয়ার।

থাকবে ফুট পেট্রল, মোটরসাইকেল পেট্রোল, বোম স্কোয়াড, ডগ স্কোয়াড। স্পেশাল ফোর্স নিয়ে রেডি থাকবে র‌্যাবের হেলিকপ্টার। আর পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢাকায় পুলিশের সেন্ট্রাল কমান্ড সেন্টার থেকে মনিটরিং করা হবে।

এদিকে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছে নৌ পুলিশ। উদ্বোধনের দিন পদ্মা সেতু এলাকার সড়ক সাধারণ যানবাহন চলাচলের জন্য বন্ধ থকবে। আর ২৪ জুন দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে উদ্বোধন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফেরি ও সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। শুধু যারা লঞ্চ যোগে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসবেন সেইসব লঞ্চ জাজিরা প্রান্তে নোঙর করতে পারবে বলে জানায় নৌ পুলিশ।

নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার ড. আ ক ম আখতারুজ্জামান বসুনিয়া লিটন বলেন, আমরা এরই মধ্যে পদ্মা নদী ও সেতুর দুই তীরে নিরাপত্তার কাজ শুরু করেছি। উদ্বোধনের দিন ৫৫০ জন নৌ পুলিশের ফোর্স থাকবে পদ্মা নদীতে। ৩০টি হাই স্পিড সি বোট টহলে থাকবে। আমরা ক্যামেরার মাধ্যমে নিরাপত্তা মনিটর করব। আর পদ্মা সেতুসহ ওই নৌ-রুটে আমরা নিরাপত্তা তল্লাশি চালাচ্ছি।

মন্তব্য

Beta version