চট্টগ্রামের উড়াল সড়কে নাইলন সুতার ভয়ঙ্কর ফাঁদ পেতেছে ছিনতাইকারীরা। তাদের টার্গেট বাইক আরোহীরা। এই সুতার ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারানোসহ গুরুতর আহত হয়েছেন বাইক আরোহীদের অনেকে। ছবি তোলা কিংবা দল বেঁধে ঘোরার ভান করে এরা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে অবস্থান নেয়। যখন গাড়ি চলাচল কম থাকে, তখনই মোটরসাইকেল আরোহীদের নিশানা করে তারা। এরপর সুযোগ বুঝে হাতিয়ে নেয় সব।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যারা এসব কাজে জড়িত তাদের বেশিরভাগ মাদকাসক্ত এবং উঠতি বয়সের। তবে এসব ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগীরা থানায় মামলা কিংবা অভিযোগ না করায় সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই।
এদিকে এসব ঘটনার পর উড়াল সড়কগুলোতে টহল বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। এছাড়া জড়িতদের আইনের আওতায় আনারও চেষ্টা চলছে।
ভুক্তভোগীরা জানায়, চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ছবি তোলা কিংবা দল বেঁধে ঘোরার ভান করে অবস্থান নেয় ছিনতাইকারীরা। তাদের টার্গেট মূলত মোটরসাইকেল আরোহীরা। উড়ালসড়কে দুপাশে রেলিংয়ে নাইলন সুতার বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর র্যাম্পের ভেতর লুকিয়ে থাকে তারা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গলায় সুতা লেগে উড়াল সড়কে পড়ে যান বাইক আরোহীরা। আর এ সুযোগে র্যাম্পের ভেতর থেকে দ্রুত বেরিয়ে এসে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র আহত বাইক আরোহীর কাছ থেকে সর্বস্ত হাতিয়ে নেয়। তাদের চেহারা দেখে অনুমান করা যায় তারা সকলেই মাদকসক্ত। মাদকের টাকা জোগাড় করতেই এসব কাজ করছে।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে সুতার ফাঁদে পড়ে গত শনিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে দুর্ঘটনায় আহত হন সুজন তঙ্গচংঙ্গ্যা (২৬) নামের এক বাইক আরোহী। তার বাড়ি রাঙামাটির বিলাইছড়ি এলাকায়। এর আগে গত ১৮ অক্টোবর একিজায়গায় সুতার ফাঁদে পড়ে আহত হন সাইদুর রহমান আরেক মোটরবাইক আরোহী। শুধু এখানে নয়, নগরের আখতারুজ্জামান উড়াল সড়কেও একইরকম ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সুজন তঞ্চঙ্গ্যা ভোরের আকাশকে বলেন, শনিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে লালখান বাজার থেকে মোটরসাইকেলে করে নগরের পতেঙ্গার দিকে যাওয়ার পথে হঠাৎ চিকন নাইলনের সুতা গলায় লেগে আমি গাড়ি থেকে পড়ে যায়। এরপর গলায় হাত দিয়ে দেখি, অল্প অল্প রক্ত। সুতাটি আমার গলায় বেঁধে ছিল। বাইক থেকে পড়ে যাওয়ার পর ১৬ থেকে ১৭ বছরের একাধিক কিশোরকে ঘটনাস্থলের পাশে দেখেছি। তবে পেছন থেকে আরো কিছু বাইক আসায় তারা দ্রুত সরে যায়৷ মনে হচ্ছে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসলাম। এ ঘটনার পর ফেসবুকে একটি পোস্ট করলে অনেক ভুক্তভোগী যোগাযোগ করে এমন ঘটনার কথা জানিয়েছেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, বিষয়টি জানার পর থেকে আমরা সেখানে পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া সংঘবদ্ধ সেই চক্রকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে ভুক্তভোগীরা যদি এ ঘটনায় মামলা করতেন তাহলে কাজটি আরো সহজ হত।
উল্লেখ্য, আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সাড়ে ৯ মাস পর গত ২৮ আগস্ট পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম নগরের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে। তবে পরীক্ষামূলক গাড়ি চলাচলে কোনো টোল নেওয়া হচ্ছে না। এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্পের (মূল উড়ালসড়ক থেকে ওঠানামার পথ) কাজ শেষ না হওয়ায় গাড়িগুলো নগরের লালখান বাজার থেকে সরাসরি পতেঙ্গা পর্যন্ত যাতায়াত করছে।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য