-->

টাঙ্গুয়ার হাওর, পর্যটন সম্ভাবনার নতুন দুয়ার

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
টাঙ্গুয়ার হাওর, পর্যটন সম্ভাবনার নতুন দুয়ার
অপরূপ সৌন্দর্যের সমাহার দেখা যাবে শুধু এ হাওরেই

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি রামসার সাইট খ্যাত সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর। মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে প্রবাহিত ঝরনা থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ পানি, অগণিত পাখির কলরব আর হিজল-করচের অপরূপ সৌন্দর্যের সমাহার দেখা যাবে শুধু টাঙ্গুয়ার হাওরেই। বর্ষা ও শীত মৌসুমে দুই রকমের সৌন্দর্যে রূপের রাণী হয়ে ওঠে এই হাওর। তবে পর্যটকদের মতে, এই হাওরের আসল সৌন্দর্য দেখা যায় বর্ষাকালে।

 

টাঙ্গুয়ার হাওরটি জেলার তাহিরপুর উপজেলায় অবস্থিত হলেও মধ্যনগর ও ধর্মপাশা উপজেলার বিশাল জায়গাজুড়ে এ হাওরের বিস্তৃতি। হাওরটির উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকলে এটি সুনামগঞ্জের অন্যতম একটি অর্থনৈতিক জোন হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। খোলে যেতে পারে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। পাল্টে যেতে পারে হাওরপাড়ের মানুষের জীবন-মান। সৃষ্টি হতে পারে হাজার হাজার বেকারের আয়-রোজগারের পথ।

 

সুরমা, জাদুকাটা, বৌলাই, পাটলাই ও ঘাসী নদী দ্বারা বেষ্টিত তাহিরপুর, মধ্যনগর ও ধর্মপাশা উপজেলায় ছোট বড় ১০৯টি বিল ও ১২,৬৫৫.১৪ হেক্টর জমি নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরের অবস্থান। ১৯৯৯ সালে সরকার ওই হাওর এলাকাকে ‘বিপন্ন প্রতিবেশ এলাকা’ ঘোষণা করে। টাঙ্গুয়ার হাওরকে ২০০০ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক ১০৩১ নম্বর রামসার এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সারা বিশ্বে এটি বিরল প্রজাতির মৎস্য ও অতিথি পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত। এই হাওরে রয়েছে প্রায় ১৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২০৮ প্রজাতির পাখি, ১৪ প্রজাতির দেশি মৎস্য ও বন্য প্রাণির বিপুল সমাহার। ৭ প্রজাতির জলাভূমির উদ্ভিদ, ১১ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ৬ প্রজাতির কচ্ছপ, ৭ প্রজাতির গিরগিটি, ২১ প্রজাতির সাপ।

 

অপার সম্ভাবনার এই হাওরটি পর্যটকদের অসচেতনতাসহ নানা কারণে বিপন্ন হতে চলেছে। একদিকে পর্যটকদের অনিয়মতান্ত্রিক চলাচল, অপরদিকে হাওরের হিজল ও করচ গাছ কেটে সাবার করছে কিছু অসাধু লোক। এতে হুমকির মুখে পড়েছে সংরক্ষিত এই জলাভূমির জীববৈচিত্র্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমাহার থাকায় প্রতিনিয়ত ভিড় করে থাকেন পর্যটকরা। প্রায়ই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই বিকট শব্দদূষণ করে চলে ইঞ্জিন-নৌকা। যার ফলে টাঙ্গুয়ার হাওরের মাছ ও জীববৈচিত্র্য প্রায় বিলুপ্তির পথে। হাওরে পর্যটকদের ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক ও পলিথিনে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। এক দশক আগেও এই হাওরে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখির আনাগোনা ও কলরব ছিল। যা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে এখন।

 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দ্রুত এই হাওরটির রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করলে একসময় বিপন্ন হয়ে যেতে পারে অপার সম্ভানার এই অর্থনৈতিক জোন।পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমীর রেজা বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওর প্রায় অরক্ষিত বলা যায়। এজন্য হাওরের জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হওয়ার পথে। হাওরে ধান ও মাছ উৎপাদন কমে গেছে। এর প্রভাব জনজীবনেও পড়েছে। হাওরপাড়ের মানুষের আয়-রোজগার কমে গেছে।

 

তিনি বলেন, শুধু প্রশাসনের পক্ষে হাওর সংরক্ষণ করা সম্ভবপর নয়। এর সাথে যারা হাওর সম্পর্কে ধারণা রাখে ও হাওরের প্রতি সংবেদনশীল এমন মানুষজনকে সম্পৃক্ত করতে হবে।

 

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. আফতাব উদ্দিন বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের পর্যটন উন্নয়নে আমি সব রকমের চেষ্টা চালিয়ে যাবো। এই হাওরে আমার প্রয়াত বাবা জয়নাল আবেদীন হিজল,করচ গাছ রোপন করেছেন। আমি আরো দুই লাখ হিজল, করচ গাছ রোপন করবো। হাওরের উনয়ন সাধিত হলে এই অঞ্চলের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের জীবন-মান উন্নয়ন হবে।

 

তাহিরপুর থানার ওসি মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি টিম রয়েছে। পাশাপাশি থানা পুলিশও মনিটরিং করছে।

 

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে আনসার ক্যাম্প রয়েছে। সেখান থেকে কোনো অভিযোগ পেলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়।

 

জেলা প্রশাসক বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের পর্যটন উন্নয়নে মাস্টারপ্লান করা হচ্ছে। এ বিষয়ে পর্যটন উন্নয়ন বোর্ডের সাথে পরিকল্পনা করে হাওর উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version