-->

বাঁশফুলের বীজ ভাঙিয়ে রান্না হচ্ছে ভাত

দিনাজপুর প্রতিনিধি
বাঁশফুলের বীজ ভাঙিয়ে রান্না হচ্ছে ভাত
ক্যাপশন : বাঁশফুলের বীজ সংগ্রহ করছেন সাঞ্জু রায়

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার এলুয়াড়ী ইউনিয়নের পাকাপান গ্রামের যুবক সাঞ্জু রায়। দিনমজুর সাঞ্জু পার্শ্ববর্তী গ্রামে কাজ করতে গিয়ে এক বৃদ্ধের কাছে জানতে পারেন, বাঁশফলের বীজ থেকে ভাত রান্না করা যায়। প্রথমে অবিশ্বাস করলেও বাড়ি ফিরে আগ্রহবশত স্থানীয় একটি বাঁশঝাড়ের নিচ থেকে সংগ্রহ করেন কিছু বীজ। সেগুলো ধুয়ে শুকিয়ে ধানের মিলে নিয়ে ভাঙান। এরপর সেই ভাঙানো বীজ রান্নার পর দেখেন আসলেও তা ভাতের মতোই। চালের বিকল্প হিসেবে বাঁশফুলের বীজ থেকে ভাত রান্না করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন যুবক সাঞ্জু।

 

ধানের বিকল্প বাঁশের বীজ নিজের পরিবারের খাওয়ার পাশাপাশি বিক্রিও করছেন। সাঞ্জু কৃষক ছিমল রায়ের ছেলে।

 

সরেজমিনে, সাঞ্জু রায়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পাশের একটি ঝাড় থেকে বাঁশের বীজ সংগ্রহ করছেন তিনি। সেই বীজ পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকাচ্ছেন। এরপর সেগুলো ধানের মিলে ভাঙাবেন। বাড়ির উঠানে প্রস্তুতকৃত এমন কয়েকটি বীজের বস্তা রেখেছেন। কিছু দানা ভাঙিয়ে রেখেছেন, গ্রামের অনেকেই তা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বাঁশের ফুল থেকে চালের মতো শস্য উৎপাদনের বিষয়টি এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এটি দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে উৎসুক মানুষ ভিড় করছেন তার বাড়িতে।

 

সাঞ্জু রায়ের প্রতিবেশী মিনতি রানী জানান, বাঁশের বীজ থেকে দানা সংগ্রহ করার বিষয়টি প্রথমে ছেলেমানুষি ভেবেছিলেন। পরে তার এই দানা সংগ্রহ দেখে তাজ্জব বনে গেছেন। বর্তমানে তার এই উৎপাদিত চালের মতো দানা অনেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এটি এলাকায় সাড়া ফেলেছে।

 

এ বিষয়ে কথা হয় সাঞ্জু রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পেশায় আমি দিনমজুর। কাজ করে খাই। মাসখানেক আগে এক দিন পাশের গ্রামে কাজ করতে যাই। সেখানে কাজের সময় কালী চন্দ্র রায় নামের একজন পরিচিত আমাকে বাঁশের বীজ থেকে দানা সংগ্রহ করে খাওয়ার বিষয়ে বলেন। তার কথামতো সেগুলো সংগ্রহ করে প্রথমে নিজে খাই। ভালো লাগায় এরপর থেকে সংগ্রহ করে যাচ্ছি। এতে নিজের খাবারের চাহিদাও পূরণ হচ্ছে, পাশাপাশি ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে বাড়তি আয় করছি। বাজারে ভালো এক কেজি চালের দাম ৭০ টাকারও বেশি। তাই এ চাল মানুষ কিনছেন।’

 

সাঞ্জু আরও বলেন, এটি বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। প্রতিদিন ২০ কেজি বীজ সংগ্রহ করা যায়। এসব পরিষ্কার করে ভাঙিয়ে দানা বের করলে ধানের সমপরিমাণ চাল হয়।

 

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, ‘এটি গবেষণার বিষয়। গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো কৃষিপণ্যের বিষয়ে সার্টিফাই করলে, তখন আমরা সেই বিষয়ে সম্প্রসারণের কাজ করি।’

 

ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) আঞ্চলিক কার্যালয় রংপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রকিবুল হাসান বলেন, ‘বাঁশের বীজ থেকে চাল উৎপাদন হয় এই প্রথম জানলাম। দেশের কোথাও এমন ঘটনা শোনা যায়নি। এটি একটি বিরল ঘটনা। এ বিষয়ে আমরা শিগগিরই গবেষণা শুরু করব। তারপর কথা বলা যাবে।’

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version