-->

চরাঞ্চলে মহিষের সঙ্গে মানুষের সংসার

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
চরাঞ্চলে মহিষের সঙ্গে মানুষের সংসার
মোনাকোষা-ভাটদিঘুলিয়া যমুনার চরে গড়ে উঠা মহিষের বাথান

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা নদীর বালু চর এলাকায় গড়ে উঠেছে মহিষের বাথান। চরের তৃণভূমিতে রাখালেরা খোলা আকাশের নিচে মহিষের ভ্রাম্যমাণ বাথানে একত্রিত হয়ে সবুজ ঘাস খাওয়াচ্ছেন এবং মহিষের সঙ্গেই চলছে মানুষের ঘর-সংসার। বালুচরে মহিষ পালন করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন মালিকেরা।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের মোনাকোষা-ভাটদিঘুলিয়ার ঠুঠিয়া চরের তৃণভূমিতে রাখালেরা খোলা আকাশের নিচে প্রায় সাড়ে তিনশত মহিষ পালন করছেন বাথানে। দুর্গম চরে রাখালদের থাকার তেমন ভালো ব্যবস্থা নেই। মহিষের বাথানের পাশেই নদীঘেঁষা বালুচরে চাষি ও রাখালেরা কয়েকটি ঝুপড়ি ঘর তুলেছেন। মহিষগুলো লালন-পালন করাই তাদের কাজ। তারা ঝুপড়ি ঘর তুলে সেখানে কোনও রকমে গাদাগাদি করে থাকছেন। মহিষের সঙ্গেই যেন তাদের ঘর-সংসার। মহিষ পালনকে ঘিরেই চলছে তাদের জীবন-জীবিকা।

 

স্থানীয় মোতালেব হোসেন ভোরের আকাশকে বলেন, কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু হয় মহিষ ও রাখালদের কর্মযজ্ঞ। মহিষের দুধ দোয়ানো, নৌকায় করে গ্রাহকদের কাছে দুধ পাঠানো। আর দুপুর পর্যন্ত মহিষগুলোকে মাঠে চড়ানো। এরপর মধ্যাহ্ন ভোজ। বিকেলে আবার মহিষ চড়ানো। রাখালদের সঙ্গে মহাজনের নিয়োগকৃত ঘোষালরাও থাকেন। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করেই চলছে এসব। রাখালের শ্রমে মহিষ থেকে উৎপাদিত হচ্ছে দুধ। একটি মহিষ সকাল ও দুপুর মিলে ৭ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত দুধ দেয়। প্রতি কেজি দুধ ফ্যাট অনুযায়ী ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করা হয়।

 

বগুড়ার গাবতলীর কালাইহাটা গ্রাম থেকে আসা মহিষের মালিক আনন্দ ঘোষ ভোরের আকাশকে জানান, ৭/৮ জন খামারীর মহিষ একত্রিত করে বাথান করা হয়েছে। আমাদের এলাকায় ঘাস কম থাকায় এখানে এসেছি।

 

তিনি আরও বলেন, ‘বছরের আট মাস মানে জ্যোষ্ঠি মাস পর্যন্ত মোহিষের সাতে (সাথে) যমুনার চরে কাটাই। এ্যাটিই খাই, এ্যাটিই ঘুমাই, হগ্গলের সাতে গল্পগুজব হরে আনন্দেই সময় কাটে।’

 

যমুনা পাড়ের ১০নং কৈজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন খোকন ভোরের আকাশকে বলেন, প্রতি বছরই যমুনার বুকে জেগে ওঠা চরাঞ্চলে সবুজ ঘাস খাওয়ানোর জন্য পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত মহিষ নিয়ে আসে খামারীরা। চরের তৃণভূমিতে অস্থায়ী ঝাপুড়িঘর তুলে খোলা আকাশের নীচে চলে এই মহিষের লালন পালন। চারপাশে যমুনা নদীর অসংখ্য ক্যানেল আর সবুজ ঘাস থাকার কারণে খামার পরিচালনা সহজলভ্য হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে চরগুলোতে বন্যার পানি প্রবেশের আগেই তারা মহিষের বাথান গুটিয়ে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যায় খামারীরা।

 

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো.বিল্লাল হোসেন ভোরের আকাশকে জানান, ইতিমধ্যেই চরাঞ্চলে আসা মহিষের বাথানগুলোতে খোরা রোগের প্রতিরোধে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। এছাড়াও যে কোন প্রয়োজনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছি।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version