-->
মিরাশার চাষি বাজার

মৌসুমে ৩০০ কোটি টাকার পেঁয়াজ বিক্রি

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
মৌসুমে ৩০০ কোটি টাকার পেঁয়াজ বিক্রি
ক্যাপশন : জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে প্রত্যন্ত এলাকার একটি বাজার

শরীয়তপুরে পেঁয়াজ ক্রয়-বিক্রয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে প্রত্যন্ত এলাকার একটি বাজার। ‘মিরাশার চাষি বাজার’ নামে পরিচিত এই বাজারে মৌসুমে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টন পেঁয়াজ সরবরাহ হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। দৈনিক বিক্রি হয় তিন থেকে চার কোটি টাকার পেঁয়াজ। ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি মৌসুমে বিক্রি হবে অন্তত ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার পেঁয়াজ।

 

স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের পাশে জাজিরা উপজেলার মুলনা ইউনিয়নে মিরাশার চাষি বাজারটি অবস্থিত। ২০০৮ সালে কৃষি বিভাগ ও সমবায় কার্যালয় যৌথভাবে একটি কৃষি সমবায় সমিতির মাধ্যমে ওই বাজারটি গড়ে তোলে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যাতায়াত সহজ হওয়ায় পাইকারদের কাছে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বাজারটি। সঠিক মূল্য পাওয়ায় লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। শরীয়তপুরের জাজিরা, নড়িয়া ও পার্শ্ববর্তী মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কৃষকরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসেন। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কারণে ঢাকা, নারয়নগঞ্জ ও গাজীপুরের পাইকাররাও আসছেন পেঁয়াজ ক্রয় করতে।

 

ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই বাজারে পেঁয়াজ আসতে শুরু করে। এ বছরও ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে আসে কৃষকরা। প্রথমদিকে পেঁয়াজ অপরিপক্ক ছিল। প্রতি কেজি পেঁয়াজের বাজার দাম ছিল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। ধীরে ধীরে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লে দাম কমতে থাকে।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, ভোর থেকেই দূরদূরান্তের কৃষকরা তাদের জমিতে উৎপাদিত পেয়াঁজ নিয়ে বাজারে আসেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ে কৃষকের উপস্থিতি। ধীরে ধীরে জমে ওঠে পেঁয়াজের বাজার। শুরু হয় কৃষক আর পাইকারের মধ্যে দর-কষাকষি। বেশি সংখ্যক পাইকারের সমাগম থাকায় দরদাম শেষে সর্বোচ্চ দামেই বিক্রির সুযোগ পায় কৃষক।

 

শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শরীয়তপুর জেলাটি পদ্মা, মেঘনা ও কীর্তিনাশা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত। নদীর অববাহিকা হওয়ায় দোআঁশ মাটিতে কৃষক পেঁয়াজের আবাদ করেন। চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের আবাদ করা হয়েছে ৪ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৩ হাজার ৪৫৩ মেট্রিক টন।

 

জানা যায়, বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ার সাথে সাথে অক্টোবর মাসে জমিতে পেঁয়াজের আবাদ শুরু করেন কৃষকরা। আবাদ চলে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত। যারা আগে আবাদ করে তারা আগেই উত্তোলন করে বাজারে বিক্রি শুরু করে। বর্তমানে বাজারে নতুন পেঁয়াজের পাইকারি দাম ৮০ হতে ৯০ টাকা। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে মে পর্যন্ত প্রতিদিন বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়।

 

জাজিরার নাওডোবা এলাকার কৃষক মিজানুর রহমান তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করতে তার খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। তিনি ইতিমধ্যে ১ বিঘা জমির ১ হাজার ৫৫০ কেজি পেঁয়াজ ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন।

 

রুবেল মোল্যা নামের নারায়ণগঞ্জের এক পাইকার বলেন, জাজিরার পেঁয়াজটার অনেক চাহিদা আমাদের অঞ্চলে। পদ্মা সেতুর কারণে যোগাযোগ সহজ হয়েছে। দেড় ঘণ্টায়ই আমরা এই বাজারে চলে আসতে পারছি। সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে দেখে শুনে পেঁয়াজ কিনতে পারছি।

 

মিরাশার চাষি বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আব্দুল জলিল মাদবর বলেন, সমবায় ভিত্তিক এই বাজার কৃষক আর পাইকারের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ। কৃষক আর পাইকার নিজেদের মধ্যে দরদাম করেই পণ্য বেচাকেনা করে থাকেন। মধ্যস্বত্বভোগী না থাকায় দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে বাজারটি।

 

শরীয়তপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রবীআহ নূর আহমেদ বলেন, সরাসরি পাইকারদের কাছে বিক্রি করার কারণে কৃষক ও পাইকার দু’পক্ষই লাভবান হচ্ছে। ওই বাজারে ফড়িয়া বা মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য নেই।

 

ভোরের আকাশ/মি

 

মন্তব্য

Beta version